eBongBD.com

"All about things for easy life"
This is a website about solution of our daily problems. You can get here all Problem's solution.

Breaking

পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়।

Friday, January 20, 2017

বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার

(সংকেত: ভূমিকা; বন্যার কালক্রম; বন্যার ভয়াবহ রূপ; বন্যা সৃষ্টির প্রাকৃতিক কারণ; বন্যাসংঘটনের মনুষ্যসৃষ্ট কারণ; বন্যা সমস্যার সমাধানে করণীয়; সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ; উপসংহার।) 

ভূমিকা: বাংলাদেশ নদী বিধৌত সমতল ব-দ্বীপ অঞ্চল। ছোট বড় মিলে প্রায় ২৫০টির মতো নদী দেশটিকে জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ প্রায়ই নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। এগুলোর মধ্যে বন্যা অন্যতম। দুঃখ দারিদ্র্য অভাবের মতো বন্যাও যেন এদেশের মানুষের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিবছরই বন্যার সাথে যুদ্ধ করতে হয় এদেশের মানুষকে। এদেশের বৃহৎ নদীগুলো পাহাড়ি বৃষ্টিপাত ও হিমালয়ের বরফ গলা পানি বয়ে এনে প্রায় প্রতিবছরই বন্যা ঘটায়, নিরীহ মানুষগুলোর জীবন করে তোলে যন্ত্রণাময়। 

বন্যার কালক্রম: বন্যা বাংলাদেশের জন্য অনেকটা অভিশাপ স্বরূপ। প্রায় প্রতি বছরই বন্যা এদেশের মানুষের প্রাণহানী ও ধনসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করে। বাংলাদেশে স্মরণকালের ইতিহাসে বড় বন্যাগুলো হয়েছিল ১৯৭৪, ১৯৭৭, ১৯৮০, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০০৭ সালে। এর মধ্যে ১৯৯৮ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। এই বন্যায় দেশের অধিকাংশ অঞ্চল ডুবে গিয়েছিল। অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মারা যায়। খাদ্যের অভাব ও নানারকম রোগেও বহু মানুষ প্রাণ হারায়। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় থেকে সৃষ্ট বন্যা সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ। এই বন্যায় উপকূলীয় অঞ্চলসহ প্রায় সারাদেশই ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় মৌসুমী বন্যা দেখা দেয়। এতে কয়েক লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ধরলাসহ মোট ১৬টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে এ বন্যার সৃষ্টি হয়। উজান থেকে নেমে আসা পানির আধিক্যই এ বন্যার মূল কারণ। 

বন্যার ভয়াবহতা: বন্যা শুধু মানুষের জীবনকেই বিপর্যস্ত করে না, এর ফলে গোটা দেশের অর্থনীতি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বন্যার নানাবিধ ক্ষতিকর প্রভাব নিচে বর্ণনা করা হলো- 

- বাংলাদেশে নিন্ম আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। তারা দিন আনে দিন খায়। বন্যায় রাস্তাঘাট, ক্ষেত-খামার সবকিছু ডুবে যায় বলে তাদের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খাদ্যের অভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করে। 

- নদীপ্রধান অঞ্চলগুলোতে বন্যার করাল গ্রাসে মানুষের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে অনেক মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়ে। এসব ভূমিহীন মানুষ সব কিছু হারিয়ে যাত্রা করে শহরাভিমুখে। জড়িয়ে পড়ে নানা রকম অসামাজিক কর্মকান্ড। 

- বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। সরকারের আয়ের একটি বড় অংশ আসে কৃষি থেকে। কিন্তু প্রায়ই বন্যার কারণে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে বাংলাদেশ সরকার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলে। 

- বন্যার ফলে প্রতিবছর নানা রকম ফসল নষ্ট হয়। এতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ফলে দেশের খাদ্য চাহিদা মেটাতে বাহিরের দেশগুলো থেকে খাদ্য আমদানি করতে হয়। 

- বন্যার সময় নিচু এলাকার ঘরবাড়িগুলো পানির নিচে ডুবে যায়। জীবন বাঁচাতে মানুষ ঘরের চালায় বা উঁচু মাঁচায় আশ্রয়গ্রহণ করে। খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় তারা নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এমনকি বন্যার পানি নেমে গেলেও নানা রকম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। 

- বন্যার ফলে শহরাঞ্চলেও নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাস্তাঘাট ডুবে যায়। রাস্তার পাশের ড্রেনগুলো থেকে ময়লা ভেসে ওঠে। নানা রকম আবর্জনা পঁচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, বস্তিবাসীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 

বন্যা সৃষ্টির প্রাকৃতিক কারণ: বাংলাদেশে বন্যার প্রাকৃতিক কারণসমূহ নিম্নরূপ- 

ভৌগোলিক গঠন: বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক গঠন বন্যার প্রধান কারণ। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা সহ বিভিন্ন নদীগুলো বাংলাদেশকে আড়াআড়িভাবে অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বর্ষাকালে নদীগুলোর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। তাছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তসীমা কম ঢালু। আবার প্রতিবছর পলি জমে নদীগুলোর গভীরতা কমে যাচ্ছে। এতে বাড়তি পানি নিষ্কাশনের সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে এই অতিরিক্ত পানি বন্যা সৃৃষ্টি করে। 

অতিবৃষ্টি: বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও উত্তরে হিমালয় পর্বত অবস্থিত। তাই ভূ-প্রাকৃতিক কারণেই বাংলাদেশ বৃষ্টিবহুল অঞ্চল। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। 

পলি জমে নিম্মাঞ্চল ভরাট: বাংলাদেশে অবস্থিত নানা ধরণের বিল, হাওড়, জলাশয়গুলো বড় নদীগুলোর অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণ করে। কিন্তু নদী বাহিত পলির দ্বারা কালক্রমে এগুলো সংকীর্ণ ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় এদের পানি ধারণ ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত পানি নদীর চারপাশের সমতল ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে প্লাবনের সৃষ্টি করছে। 

বায়ু প্রবাহ: বর্ষাকালে মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে উত্তর-পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়। ফলে দক্ষিণাভিমুখী নদীর স্বাভাবিক স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়। একই সাথে প্রবল বৃষ্টির ফলে বঙ্গোপসাগরের পানি বৃদ্ধি পায়। এই অতিরিক্ত পানির স্রোত আবার দেশের অভ্যন্তরে ঠেলে আসে। ফলে এই অতিরিক্ত পানি দেশের অভ্যন্তরে আটকে থেকে বন্যার সৃষ্টি করে। 

হিমালয়ের পানি: হিমালয় পর্বতে অনেক বরফ সঞ্চিত আছে। এসব বরফ গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপে গলতে থাকে। এই বরফ গলা পানি নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে অনেক সময় বন্যার সৃষ্টি করে। 

বন্যা সংঘটনের মনুষ্য সৃষ্ট কারণ: বন্যা সৃষ্টির মানব সৃষ্ট কারণগুলো নিন্মরূপ- 

নদী ভরাট: কিছু ক্ষমতাশালী লোভী মানুষ খাল, বিল, ছোট ছোট নদী ভরাট করে নানা স্থাপনা গড়ে তুলছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি উপচে পড়ে বন্যা ঘটাচ্ছে। 

অবকাঠামো নির্মাণ: মানুষের সুবিধার জন্য নদীর উপর নানা রকম ব্রিজ, জল বিদ্যুৎ প্রকল্প ও বাঁধ তৈরি করা হয়। কিন্তু এসব স্থাপনার কিছু অসুবিধাও আছে। এগুলোর কারণে নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে আস্তে আস্তে নদীর তলদেশে পলি পড়তে থাকে। যা বন্যা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। 

বনাঞ্চল ধ্বংস: মানুষ নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস করছে যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে প্রকৃতির উপর। এটি জলবায়ু পরিবর্তন করে বন্যার সৃষ্টি করছে। 

ফারাক্কা বাঁধ: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তৈরিকৃত ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশে বন্যা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। ভারত প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই বাঁধ খুলে দিলে বাংলাদেশ বন্যার কবলে পড়ে। 

বন্যা সমস্যা সমাধানে করণীয়: বন্যা সমস্যার স্থায়ী বা চূড়ান্ত কোনো সমাধান আমাদের হাতে নেই। তারপরও বন্যা প্রতিরোধে আমরা কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। যেমন- 

নদীর গতিপথ পরিষ্কার: নদীর গতিপথে জমে থাকা পলি পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে বন্যা ঘটায়। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব পলি অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

হাওড়, বিল পুনঃখনন: পলি জমে যেসব হাওড়, বিল ভরাট হয়ে গেছে সেগুলো পুনঃখননের ব্যবস্থা নিতে হবে। 

নদীর দখলদারী মুক্তকরণ: নদীর দুই কুল সংলগ্ন জমি ভরাট করে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে সেগুলো নদীর গতিপথ সংকীর্ণ করে দেয়। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর গতিপথ প্রশস্ত করতে হবে। 

অবকাঠামো নির্মাণে সতর্কতা: রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, বাঁধ সুপরিকল্পিতভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সেগুলো নদীর গতিপথে বাঁধা সৃষ্টি না করে। 

সামাজিক বনায়ন: নদীর পাড়ে ব্যাপকভাবে বনায়ন করা হলে তা নদী ভাঙন রোধ করবে। ফলে নদীতে আর অতিরিক্ত পলি জমাবে না। এতে নদীর গভীরতা ঠিক থাকবে। 

বাঁধ নির্মাণ: যেসব স্থানে নদীর পানি প্রবাহের চাপ বেশি সেসব স্থানে পরিকল্পিতভাবে কিছু বাঁধ নির্মাণ করা যেতে পারে। 

উপরিউক্ত কারণগুলো কেবল বন্যার ভয়াবহ মাত্রা কমাতে পারে কিন্তু স্থায়ীভাবে বন্যা বন্ধ করতে পারে না। কাজেই বন্যা পরবর্তী প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। নিচে কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার বর্ণনা করা হলো- 

- পানি বন্দী মানুষদের বাসস্থানের সুবিধা প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা। 

- বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য খাদ্য, পানীয় ও বস্ত্র প্রদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। বন্যার পানি নেমে গেলেও কিছুদিন এ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা। 

- বন্যাক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা কেননা এ সময় নানা সংক্রামক ব্যাধির প্রবণতা দেখা যায়। 

- বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নানা ধরণের প্রকল্পের আওতায় এনে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। 

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ: বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার নানা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বহু বাঁধ নির্মাণ ও খাল-খনন করেছে। যাতে উদ্বৃত্ত পানি সংরক্ষণ করে পরে সেচ কাজে লাগানো যায়। বন্যার সময় জনগণকে নিরাপদে রাখার জন্য অনেক আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। বন্যার সময় সরকারি ও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে তা বিশেষ প্রশংসার দাবিদার। তারা বন্যাক্রান্ত মানুষের কাছে বিনামূল্যে খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে। 

উপসংহার: বন্যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়। নানা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মতো এই ঘাতক বন্যাও যেন এদেশের মানুষের কাছে চিরায়ত একটি সংস্কারে পরিণত হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই এটি বন্ধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তারপরও বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব যতটুকু পারা যায় ততটুকু কমানোর চেষ্টা করা উচিত। এর জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

No comments:

Post a Comment