ডুবো জাহাজের ইংরেজি নাম হলো সাবমেরিন।এর সবদিকটাই বন্ধ বা আটকানো থাকে আর পানির ওপর ও নিচ দিয়ে সহজেই ভেসে চলতে সক্ষম।ডুবোজাহাজ সমুদ্রের অনেক গভীরেও যেতে পারে।বহুদিন আগে থেকেই মানুষ চেষ্টা করে আসছিল কেমন করে সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে হীরক, মণি, মুক্তা প্রভৃতি খুঁজে আনা যায়।তার এ চেষ্টাকে কার্যকরী করার জন্য সে এমন এক যন্ত্রের আবিষ্কার করতে ছেয়েছিল যা সহজেই পানির নিচে যেত পারবে।এরূপে ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দে হল্যান্ডের অধিবাসী কারনেলিয়াস ভ্যান ড্রেবেল পানির নিচে দিয়ে চলনক্ষম এক নৌকা তৈরি করেন।এটাই হলো পৃথিবীর প্রথম ডুবোজাহাজ।এটা ছিল সম্পূর্ণটাই কাঠের তৈরি আর এর দেহটা ছিল চামড়া দিয়ে মোড়া।সমুদ্রের উপরিতল থেকে পানির ভেতর ৩ থেকে ৪ মিটার গভীরে যেত পারত।তারপর থেকে বিভিন্ন রকম ডুবোজাহাজ তৈরির প্রচেষ্টা চলে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে নানা রকমের ডুবোজাহাজ তৈরি হয়।
১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শুধু ইংল্যান্ডেই ১৪ রকমের ডুবোজাহাজ তৈরি হয়।১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে বাষ্পইঞ্জিন চালিত ডুবোজাহাজের আবিষ্কার হয়।পরবর্তী সময়ে পেট্রল ও বিদ্যুৎ শক্তি চালিত ডুবোজাহাজের আর্বিরভাব ঘটে।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৮)ডুবোজাহাজের ব্যবহার অতি কার্যকরীভাবে করা হয়।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়(১৯৩৯-৪৫)জলযুদ্ধে ডিজেল চালিত ডুবোজাহাজের আবিষ্কার হয়।এখন অবশ্য পারমাণবিক শক্তি চালিত ডুবোজাহাজেরও আবিষ্কার হয়েছে।আধুনিক ডুবোজাহাজগুলোর সবই মোটা স্টীলের পাত দিয়ে তৈরি।আধুনিক ডুবোজাহাজে থাকে পেরিস্কোপ, সোনার, রাডার প্রভৃতি আধুনিক যন্ত্রপাতি।পেরিস্কোপ দিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠে কোথায় কি হচ্ছে তা জলের নিচে ডুবোজাহাজে বসেই দেখা যায়।সোনার(শব্দ তরঙ্গ) দিয়ে অন্য ডুবোজাহাজ বা টর্পেডোর অবস্থান নির্ণয় করা হয়।ডুবোজাহাজে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ারও ব্যবস্থা থাকে।পারমাণবিক শক্তি চালিত ডুবোজাহাজে ধোঁয়া বা গ্যাসের কোনো সমস্যা থাকে না যা অন্য কোনো জ্বালানি ব্যবহার করলে হয়ে থাকে।বর্তমানকালে ডুবোজাহাজ নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।সামুদ্রিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি।শত্রুপক্ষের যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংস করার কাজে ডুবোজাহাজ থেকে টর্পেডো ও অন্য ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়।আধুনিক ডুবোজাহাজ শত্রুপক্ষের ডুবোজাহাজকে আক্রমণ ও ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।প্রতিটি ডুবোজাহাজে এমন কায়দা করা থাকে যে বিপদ ঘটলে ঐ জাহাজের নাবিক ও সহকারীকর্মীরা নিরাপদ স্থানে গিয়ে বাঁচতে পারে।তবে দু:খজনক ঘটনা ঘটে থাকে,তা অবশ্য বিরল।যেমন:৩৭ বছর পর গত ১২ আগস্ট ২০০০ সালে সুমেরুর বারেন্ট সাগরে রাশিয়ার কুরষ্ক নামের সাবমেরিনটিতে বিষ্ফোরণ ঘটে এবং ১১৮ জন নাবিকের নির্মমভাবে সলিল সমাধি হয়।
No comments:
Post a Comment