হিমালয়।নামটা সেই ছোটবেলা থেকেই শুনছি আমরা।পৃথিবীর সবচেয়ে উচু স্থান হলো হিমালয়।উচ্চতা মাত্র ৮,৮৪৮ মিটার ! মানে ৮.৮৫ কিলোমিটার! আকাশের সাথেই যার মিতালী। মেঘ যাকে নিয়ে খেলা করে,সাদা তুষার যার পোশাক আর যার আছে মাথা উচু করে সামগ্র পৃথিবী কে দেখা সেই তো হিমালয়।
আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি বছর আগে জন্ম নেয় এভারেস্ট। আসলে আমরা জানি যে কোন পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর ভূ-গভের সৃষ্ট আন্দোলনের ফলে। আমাদের পৃথিবীর ভূ-গভে মাটির স্তর গুলো প্লেট আকারে থাকে। এগুলো আবার বিভিন্ন উপমহাদেশীয় এরিয়া নিয়ে গঠিত। এমনি ২ টি প্লেটের সংঘষে সৃষ্টি হয় এভারেস্টের। ভারতীয় উপমাদেশের প্লট ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ান প্লটের সংঘর্ষে এভারেস্ট তৈরী। তাছাড়া অভন্তরীণ ভুমিকম্প ও এর জন্য দায়ী। এ ধরণের সংঘর্ষ কোটি কোটি বছর পর পর সংঘটিত হয়।
১৮০৮ সাল । তৎকালীন ভারতে ব্রিটিশরা শুরু করলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতসমূহের অবস্থান বের করার অভিজান।এর জন্য তারা “বৃহৎ ত্রিকোণমিতিক জরিপ” (Great Trigonometric Survey) শুরু করেন। এই প্রক্রিয়া নিখুত ভাবে চালানোর জন্য তারা ব্যবহার করলো ১১০০ পাউন্ড অজনের থিয়োডোলাইট । জরিপ কাজ আরাম্ভ হলো দক্ষিণ ভারত থেকে। জরুপকারী দল ক্রমাগত উত্তরদিকে সরতে থাকে এবং ১৮৩০ সালে তারা হিমালয়ের পাদদেশে পৌঁছায়।তারা আস্তে আস্তে নেপালের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু তখন নেপাল ও তিব্বতে বিদেশীদের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। এভাবে অননেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ১৮৪৭ সালের শেষর দিকে এভারেস্টের ১৪০ মাইল (২৩০ কিমি) পূর্বে কাঞ্চনজঙ্ঘা এর কাছে চলে আসেন। সে সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া হিসেবে বিবেচিত হত কাঞ্চনজঙ্ঘা। সে সময় জরিপ চালান ব্রিটিশ প্রধান জরিপকারক এন্ডু ওয়াহ। তিনি কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে পূর্ব দিকে একটি নতুন পর্বত দেখতে পান। তিনি এক পলকেই দেখে বুঝতে পারেন এটা কাঞ্চনজঙ্ঘার চেয়ে ও অনেক বড়। কিন্তু এর জন্য তো প্রমান চাই। তিনি জেমস নিকলসন নামে এক কর্মচারী পাঠান জরিপের জন্য। সে অনেক হিসাব নিকাশ করে এসে ফলাফল দেয় যে এর উচ্চতা ৩০,২০০ ফুট ( ৯,২০০ মিটার)। কিন্তু তার হিসাবে ভূল হবার কারণ ছিল আলোর প্রতিসারণ। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নিকলসন চলে যান তার দেশে। কি আর করা এত গুলো পর্বত কি নামহীন ভাবে পড়ে থাকবে? না কর্নেল ওয়াহ তার এক ক্লার্ক মাইকেল হেনেসিকে দিয়ে সবগুলো পাহাড় গুলোর রোমান সংখ্যার হিসাব রাখতে বললেন। সে হিসাবে এভারেস্টের নাম হলো peak-XV বা “চূড়া-১৫”। যাই হোক সেবার ও ওয়াহ পারলেন না। অবশেষে তিনি স্বরণাপন্ন হন বাঙ্গালী গণিতবিদ ও জরিপকারক রাধানাথ শিকদারের। তিনি ছিলেন স্যার এভারেস্টের অনেক প্রিয় পাত্র ।
১৮১৩ সালে তার জন্ম জোড়াসাকোতে। তিনি তখন এই জরিপে হাত দেন। ৮৯ টি নামহীন পরবতের হিসাব করতে হবে তাকে। একদিন তিনি peak-XV (চূড়া-১৫) এর হিসাব কষে বের করলেন ২৯০০২ ফুট ! মাথা খারাপ হয়নি তো। আবারও তিনি দেখলেন। নাহ ঠিকই আছে,সাথে সাথে তিনি চলে গেলেন ” রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটি”তে তার স্যার কর্নেল এন্ড্রু ওয়াহর কাছে। তিনি তার সকল বিষয় গুলো আবার ও পরীক্ষা করে দেখলেন সব ঠিকই আছে। তিনি যা ভেবেছিলেন ঠিক তাই। এই চূড়া-১৫ ই তাহলে কাঞ্চনজঙ্ঘার চেয়ে উচু। আর তার মানেই হল চূড়া-১৫ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে উচু স্থান। রাতারাতি সব দিকে খবর পোছে গেল। এভাবেই একজন বাঙ্গালী গণিতবিদ ও জরিপকারক রাধানাথ শিকদারের হাত ধরেই আবিষ্কার হলো বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। সেই রাধানাথ শিকদার ১৮৭০ সালে মারা যান। কিন্তু রেখে যান এক অনাবদ্য সৃষ্টি।
আবিষ্কার হলো সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া কিন্তু এর নাম কি দেয়া হবে। ভাবত লাগলেন কর্নেল এন্ড্রু ওয়াহ। তিনি দেখলেন যে এটাই এখন তার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জরিপকারীরা সবাই চাচ্ছিলো যে নামটা স্থানীয় কোনো নামের হোক। কিন্তু তারা কোনো স্থানীয় নাম খুজে পেলনা। করণ তখন তিব্বত ও নেপালে বিদেশীদের প্রবেশ ছিল বন্ধ। তাই তারা স্থানীয় নাম খুজে পাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলো। তবে বেশ কিছু স্থানীয় নাম প্রচলিত থাকলেও এদের মধ্যে সুপরিচিত ছিল তিব্বতিদের ব্যাবহার করা কয়েকশ’ বছরের পুরনো নাম “চোমোলুংমা”। কিন্তু এইনামের আবার অনেক উপনাম থাকার কারণে তিনি এই নাম নাকচ করে দেন। তাই তিনি সহ সবাই মিলে এর নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেন তাদের পূর্বসূরি ভারতের প্রাক্তন জরিপ পরিচালক জর্জ এভারেস্টের নামে ।
No comments:
Post a Comment