জ্ঞান-বুদ্ধির সদ্ব্যবহার করলে হয় জনকল্যাণ আর এর অপব্যবহার করলে হয় সমাজের ভয়ংকর ক্ষতি। আর এই অপব্যবহারকারীরা হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু। তারা অসৎ ব্যক্তি উদ্দেশ্য হাছিলের জন্য নিজেদেরকে রাজনীতি নামক মোড়কের আড়ালে ঢেকে সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে থাকে। দেশপ্রেমিক হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য দু’চারটি প্রহসনমূলক ভালো কাজ করে জনমনকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে শুরু হয় তাদের পথচলা। তাদের স্বাভাবিক চেহারা দেখে মুখোশের আড়ালে লুকায়িত নির্লজ্জ চেহারা চেনা যায় না। কারণ তারা অত্যন্ত ধূর্ত ও কপট। তাদের মুখে সবমসয় লেগে থাকে কৃত্রিম হাসি, যা দিয়ে তারা যেকোনো মানুষকে অতি সহজেই বিভ্রান্ত করতে পারে। জনগণের সহানুভূতিই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য হাছিলের জন্য তাদের রয়েছে অভিনব সব পদ্ধতি। সেই পদ্ধতিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো জেলে যাওয়া। তাদের আচরণ দেখে মনে হবে তারা যেন ওখানে যেতেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এলোমেলো রাজনৈতিক চিন্তাধারা, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি, মূল্যবোধের চরম ধ্বংস, তাবেদারি সংস্কৃতির কারণে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন দেশে কখনো কখনো এ রকম অনেক কপট নেতা জনতার উৎকর্ষের রথচক্রকে খানাখন্দেও ফেলে দিয়েছে। যুগে যুগে অনেক ধূর্ত নেতৃত্বাভিলাষী কপটতার জাল বিস্তার করে জনতাকে বিভ্রান্তির পথে নিয়ে গেছে। তাদের খপ্পর থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। জাতীয়তাবাবোধ এবং সুনাগরিকের গুণাবলী যেমন, ন্যায়বোধ, অসাম্প্রদায়িক-চেতনাবোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃঙ্খলা, সৎ জীবন-যাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্যতা, অধ্যবসায়ে বিকশিত সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে সততার সাথে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে। শিক্ষা: ধূর্ত ব্যক্তিরা ছলে-বলে-কৌশলে প্রতিনিয়তই আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। তাদের সংস্পর্শ থেকে আমাদের নিরাপদে অবস্থান করতে হবে। Home ভাবসম্প্রসারণ স্বদেশের উপকারে নেই যার মন কে বলে মানুষ তারে, পশু সেই জন। বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেছেন- ‘একজন মানুষ নানা গুণের অধিকারী হতে পারে, কিন্তু সে যদি দেশের কোনো কল্যাণ না করে থাকে, তাহলে প্রকৃত প্রস্তাবে সে নরাধম, ঘৃণিত, বর্বর।’ মানুষের প্রকৃত পরিচয় দেশের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকান্ড দ্বারাই নির্ধারিত হয়। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে- ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।’ সনাতন হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে- ‘জন্মভূমি স্বর্গস্বরূপ, মাতৃস্থানীয়; তাকে রক্ষা করা সবার একান্ত কর্তব্য।’ পশুর সঙ্গে মানুষের কিছু পার্থক্য রয়েছে। পশুর কাজ খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য আস্তানার চিন্তা করা এবং এর জন্য ক্ষেত্রবিশেষে অন্যান্য পশুর সাথে লড়াই করা। যে মানুষ কেবল বৈষয়িক নানা কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থেকে নিজের স্বার্থ ও সুখের প্রচেষ্টা করে জীবন পার করে দেয়, দেশ ও দেশের জন্য কিছু করে না, দেশের কল্যাণে মনোনিবেশ করে না, প্রকৃত প্রস্তাবে সে ঐ পশুর মতোই। কারণ তার কর্মকান্ডের সাথে পশুর কর্মকান্ডের কোনো প্রভেদ নেই। দেশ প্রেমিকেরাই প্রকৃত মানুষ। যারা শ্রম দিয়ে, অর্থ দিয়ে দেশ ও জাতির নিরন্তর সেবা করে যাচ্ছে তারাই শ্রেষ্ঠ মানুষ। দেশপ্রেমিকেরা কখনো মাথা নত করে না। তাই তো প্যালেস্টাইনের এক কবি বলেছেন- ‘স্বদেশের মাটি স্পর্শ করার সময় ছাড়া আমার শির আর কখনো নত হয় না।’ স্বদেশের মঙ্গল ও কল্যাণের দিকে যার কোনো দৃষ্টি নেই, কেবল নিজের স্বার্থের জন্য, নিজের সুবিধা প্রাপ্তির জন্য যে তৎপর, বিবেকহীন পশুর সাথে তার কোনো পার্থক্যই নেই। এর উদাহরণ আছে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একদল নরপশুর আবির্ভাব ঘটেছিল, যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি রূপে কাজ করেছে। নিজেদের স্বার্থের জন্য যারা দেশের স্বাধীনতাকে পর্যন্ত অস্বীকার করেছে তারা আসলে পশুর চেয়েও অধম। ইংরেজি সাহিত্যের কবি বায়রন বলেছেন- ‘যে তার দেশকে ভালোবাসতে পারে না, সে কিছুই ভালোবাসতে পারে না।’ দেশকে, সমাজকে যে উন্নয়নের দিকে অগ্রসর করতে চেষ্টা না করে সে দেশ ও সমাজের জন্য কলঙ্ক হয়ে বেঁচে থাকে। শিক্ষা: আমাদের সবারই উচিত যার যার অবস্থান থেকে সাধ্যমত স্বদেশ ও স্বজাতির জন্য কল্যাণকর কাজ করা, নতুবা আমরাও মানুষ রূপী পশু হিসেবে গণ্য হবো।
No comments:
Post a Comment