eBongBD.com

"All about things for easy life"
This is a website about solution of our daily problems. You can get here all Problem's solution.

Breaking

পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়।

Sunday, October 22, 2017

বলপেন আবিষ্কারের গল্প

 


 

আমরা যে বলপেন দিয়ে লেখি সেটার আবিষ্কারের পেছনের ঘটনাগুলো নিয়েই "বলপেন আবিষ্কারের গল্প"... 

 


১৯৪৫ সালের অক্টোবর মাসের কোন এক সকাল। নিউইয়র্কের জিম্বেলস স্টোরের সামনে প্রায় ৫০০০ লোকের ভিড়। কেন এত ভিড়? নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। কারণটা হল তার ঠিক আগের দিন নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় একটি পূর্ণপৃষ্ঠা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল স্টোরটি। যাতে লেখা ছিল তারা এমন একটি “দারুণ” ও “অলৌকিক” কলম বিক্রি করতে যাচ্ছে যেটা দুই বছর কালি না ভরেই ব্যবহার করা যাবে। লোকেরাও এমন অদ্ভুত(!) কলম কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। প্রথম দিনেই তারা বিক্রি করেছিল ১০,০০০ বলপেন, যেগুলোর প্রতিটির দাম ছিল সাড়ে বারো ডলার করে। বলপেনের জগতে সেটিই ছিল প্রথম এত বড় সাফল্য। তবে বলপেনের প্রথম আবিষ্কারের কথা জানতে হলে সময়ের পথ ধরে আরেকটু পেছনে হাঁটতে হবে।

 

গল্পের শুরু ১৮৮৮ সালে। জন লাউড নামে এক চামড়া ব্যবসায়ী এমন একটি কলম খুঁজছিলেন যা দিয়ে চামড়াজাত পণ্যে লেখা যাবে। কেননা ফাউন্টেন কলম দিয়ে তা করা যেত না। তখন তিনি এমন একটি কলম বানাতে সক্ষম হন যাতে একটি ছোট খোপে কালি জমা থাকতো। আর কলমের মাথায় ‘ঘুরতে পারে’ এমন একটি স্টিলের বল লাগানো ছিল। ঐ বছরের ৩০শে অক্টোবর লাউড কলমটির প্যাটেন্ট নিলেও তা আর উৎপাদন করেননি। সাধারণ লেখালেখির কাজেও কলমটি সুবিধাজনক ছিল না। গল্পের প্রথম পর্যায়ের তাই এখানেই সমাপ্তি হয়।  

 

এরপরের গল্পও তেমন সুখকর নয়। পরবর্তী ত্রিশ বছরে বলপেনের আরও সাড়ে তিনশটি প্যাটেন্ট গৃহীত হলেও কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি নানা সমস্যার কারণে। লাউডের কলম থেকে শুরু করে পরবর্তী এই সাড়ে তিনশ কলমের সবচেয়ে বড় ঝামেলা ছিল ‘কালি’| পাতলা হলে বলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেত আর ঘন হলে জমে যেত। তাপমাত্রা কমলে, বাড়লেও একই সমস্যা দেখা দিত। 

 

কিন্তু জন লাউডের প্যাটেন্ট নেওয়ার পঞ্চাশ বছর পরে বলপেন নতুন মাত্রা পায় হাঙ্গেরির ল্যাডিসলাস বিরো’র হাত ধরে। প্রথম উন্নতমানের বলপেন আবিষ্কারের কৃতিত্ব তাঁরই। ল্যাডিসলাস বিরো ছিলেন একজন ভাস্কর, চিত্রশিল্পী ও সাংবাদিক। পাশাপাশি তিনি একটি ছোট পত্রিকা সম্পাদনার কাজও করতেন। এই কাজ করতে গিয়ে তাঁকে বারবার ফাউন্টেন কলমে বোতল থেকে কালি ঢুকাতে হতো। সমস্যা আরও ছিল। অতিরিক্ত কালি কাগজে লেগে যেত আবার মাঝে মাঝে ফাউন্টেন কলমের তীক্ষ্ণ মাথা লেগে কাগজ ছিঁড়েও যেত। সব মিলে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। বারবার কালি ঢুকাতে আর কালির দাগ পরিস্কার করতে করতে তিনি পাগল হয়ে যেতেন। তাই কীভাবে এমন কোন কলম বানানো যায় যাতে তাঁকে আর এসব সমস্যা পোহাতে হবে না সেই চিন্তা তার মাথায় ঘুরতে লাগলো। তিনি খেয়াল করে দেখলেন পত্রিকা ছাপাতে যে কালি ব্যবহার করা হয় তা কিছুক্ষণের মাঝেই শুকিয়ে যায়, আর কাগজে দাগও লাগে না। তাহলে লেখার কাজে এই কালি ব্যবহারে সমস্যা কোথায়? যেই ভাবা সেই কাজ। তবেযেহেতু তিনি এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ না, সাহায্য নিলেন তাঁরই ভাই জর্জ-এর কাছ থেকে। তারা দুজন মিলে বানিয়ে ফেললেন আগের থেকে আরও উন্নত বলপেন। কলমে ব্যবহার করা হল একটি শিস যাতে কালি ঢোকানো থাকবে। আর শিসের মাথায় লাগানো হল অতি ক্ষুদ্র একটি বল যা ঘুরতে সক্ষম। পদ্ধতি কিন্তু আগের মতই তবে ব্যবস্থাটা উন্নত। ফলে যখন কলমটিকে কাগজের উপর চালানো হবে, বলটি ঘুরবে আর শিস থেকে কালি এসে বলের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে কাগজের গায়ে লাগবে। কি দারুণ ব্যাপার!ল্যাডিসলাস ও জর্জ-এর এই কলম দুটিতে আগের মত কালি নিয়ে আর সমস্যা থাকল না। ল্যাডিসলাস বিরো বলপেনের প্রথম আবিস্কারক না হলেও প্রথম কার্যকরী বলপেন আসে তাঁরই হাত ধরে। ১৯৩৮ সালে তিনি তার বলপেনের ব্রিটিশ প্যাটেন্ট নেন।

 

বিরো ভাইদের গল্পের এখানেই শেষ নয়, এক গ্রীষ্মে সাগরপারে অগাস্টিন জুস্টো নামে এক লোকের সাথে তাদের দেখা হয়, যিনি ছিলেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট। কথায় কথায় তারা তাদের আবিষ্কারের গল্পও বাদ যায় না। তাদের বলপেনের মডেল দেখে প্রেসিডেন্ট জুস্টো আর্জেন্টিনায় এই বলপেনের একটি কারখানা স্থাপনে তাদেরকে আহ্বান জানান। পরবর্তীতে ১৯৪৩ সালে ল্যাডিসলাস ও জর্জ আর্জেন্টিনায় চলে যান। কারখানা স্থাপন করার অর্থ যোগানে আগ্রহী লোকের অভাব হয় না সেখানে। উৎপাদন শুরু হয়, তারা প্রচারণা শুরু করে যে তারা এমন কলম বিক্রি করছে যা দিয়ে পানির নিচেও লেখা যায়। তাদের প্রদর্শনী দেখতে অনেক লোকের ভিড় হয়। তবে কারখানা চালু করলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা ব্যর্থ হয় কেননা তখনও তাদের বলপেনে সমস্যা রয়ে গিয়েছিলো। তাদের কলমটিতে কার্টিজ থেকে কালি নেমে আসা নির্ভর করতো অভিকর্ষের উপর। ফলে কলমটি খাড়া করে না লিখলে লিখতে অসুবিধা হতো। তাই আবার তারা নেমে পরে এই অসুবিধা দূর করতে। এবার অভিকর্ষের উপর নির্ভরতা বাদ দিয়ে কৈশিকতার উপর ভিত্তি করে তাদের মডেল তৈরি করে। (কোন সরু নল দিয়ে অভিকর্ষের সাহায্য ছাড়া পৃষ্ঠটান আর আসঞ্জন বলের কারণে তরল পদার্থের উপরে উঠে আসাকেই কৈশিকতা বলে।) এরপর তাদের এই উন্নত বলপেন Birome ব্র্যান্ড হিসেবে তারা আর্জেন্টিনার বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে। বলা যায় বলপেন আবিষ্কারের সফলতার গল্পের এই দ্বিতীয় ইনিংস আর দীর্ঘ হয়নি। তাদের স্বত্ব বিক্রি হয়ে যায় আমেরিকার এবারহার্ড কোম্পানির কাছে যা পরবর্তীতে কিনে নেয় এভারশার্প কোম্পানি। তবে কোনটিই তেমনভাবে সফল হতে পারেনি। 

 

এরপর মঞ্চে আগমন ঘটে মিল্টন রেয়নোল্ডস নামে এক ব্যক্তির যিনি আমেরিকায় প্রথম সফলভাবে বলপেন উৎপাদন করেন। আর্জেন্টিনায় ছুটি কাঁটাতে গিয়ে বিরো ভাইদের কলম তার নজরে আসে। সেখান থেকে তিনি কয়েকটি কলম কিনে আমেরিকায় ফিরে আসেন। কলমের নকশায় অনেকগুলো পরিবর্তন এনে তিনি আমেরিকান প্যাটেন্ট গ্রহণ করেন। “রেয়নোল্ডস ইন্টারন্যাশনাল পেন কোম্পানি” নামে নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। জিম্বেলস স্টোরের সাথে চুক্তি করে  আমেরিকায় প্রথম খুচরা কলম বিক্রি তাঁকে অভাবনীয় সাফল্য এনে দেয়। তবে পরবর্তীতে তা আর ক্রেতা ধরে রাখতে পারেনি। কারণ সমস্যার ভূত তখনও ছাড়েনি বলপেনকে। এরপর আরও বিভিন্ন জন বলপেনের নানা সংস্করণ নিয়ে আসেন যাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জে. ফ্রলি। ফ্রান সিচ নামের এক কেমিস্টের সহায়তায় তিনি নিয়ে আসেন “পেপারমেট” নামের এক কলম, যা যথেষ্ট সাফল্য লাভ করে। 

 

তবে বলপেনের জগতে চূড়ান্ত সফলতা যিনি লাভ করেন, তিনি মার্সেল বিক। বলপেনের নিম্ন মান আর উচ্চ দাম তাঁকে এই ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলে। তিনি বিরো ভাইদের প্যাটেন্টের জন্য তাদের রয়্যালটি দিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি দুই বছর ধরে বাজারেপ্রচলিত সব কলম নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যান। ১৯৫২ সালে সব সমস্যা দূর করে তিনি নিয়ে আসেন কম দামে অসাধারণ এক বলপেন “Ballpen BIC”

 

বলপেনের আবিষ্কারের গল্পে চড়াই উতরাই ছিল অনেক, প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ কখনো থামেনি। বলপেনকে উন্নততর করার চেষ্টা ছিল অবিরত। কিছু মানুষের নিরলস শ্রম আমাদের দুর্ভোগ কমিয়েছে অনেকাংশে। আজ আমাদের নিত্য সঙ্গী এই বলপেন। চলছে বলপেনের পথচলা শিক্ষায়–সভ্যতায়, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, কারণে-অকারণে। 

 

 

No comments:

Post a Comment