Tuesday, September 13, 2016

বানান শুদ্ধি :

১। বস্তুবাচক শব্দ ও প্রাণিবাচক অ-তৎসম শব্দের শেষে ই-কার (ি) হবে। যেমন-
বস্তুবাচক শব্দ : বাড়ি, গাড়ি, শাড়ি, চাবি
প্রাণিবাচক : মুরগি, পাখি, হাতি
২। দেশ, জাতি ও ভাষার নাম লিখতে সর্বদা ই-কার (ি) হবে। যেমন –
দেশ: জার্মানি, ইতালি, গ্রিস, চিলি
জাতি : বাঙ্গালি, জাপানি, পর্তুগিজ
ভাষা: ইংরেজি, হিন্দি, অারবি
৩। স্ত্রীবাচক শব্দে সর্বদা ঈ-কার (ী) হবে। যেমন – যুবতী, জননী, স্ত্রী।
৪। বিদেশী শব্দের বানান বাংলায় লেখার সময় ‘ষ’ ও ‘ণ’ না হয়ে ‘স’ ও ‘ন’ হবে।
যেমন –
◆ ষ্টেশন > স্টেশন
◆ ষ্টুডিও > স্টুডিও
◆ গভর্ণর > গভর্নর
◆ কর্ণেল > কর্নেল
৫। বানানে যে বর্ণের উপর রেফ থাকে, সেই বর্ণে দ্বিত হবে না। যেমন-
◆ কার্য্যালয় > কার্যালয়
◆ ধর্ম্মসভা > ধর্মসভা
◆ নির্দ্দিষ্ট > নির্দিষ্ট
◆ পর্ব্বত > পর্বত।
৬। বিস্ময়সুচক অব্যয় (যেমন: বাঃ/ছিঃ/উঃ ইত্যাদি) ব্যতীত বাংলা কোন শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমন-
◆ কার্যতঃ> কার্যত
◆ প্রায়শঃ > প্রায়শ
◆ বিশেষতঃ > বিশেষত
◆ প্রথমতঃ > প্রথমত
৭। কোন শব্দের শেষে যদি ঈ-কার (ী) থাকে, সেই শব্দের সঙ্গে জগৎ, বাচক, বিদ্যা, সভা, ত্ব, নী, ণী, পরিষদ, তত্ত্ব ইত্যাদি যুক্ত হয়ে যদি নতুন শব্দ গঠন করে তবে পূর্ববর্তী শব্দের ঈ-কার (ী) নবগঠিত শব্দে সাধারণত ই-কারে (ি) পরিণত হয়। যেমন-
◆ প্রাণী+বিদ্যা= প্রাণিবিদ্যা
◆ মন্ত্রী + পরিষদ = মন্ত্রিপরিষদ
◆ কৃতী+ত্ব = কৃতীত্ব
◆ প্রতিদ্বন্দ্বী + তা = প্রতিদ্বন্দ্বিতা
◆ সঙ্গী +নী = সঙ্গিনী
৮। শব্দে উর্ধ্বকমা ও হসন্তচিহ্নযথাযথ বর্জন করতে হবে। যেমন:
◆ হ’ল > হল, দু’টি > দুটি, তা’র > তার
◆ চট্ > চট, চেক্ > চেক, করব্ > করব
৯। অদ্ভুত এর ভুত ব্যতীত অার সব ভূত-এ (ূ) হবে। যেমন: অভিভূত, একীভূত, দ্রবীভূত, অভূতপূর্ব।
১০। সন্ধিতে প্রথম পদের শেষে ম্ থাকলে ক বর্গের পূর্ব ম্ স্থানে ম্ স্থানে ং লেখা হবে। যেমন: অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত। অন্যান্য ক্ষেত্রে ক, খ, গ, ঘ এবং ক্ষ-এর পূর্বে নাসিক্য বর্ণ যুক্ত করার জন্য সর্বত্র ঙ্ লেখা হবে। যেমন : অঙ্ক, অাকাঙ্ক্ষা।
১১। বিশেষণবাচক ‘অালি’ প্রত্যয়যুক্ত ই-কার (ি) হবে। যেমন:
◆ বর্ণালী > বর্ণালি, রূপালী > রূপালি, সোনালী > সোনালি।
১২। যে সব তৎসম শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় শুদ্ধ সেসব শব্দে কেবল ই বা উ এবং তার বারচিহ্ন ি, ু ব্যবহৃত হবে। যেমন: কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, ধমনি, ধূলি, পঞ্জি, পদবি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, লহরি, সরণি, সূচিপত্র, উষা।
১৩। কিছু জটিল শব্দের বানান:
◆ অ:
অকস্মাৎ, অগ্ন্যাশয়, অগ্নুৎপাত, অচিন্ত্য, অত্যধিক, অধ্যত্ম, অনিন্দ্য, অনূর্ধ্ব, অন্তঃসত্ত্বা, অন্তর্জ্বালা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, অমর্ত্য, অলঙ্ঘ্য, অশ্বত্থ।
◆ অা:
অাকাঙ্ক্ষা, অার্দ্র, অাবিষ্কার, অপরাহ্ণ, অাহ্নিক, অানুষঙ্গিক।
◆ উ:
উচ্চৈঃস্বরে, উচ্ছ্বাস, উজ্জ্বল, উত্ত্যক্ত, উদ্ভিদ, উপর্যুক্ত, উপলব্ধি।
◆ ঊ :
ঊর্ধ্ব
◆ এ :
এতদ্বারা, এতদ্ব্যতীত।
◆ ঐ :
ঐকাত্ম্য, ঐন্দ্রজালিক, ঐশীশক্তি, ঐষীক।
◆ ও :
ওষ্ঠাধর, ওজস্বিতা, ওতপ্রোতভাবে।
◆ ঔ :
ঔজ্জ্বল্য, ঔদ্বত্য, ঔর্ণানাভ।
◆ ক :
কর্তৃ, কর্তৃক, কর্ত্রী, কাঙ্ক্ষিত, কৃচ্ছ্র, কৃত্তিবাস, ক্বচিৎ, ক্রূর, কঙ্কণ, কনীনিকা, ক্ষুদ্ধ, ক্ষুন্নিবৃত্তি, ক্ষিতিশ, ক্ষেপণাস্ত্র, ক্ষুধানিবৃত্তি, ক্ষুন্নিবারণ।
◆ গ :
গার্হস্থ্য, গ্রীষ্ম, গৃহিণী, গণনা, গণ্ডেপিণ্ডে, গন্ধেশ্বরী।
◆ ঘ :
ঘূর্ণায়মান, ঘটনাবলি, ঘণ্টা, ঘনিষ্ঠতা, ঘৃতাহুতি, ঘ্রাণেন্দ্রিয়।
◆ জ :
জলোচ্ছ্বাস, জাজ্বল্যমান, জীবাশ্ম, জ্বর, জ্বলজ্বল, জ্বলা, জ্বালা, জ্বালানি, জ্যেষ্ঠ, জ্যৈষ্ঠ, জ্যোৎস্না, জ্যোতি, জ্যোতিষী, জ্যোতিষ্ক।
◆ ট :
টইটম্বুর, টীকাটিপ্পনী, টানাপড়েন, টানাহেঁচড়া।
◆ ঠ :
ঠাট্টাতামাশা, ঠাকুরপূজা।
◆ ত:
তাৎক্ষণাৎ, তত্ত্ব, তত্ত্ববধান, তদ্ব্যতীত, তাত্ত্বিক, তীক্ষ্ম, ভূষ্ণীম্ভার, ত্বক, ত্বরণ, ত্বরান্বিত, ত্বরিত, ত্যক্ত।
◆ দ :
দয়ার্দ্র, দারিদ্র্য, দুরাকাঙ্ক্ষা, দুর্নিরীক্ষ্য, দৌরত্ম্য, দ্বন্দ্ব, দ্বিতীয়, দ্বিধা, দ্বিতীয়, দ্বিধা, দ্বেষ, দ্বৈত, দ্ব্যর্থ, দ্যূতক্রীড়া।
◆ ধ :
ধ্বংস, ধ্বজা, ধ্বনি, ধ্বন্যাত্মক।
◆ ন :
নঞর্থক, নিক্বণ, নির্দ্বন্দ্ব, নির্দ্বিধ, নৈর্ঋত, ন্যস্ত, ন্যুব্জ, ন্যূনতম, নিশীথিনী।
◆ প:
পক্ব, পঙক্তি, পক্ষ্ম, পরাঙ্মুখ, পার্শ্ব, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রত্যুষ, প্রাতঃকৃত্য, প্রাতভ্রমণ, প্রাতভোজন, প্রোজ্জ্বল, পৌরোহিত্য, পৈতৃক, পিপীলিকা।
◆ ব :
বক্ষ্যমাণ, বন্দ্যোপাধ্যায়, বন্ধ্যা, বায়োজ্যেষ্ঠ, বহিরিন্দ্রিয়, বাত্যাবিধ্বস্ত, বাল্মীকি, বিদ্বজ্জন, বিভীষিকা, বিভূতিভূষণ, বৈচিত্র্য, বৈদগ্ধ্য, বৈশিষ্ট্য, ব্যক্ত, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, ব্যগ্র, ব্যঙ্গ, ব্যঞ্জনা, ব্যতিক্রম, ব্যতিরেকে, ব্যতিব্যস্ত, ব্যতীত, ব্যত্যয়, ব্যথা, ব্যতীপাত ব্যথিত, ব্যপদেশ, ব্যবচ্ছেদ, ব্যবধান, ব্যবসা, ব্যবস্থা, ব্যবহার, ব্যয়, ব্যর্থ, ব্যস্ত, ব্যুৎপত্তি, ব্যূহ, ব্রাহ্মণ।

◆ ভ :
ভৌগলিক, ভ্রাতৃত্ব, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভ্রান্ত, ভ্রাম্যমাণ।
◆ ম :
মধুসূদন, মনস্তত্ত্ব, মন্বন্তর, মর্ত্য, মহত্ত্ব, মাহাত্ম্য, মুহুর্মুহু, মুমূর্ষু, মুহূর্ত, মহৌষধ, মৃণালিনী, মৃত্তিকা, ম্রিয়মাণ।
◆ য :
যথোপযুক্ত, যদ্যপি, যশঃপ্রার্থী, যক্ষ্মা, যশস্বী, যাচ্ঞা, যথার্থ্য, যূপকাষ্ঠ, যোগরূঢ়, যৌবনোত্তীর্ণ।
◆ র :
রশ্মি, রৌদ্র, রুক্সিণী, রুচিবিগর্হিত, রূপণ, রৌদ্রকরোজ্জ্বল, রৌরব, রৌপ্য, রৌশন।
◆ ল :
লক্ষ্মণ, লক্ষ্মী, লক্ষ্য, লঘূকরণ, লুপ্তোদ্ধার, লোমোদ্গম।
◆ শ :
শস্য, শাশ্বত, শিরশ্ছেদ, শিষ্য, শ্বশুর, শ্বশ্র, শ্বপদ, শ্মশান, শ্মশ্রু, শ্রদ্ধাস্পদেষু, শ্রীমতী, শ্যন, শ্লেষ্মা, শিরঃপীড়া, শুশ্রষা।
◆ ষ :
ষড়ানন, ষণ্মাতুর, ষাণ্মাসিক।
◆ স :
সংবর্ধনা, সত্তা, সত্ত্ব, সত্ত্বেও, সন্ধ্যা, সন্ন্যাস, সম্মেলন, সরস্বতী, সাত্ত্বিক, সান্ত্বনা, সিন্দূর, সূক্ষ্ম, সৌহার্দ্য, স্বতঃস্ফূর্ত, স্বত্ব, স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাতন্ত্র্য, স্বায়ত্তশাসন, স্বাস্থ্য, স্মরণ।
◆ হ:
হীনম্মন্যতা, হ্রস্ব, হ্রাস, হৎপিণ্ড, হোঁচট, হ্রস্বীভূত, হ্রেষা, হ্রদ

No comments:

Post a Comment