Wednesday, September 14, 2016

অাবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রাথমিক ধারণা

● প্রতিদিনের গড়, তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, অার্দ্রতা ও বারিপাতের তথ্যের ভিত্তিতে কোনো এলাকার যে অবস্থা প্রকাশ করে তাকেই বলে — অাবহাওয়া।
● সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় অাবহাওয়ার অবস্থাকে বলে — জলবায়ু।
● অাবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান — বায়ুর তাপ, বায়ুর চাপ, বায়ু প্রবাহ, বায়ুর অার্দ্রতা, বারিপাত।
● সমুদ্র নিকটবর্তী এলাকায় শীত-গ্রীষ্ম এবং দিবারাত্রির তাপমাত্রার তেমন পার্থক্য হয় না, এ ধরণের জলবায়ুকে বলে — সমভাবাপন্ন জলবায়ু।
● নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য হলো — সারা বছর অধিক তাপ ও বৃষ্টিপাত।
● বায়ু সর্বদা একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয় — তাপ ও চাপের পার্থক্যের জন্য।
● পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহকে ভাব করা যায় — চারটি ভাগে।
● অারবি ভাষায় মওসুম শব্দের অর্থ — ঋতু।
● পৃথিবীতে প্রায় কয়েকশ স্থানীয় বায়ু প্রবাহ অাছে। যেমন : উপত্যকা বায়ু, পার্বত্য বায়ু, ফন বায়ু, বোরা বায়ু, সালানো বায়ু ইত্যাদি।
● অারব মরুভূমির একটি স্থানীয় বায়ু — সাইমুন।
● পৃথিবীর চাপ বলয় অাছে — ৭ টি।
● বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেলে কমে যায় — বায়ুচাপ।
● পৃথিবীর কিছু স্থানীয় বায়ু ও এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য :
স্থানীয় বায়ুর নাম — ভৌগলিক অবস্থান — উৎপত্তিকাল
➺ চিনুক — যুক্তরাষ্টের রকি পর্বত এলাকার মাঝামাঝি — শীতকাল
➺ সান্তাঅানা — ক্যালিফোর্নিয়া — শীতকাল
➺ প্যাম্পারো — অার্জেনটিনা — শীতকাল
➺ মিষ্ট্রাল — দক্ষিণ ফ্রান্স — শীতকাল
➺ ফন — সুইজারল্যান্ড — শীতকাল
➺ বোরো — অড্রিয়াটিক এলাকা — শীতকাল
➺ জোনভা — অার্জেনটিনা — গীষ্মকাল
➺ ব্রিকফিল্ডার — ভিক্টোরিয়া — গ্রীষ্মকাল
➺ লেভিচি — স্পেন — বসন্তকাল
➺ সিরোক্কা — লিবিয়া — বসন্তকাল
➺খামসিন — মিসর — বসন্তকাল
➺ চিলি — তিউনিসিয়া — বসন্তকাল
● বায়ুর চাপ প্রধানত নিম্নোক্ত নিয়ামকের উপর নির্ভরশীল :
➺ উচ্চতা : সমুদ্রেপৃষ্ঠে বায়ু চাপ সর্বাধিক। সমুদ্রেপৃষ্ঠ হতে যত উপরে উঠা যায় বায়ুর চাপ তত কমতে থাকে।
➺ উষ্ণতা : তাপে বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়, ফলে বায়ুর চাপ কমে। তাপ হ্রাস পেলে বায়ুর চাপ বাড়ে।
➺ জলীয়বাষ্প : জলীয়বাষ্প পূর্ণ অার্দ্র বায়ু শুষ্ক বায়ু অপেক্ষা হালকা। তাই বায়ু অার্দ্র হলে বায়ুর চাপ কম হয়, পক্ষান্বরে বায়ু শুষ্ক থাকলে বায়ুর চাপ বেশি হয়।
● রাতের বেলা বায়ু স্থলভাগ থেকে প্রবাহিত হয় – সমুদ্রের দিকে।
● দিনের বেলা বায়ু সমুদ্র থেকে প্রবাহিত হয় – স্থলভাগের দিকে।
● ব্যারোমিটারের পারদ স্তম্ভের উচ্চতা হঠাৎ হ্রাস পেলে বুঝতে হবে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে অথবা সূর্যতাপে বায়ু বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয় ফলে বায়ুর চাপ কমে যায় এরূপ হলে বোঝায় – ঝড়ের সম্ভাবনা।
● গীষ্মকালে ক্রান্তীয় সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে যে প্রবল ঝড়ের উৎপত্তি হয় তাকে বলে – টাইফুন বা হ্যারিকেন।
● সূর্যরশ্মি বায়ুমন্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পৌছে – বিকিরণ প্রক্রিয়ায়।
● পৃথিবী তাপ হারিয়ে শীতল হয় – বিকিরণ প্রক্রিয়ায়।
● বায়ুর তাপের প্রধান উৎস – সূর্য।
● বায়ুতে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতিকে বলে – বায়ুর অর্দ্রতা।
● বায়ুর পরম অার্দ্রতা ০.০০১ কেজি/ঘনমিটার বলতে বুঝায় – এক ঘনমিটার বায়ুতে ০.০০১ কেজি জলীয়বাষ্প বিদ্যমান।
● অাবহাওয়ার ৯০% অার্দ্রতা বলতে বুঝায় – বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ শতকরা ৯০ ভাগ।
● যে তাপমাত্রায় একটি অায়তনের বায়ু তার ভেতরের জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়, তাকে বলে – ঐ বায়ুর শিশিরাংক।
● যে তাপমাত্রায় শিশির জমতে বা অতৃশ্য হতে শুরু করে তাকে বলে – শিশিরাংক।
● যে কোন স্থানের বায়ুর শিশিরাংক ১৫ ডিগ্রি সে. বলতে বুঝায় –
➺ ১৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ঐ স্থানের বায়ু তার ভিতরের জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়।
➺ ১৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ঐ স্থানের শিশির জমতে বা অদৃশ্য হতে শুরু করে।
● শীত প্রধান এলাকায় তাপমাত্রা হিমাংকের নিচে নামলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে পেঁজা তুলার মতো ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়, একে বলে – তুষার।
● বৃষ্টিপাত – চার প্রকার। যথা : পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ, ঞুর্ণি, সংঘর্ষ।
● বৃষ্টিপাত পরিমাপক যন্ত্রের নাম – রেইনগেজ।
● বিভিন্ন প্রকার বায়ু :
➺ নিয়ত বায়ু : যে বায়ু পৃথিবীর চাপ বলয়গুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে সারা বছর একই দিকে প্রবাহিত হয় তাকে বলে নিয়ত বায়ু।
➺ অায়ন বায়ু – কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে সদা প্রবাহিত বায়ুকে বলে অায়ন বায়ু।
➺ প্রত্যয়ন বায়ু : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে মেরুদেশীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে সদা প্রবাহিত বায়ুকে বলা হয় – প্রত্যয়ন বায়ু।
➺ সাময়িক বায়ু : দিনের কোন নির্দিষ্ট সময়ে অথবা বছরের কোন নির্দিষ্ট ঋতুতে যে বায়ু প্রবাহ জল ও স্থলভাগের তাপের তারতম্যের জন্য সৃষ্টি হয় তাকে বলে – সাময়িক বায়ু।
➺ মৌসুমী বায়ু : যে বায়ু ঋতু পরিবর্তনের সাথে এর দিক পরিবর্তন করে তাকে বলে – মৌসুমী বায়ু।
➺ স্থানীয় বায়ু – স্থানীয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে যে বায়ু প্রবাহের সৃষ্টি হয়, তাকে বলে স্থানীয় বায়ু।
➺ অনিয়মিত বায়ু – কোনো স্থানে অধিক উত্তাপের জন্য বায়ুর চাপ কমে যায় এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। অাবার অত্যধিক শৈত্যের জন্য জন্য কোন স্থানের বায়ু শীতল হয়ে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে যে বায়ু প্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে বলে – অনিয়মিত বায়ু।
➺ বাণিজ্য বায়ু – পূর্বকালে অায়ন বায়ুর সাহায্যে পালতোলা বাণিজ্য জাহাজ চলাচল করত বলে, অায়ন বায়ুকে বলা হয় – বাণিজ্য বায়ু।
➺ সম্পৃক্ত বায়ু বা পরিপৃক্ত বায়ু : কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে, সেই পরিমাণ জলীয় বাষ্প বায়ুতে থাকলে বায়ু অার জলীয় বাষ্প গ্রহণ করতে পারে না তখন সেই বায়ুকে বলে সম্পৃক্ত বায়ু বা পরিপৃক্ত বায়ু।
➺ অসম্পৃক্ত বায়ু : কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে, সেই পরিমাণ জলীয়বাষ্প না থাকলে ঐ বায়ু অারও জলীয় বাষ্প গ্রহণ করতে পারে। তখন সেই বায়ুকে বলা হয় – অসম্পৃক্ত বায়ু।

No comments:

Post a Comment