Saturday, January 18, 2020

মায়াজম কি?

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিধান মতে, মায়াজম হল রোগের মূল কারণ এবং জীবাণু গুলো হল উত্তেজক কারণ। যে সকল প্রাকৃতিক অদৃশ্য কারণসমূহ হইতে রোগ উৎপত্তি হয়, সে সকল কারণ সমূহকে মায়াজম বলে।
মহাত্মা হ্যানিম্যান বলেন,
“যাবতীয় রোগ মায়াজমের অশুভ প্রভাবে সৃষ্টি হয়।” মায়াজম শব্দের অর্থ উপবিষ, কলুষ, পুতিবাষ্প, ম্যালেরিয়ার বিষ প্রভৃতি। যাবতীয় রোগের কারণই হল এই মায়াজম। তরুণ পীড়া তরুণ মায়াজমের অশুভ প্রভাবে এবং চিররোগ চির মায়াজমের অশুভ প্রভাবে সৃষ্টি হয়। ইহা প্রাকৃতিক রোগ সৃষ্টিকারী দানব।
হ্যানিম্যান বলেছেন,
চিররোগ সৃষ্টির মূল কারণ হইল তিনটি চিররোগবীজ। ইহাদের মধ্যে সোরা হইল আদি রোগ বীজ। সকল রোগের মূল কারণ হইল সোরা। এমনকি প্রমেহ এবং উপদংশ নামক আদি রোগবীজের উৎপত্তি ও সোরা হতে; এজন্য সোরাকে আদি রোগবীজ বলা হয়।
হ্যানিম্যান️ বলেছেন,
বংশ পরস্পরের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানব দেহের মধ্যে এই সোরা মায়াজম কল্পনাতীতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন অসংখ্য প্রকারের বিকৃতি, ক্ষত, বিশৃঙ্খলা ও যন্ত্রণার প্রতিমূর্তি রুপে অন্ত পীড়ায় সৃষ্টি করে থাকে।
সুতরাং মায়াজম হচ্ছে এক ধরনের গতিময় দূষণ মাধ্যম যাহা জীব দেহের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গে একবার প্রবিষ্ট হলে জীবনীশক্তির উপর প্রভুত্ব করে, ব্যক্তিকে সার্বিকভাবে এমনিধারায় দূষিত করে যার পিছনে একটি স্থায়ী রোগজ অবস্থা স্থাপন করে যাহা সম্পূর্ণ রুপে মায়াজম বিরোধী প্রতিকারক দ্বারা দূরীভূত না হলে রোগীর সারাজীবন ব্যাপী বিরাজ করবে এবং বংশপরস্পরায় প্রবাহমান থাকে।
মায়াজম ৪ প্রকার।
১. সোরা মায়াজম
২. সিফিলিস মায়াজম
৩. সাইকোসিস মায়াজম
৮. টিউবারকুলার মায়াজম
সোরার রোগীর ধাতুগত লক্ষণ :
সর্বদা ভীতিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, অবসাদগ্রস্ত, শ্রমবিমুখ।
মেজাজ খিটখিটে সামান্য মতের অমিল হলে ক্ষিপ্ত হয়।
স্বার্থপরতা কিন্তু নাটকীয় উদারতা দেখায়।
অস্বাভাবিক ক্ষুধা, খেলে আবার ক্ষুধা লেগে যায়।
অসম্ভব চুলকানি, চুলকানোর পর জ্বালা।
হাত পায়ের তলা জ্বলে।
দেহের বর্জ নির্গমন পথগুলি লাল বর্ণের।
যে কোন স্রাব নির্গমনে আরাম বোধ।
দাঁতে, মাড়ীতে ময়লা জমে।
কেবলই শুয়ে থাকতে চায়।
নোংরামি পছন্দ।
স্নয়ুকেন্দ্রে প্রবল বিস্তার করে কিন্তু যান্ত্রিক পরিবর্তন ঘটে না।
যে কোন সময় রোগাক্রমন বা বৃদ্ধি ।
চোখে নানা রং দেখে ও দৃষ্টিভ্রম হয়।
সিফিলিসের রোগীর ধাতুগত লক্ষণ :
আত্নহত্যা করার ইচ্ছা।
নৈরাশ্য, হঠকারিতা, মূর্খতা, বিতৃষ্ণা।
স্মরণশক্তি ও ধারণশক্তি হ্রাস।
মানসিক জড়তায় কথা কম বলে।
মাংসে অরুচি কিন্তু দুগ্ধ খাইবার ইচ্ছা।
অগ্নিকান্ড, হত্যাকান্ডের স্বপ্ন দেখে।
সূর্যাস্ত হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত বৃদ্ধি।
জিহ্বা মোটা ও দাঁতের ছাঁপযুক্ত।
চুলকানীবিহীন চর্মরোগ।
বিকলঙ্গতা।
অস্থির ক্ষয়প্রাপ্তি।
স্রাবের প্রচুরতা, দুর্গন্ধতা এবং স্রাব নিসরনে রোগ বৃদ্ধি।
দুষ্টজাতীয় ফোঁড়া।
অতিরিক্ত গরম-ঠান্ডা অসহ্য।
টিউবারকুলিনাম রোগীর ধাতুগত লক্ষণ :
চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও রোগী একই লক্ষণ ঘুরে ফিরে আসে।
একই সময়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
যে খাবারে বৃদ্ধি সেই খাবারেই আকাঙ্খা।
বিনা কারণে ঠান্ডা-সর্দ্দি লাগে।
যথেষ্ট পানাহার সত্বেও দুর্বলতা, শুষ্কতা শীর্ণতা প্রাপ্ত হয়।
কুকুর ভীতি বিদ্যমান।
উদাসীনতা ও চিন্তাশূন্যতা।
ক্রোধপরায়ণ, অসন্তুষ্ট, চঞ্চল, পরিবর্তনশীল মেজাজ।
কামোত্ততার জন্য যে কোন উপায়ে শুক্রক্ষয় করে।
বার বার চিকিৎসক বদল করে ।
জাঁকজমকের সাথে কাজ শুরু করলেও তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
অনবরত ঘুরে বেড়ানো স্বভাব।
নিদ্রায় চিৎকার করে কথা বলে ।
সাইকোসিস রোগীর ধাতুগত লক্ষণ :
ডাক্তারের কাছে লক্ষণ বলতে গিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কিনা।
ডাক্তার ঔষধ দিয়েছে! সে আবার খোঁজাখুঁজি করে। কারণ ডাক্তার লক্ষণ গুলো পুরাপুররি শুনল কিনা। আবার জিজ্ঞাস করে কোন ঔষধ কিসের জন্য দিয়েছে।
পড়ালেখা করতে গেলেও সন্দেহ । একলাইন লেখে তো বারবার কাটাকাটি করে। চিন্তা করে এই শব্দের বদলে ঐশব্দ যোগ করি।
ঘর থেকে বের হবে দেখবে সব ঠিকঠাক মত আছে তো?
হিসাব করতে যাবে ব্যবসা অথবা চাকুরিতে সেখানেও সমস্যা, সন্দেহ আর ভূলে যাওয়া।
মনেও সন্দেহ! রাতে এই বুঝি কেউ পিঁছনে পিঁছনে আসছে; আশেপাশে কেউ আছে।
বাজার করতে যাবে সেখানেও সমস্যা এই বুঝি দোকানদার আমাকে ঠকিয়ে বেশি নিল। আমি বাজার করেছি কেউ দেখে ফললো না তো।
এই ডাক্তার আমার রোগ বুঝবে কি বুঝবেনা, আমার রোগ সারাবে কি সারাবে না সন্দেহ। আরো ২-৩ জন ডাক্তার একাত্রিত হলে ভাল হতো।
মনটি রোগের উপর পড়ে থাকে । সব সময় রোগের কথা বলে ।
রোগ সূর্যোদয় হতে সূর্যান্ত পর্যন্ত বৃদ্ধি ।
আঁচিল, টিউমার মাংস বৃদ্ধি, অন্ডকোষ প্রদাহ এর নিদর্শক।
অস্বাভাবিক গঠন। যেমন- হাত পায়ের আঙ্গুল বেশী বা কম।
ঝড়-বৃষ্টির পূর্বে বা সময় ঘনঘন মূত্র ত্যাগ।
★★বিঃদ্রঃ- ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ঔষধ খাবেন না।ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ঔষধ খেয়ে বিপদ ঢেকে আনবেনা।অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন,

No comments:

Post a Comment