ভাষার পরিবর্তন ধ্বনির পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত। ধ্বনি পরিবর্তন নানা প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। নিচে তা উল্লেখ করা হলো :
● অাদি স্বরাগম :
উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোন কারণে শব্দের অাদিতে স্বরধ্বনি এলে তাকে অাদি স্বরাগম বলে।
যেমন : স্কুল > ইস্কুল, স্পর্ধা > অাস্পর্ধা
● মধ্য স্বরাগম/বিপ্রকর্ষ/স্বরভক্তি :
উচ্চারণের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি অাসে তখন তাকে মধ্য স্বরাগম/
বিপ্রকর্ষ/স্বরভক্তি বলে।
যেমন : রত্ন > রতন, ধর্ম > ধরম
● অন্ত্যস্বরাগম :
কোনো কোন সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি অাসলে তাকে অন্ত্যস্বরাগম বলে।
যেমন: পোখত্ > পোক্ত, সত্য > সত্যি
● অপিনিহিতি :
পরের ই/উ কার অাগে উচ্চারিত হলে অথবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির অাগে ই/উ কার উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে।
যেমন : অাজি > আইজ, সাধু > সাউধ
● অসমীকরণ :
একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে যখন স্বরধ্বনি যুক্ত হয় তখন তাকে বলে অসমীকরণ।
যেমন : ধপ+ধপ > ধপাধপ, টপ + টপ > টপাটপ।
● স্বরসঙ্গতি :
একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে।
যেমন : দেশি > দিশি, বিলাতি > বিলিতি
সরসঙ্গতি কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যথা :
➺ প্রগত : অাদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে প্রগত স্বরসঙ্গতি হয়।
যেমন : মুলা > মুলো, শিকা > শিকে।
➺ পরাগত : অন্ত্যস্বরের কারণে অাদিস্বর পরিবর্তিত হলে পরাগত স্বরসঙ্গতি হয়।
যেমন : অাখো > অাখুয়া > এখো, দেশি > দিশি
➺ মধ্যগত : অাদিস্বর ও অন্ত্যস্বর কিংবা অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি হয়।
যেমন : বিলাতি > বিলিতি।
➺ অন্যোন্য : অাদ্য ও অন্ত্য দু স্বরই পরস্পর প্রভাবিত হলে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি স্বরসঙ্গতি হয়।
যেমন : মোজা > মুজো
● সমপ্রকর্ষ/স্বরলোপ :
দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের অাদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনির লোপকে বলা হয় সম্প্রকর্ষ/
স্বরলোপ।
যেমন:
ক. অাদিস্বরলোপ : অালাবু > লাবু > লাউ
খ. মধ্যস্বরলোপ : সুবর্ণ > স্বর্ণ
গ. অন্তস্বরলোপ : অাশা > অাশ, চারি > চার
● ধ্বনি বিপর্যয় :
শব্দের মধ্যে দুটো ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তন ঘটলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে।
যেমন : বাক্ স > বাস্ ক, রিকসা > রিসকা
● সমীভবন :
শব্দমধ্যস্থ দুটো ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্প-বিস্তর সমতা লাভ করে। এ ব্যাপারকে বলা হয় সমীভবন।
যেমন : জন্ম > জম্ম, কাঁদনা > কান্না
ক. প্রগত সমীভবন : পূর্ব ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ পরবর্তী ধ্বনির মত হয়, একে প্রগত সমীভবন বলে।
যেমন : চক্র > চক্ ক, পক্ব > পক্ ক
খ. পরাগত সমীভবন : পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির পরিবর্তন হয়, একে বলে পরাগত সমীভবন।
যেমন : তৎ + জন্য = তজ্জন্য, তৎ +হিত
গ. অন্যোন্য সমীভবন : যখন পস্পরের প্রভাবে দুটো ধ্বনিই পরিবর্তিত হয় তখন তাকে বলে অন্যোন্য সমীভবন।
যেমন: সংস্কৃত সত্য > প্রাকৃত সচ্চ, সংস্কৃত বিদ্যা > প্রাকৃত বিজ্জা
● বিষমীভবন :
দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে।
যেমন : শরীর > শরীল, লাল > নাল।
● দ্বিত্ব ব্যঞ্জন/ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা :
কখনো কখনো জোর দেওয়ার জন্য শব্দের অন্তর্গত ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়, একে বলে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা।
যেমন : পাকা > পাক্কা, সকাল > সক্কাল
● ব্যঞ্জন বিকৃতি :
শব্দ মধ্য কোনো কোনো সময় কোনো ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নতুন ব্যঞ্জন ধ্বনি ব্যবহৃত হয়। একে বলে ব্যঞ্জন বিকৃতি।
যেমন : কবাট > কপাট, ধোবা > ধোপা
● ব্যঞ্জনচ্যুতি :
পাশাপাশি সমউচ্চারণের দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে তার একটি লোপ পায়। এ রূপ লোপকে বলা হয় ব্যঞ্জনচ্যুতি।
যেমন : বড়দিদি > বউদি, বড়দাদা > বড়দা
● অন্তর্হিত :
পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হিত।
যেমন : ফাল্গুন > ফাগুন, ফলাহার > ফলার।
● অভিশ্রুতি :
বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববতী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে বলে অভিশ্রুতি।
যেমন : শুনিয়া > শুনে, বলিয়া > বলে
● র কার লোপ :
অাধুনিক চলিত বাংলায় অনেক ক্ষেত্রে র-কার লোপ পায় এবং পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়।
যেমন : তর্ক > তক্ক, করতে > কত্তে
● হ-কার লোপ :
অাধুনিক চলিত ভাষায় অনেক সময় দু স্বরের মাঝামাঝি হ-কার লোপ কয়।
যেমন : পুরোহিত > পুরুত, গাহিল > গাইল।
Monday, September 12, 2016
ধ্বনির পরিবর্তন
About ebongbd
"ALL ABOUT THINGS FOR EASY LIFE"
THIS IS A WEBSITE ABOUT SOLUTION OF OUR DAILY PROBLEMS. YOU CAN GET HERE ALL PROBLEM'S SOLUTION.
বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য
Labels:
বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment