বর্তমানে আমারা যে পৃথিবীকে দেখতে পারছি, আজ থেকে ১০০ বা তারও আগে আমাদের পৃথিবী এমন ছিল না। অনেক পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা আজকের এই পৃথিবী পেয়েছি। এই পরিবর্তনের পিছনে অবদান আছে অনেক শাখার। তবে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে বিজ্ঞানের হাত ধরে। জীবন ও বিজ্ঞান যেন একই সূত্রে গাঁথা। বিজ্ঞানের কল্যাণে আমাদের জীবন হয়েছে সুন্দর, সহজ আর গতিময়। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কার এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীকে দিয়েছে নতুন মাত্রা।
এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীকে সুন্দর করে সাঁজাতে বাংলাদেশের বিজ্ঞানিদের অবদানকেও ছোট করে দেখা যাবে না। আমরা কতজন বাংলাদেশী সেইসব কৃতি বিজ্ঞানিদের জানি বা চিনি, যাদের কারনে আমরা আজ এই সুন্দর বাসস্থান পেয়াছি?
বাংলাদেশী সেইসব কৃতি বিজ্ঞানীদের নিয়ে আমার পর্বভিত্তিক পোস্ট “বাংলাদেশঃ বিজ্ঞানী ও তাদের আবিস্কার”।
১) উদ্ভিদের প্রাণ (জগদীশ চন্দ্র বসু)
সবর্প্রথম উদ্ভিদে প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন তিনি হলেন বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানী এবং বাংলার গর্ব আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু।
১৯০০ সালের আগে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু শুধুমাত্র পদার্থবিজ্ঞান নিয়েই গবেষণা করতেন। এক পযার্য়ে পদার্থ বিজ্ঞানের পাশাপাশি তার জীব বিজ্ঞানের প্রতিও তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার এক পযার্য়ে তার মনে হলো, বিদ্যূত প্রবাহে উদ্ভিদও উত্তেজনা অনুভব করে এবং সাড়া দিতে পারে। সাড়া দেবার মতো ক্ষমতা শুধু প্রানীর আছে এ কথাটি সত্য নয়, উদ্ভিদও সাড়া দিতে পারে। অর্থ্যাৎ, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।
১৯০১ সালের ৬ জুন বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু রয়েল সোসাইটির এক সেমিনারে বক্তৃতা দেন। বক্তৃতার বিষয়বস্তু,- অজৈব বস্তুর বৈদ্যুতিক সাড়া’(Electric Response of Inorganic Substances)। পরের বছর ২০ মার্চ তিনি লিনিয়াস সোসাইটির এক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। এবারে সরাসরি উদ্ভিদের কথা বলা হয়। সেমিনারের বিষয় ছিল- ‘যান্ত্রিক উত্তেজনায় সাধারন উদ্ভিদের বৈদ্যূতিক সাড়া’(Electric Response in Ordinary Plants Under Mechanical Stimulus)। বিভিন্ন অবস্থায় উদ্ভিদ কেমন সাড়া দেয় তা দেখার জন্য বিজ্ঞানী বসু গাজর, মূলা, বাদাম, শালগম, বেগুন, ফুলকপি সহ বেশ কয়েকটি উদ্ভিদ নিয়ে গবেষনা করেন। উদ্ভিদের বৈদ্যুতিক সাড়া এবং বৃদ্ধির পরিমান নির্নয় করার জন্য তিনি একটি যন্ত্র তৈরি করেছিলেন যার নাম অনুরণন মাপক(Resonant Recorder)।
১৯১০ সালের দিকে বিজ্ঞানী বসু তার গবেষণার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল একটি বই আকারে প্রকাশ করেন। বইটির নাম ‘জীব ও জড়ের সাড়া’(Response in the Living and Non-Living)। আর এভাবেই জগদীশ চন্দ্র বসু সমগ্র বিশ্বে সামনে তুলে ধরেন একটি শ্বাশত সত্য, ‘উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে”
জগদীশ চন্দ্র বসু
একজন সফল বাঙালি বিজ্ঞানী। জগদীশ চন্দ্র বসু বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত বিক্রমপুর নামক স্থানের রাঢ়িখাল গ্রামে। তার বাবা ভগবান চন্দ্র বসু তখন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। এর আগে তিনি ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
জগদীশ চন্দ্র ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাংলা ভাষায় ছোটদের বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য জগদীশ চন্দ্র 'অব্যক্ত’ নামে একটা বই লিখেছিলেন। জগদীশ চন্দ্র বসু ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম ব্যক্তি, যিনি আমেরিকান প্যাটেন্টের অধিকারী। ২০০৪ সালের এপ্রিলে বিবিসি রেডিওর জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে সপ্তম স্থান অধিকার করেন।
মৃত্যু ২৩ নভেম্বর ১৯৩৭ গিরিডি, ঝারখণ্ড।
২) কলেরার কারণ আবিষ্কার (ডাক্তার শাহ এম ফারুক)
ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া থেকে কিভাবে মারাত্মক কলেরা হয় তার কারণ আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের এক বিজ্ঞানী। আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি'র আণবিক জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান ডাক্তার শাহ এম ফারুক ও তার গবেষণা দল এ আবিষ্কার করেছেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর দিয়েছে।
যখন বিশ্বব্যাপী কলেরার কারণ হিসেবে নতুন ধরণের ব্যাক্টেরিয়াকে দায়ী বলে ধারনা করা হচ্ছে তখন গবেষক দলটি এ সাফল্য অর্জন করল। তারা বলছে, 'ভিবরিও' নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে মানুষ আক্রান্ত হয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে কিভাবে অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়া ভিবিরিও'র সংস্পর্শে এসে একে আরো কার্যকরী বা শক্তিশালী করে তোলে।
ড. শাহ ফারুক
তিনি ২০০৫ সালে উন্নয়নশীল দেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে (TWAS Prize-2005) সর্বোচ্চ পুরুষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিকভাবে এই স্বীকৃতি অর্জনের নেপথ্যে রয়েছে সায়েন্টিফিক জার্নালের পাবলিকেশন। তিনি এ পর্যন্ত বিশ্বমানের ১০০’র উপরে পিয়ার রিভিউড গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তাঁর গবেষণার মান পৃথিব
তাঁর গবেষণার মান পৃথিবীর ঐ সমস্ত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় (যেমন হার্ভার্ড, কেমব্রীজ) বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (NIH) কর্মরত বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সাথে তুলনীয়। সম্প্রতি (২০১০) তার গবেষণালব্ধ তথ্য বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা সায়েন্টিফিক জার্নাল নেচার (Nature)-এ প্রকাশিত হয়েছে।
৩) স্পেকট্রোমিটার (ডঃ আনিসুর রাহমান)
মানুষের শরীরের বিস্ফুরক জাতীয় কোন উপাদান সনাক্ত করার যন্ত্র স্পেকট্রোমিটার। এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে এতদিন এই পরীক্ষা করা হত। এই স্পেকট্রোমিটারের সাহায্যে এখন আরও সহজে এই বিস্ফুরক জাতীয় কোন উপাদান সনাক্ত করা যাবে। এই স্পেকট্রোমিটারের আবিস্কারক বাংলাদেশের একজন সফল বিজ্ঞানী ডঃ আনিসুর রাহমান। মানবদেহে বিস্ফুরক জাতীয় উপাদান সনাক্ত করার জন্য অনেক দিন ধরে দেশে ও দেশের বাইরে গবেষণা চলছিল।
ডঃ আনিসুর রাহমান
ড. আনিসুর রহমানের বাড়ি বাংলদেশের পাবনায়। দেশে অবস্থানকালে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট আণবিক বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ও ড. শমসের আলীর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনে তিনি ছিলেন সায়েন্টিফিক অফিসার।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউসকনসিনে অবস্থিত মার্কেট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভের পর পেনসিলভেনিয়ার এপ্লাইড রিচার্স ফটোনিক্স কোম্পানির সিইও হিসেবে যোগদান করেন তিনি।
৪) সোলার এনার্জি সেলস (ড. জামালউদ্দিন)
বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ম্যারিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. জামালউদ্দিন ইতিহাস গড়েছেন। কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল সাইন্সের সহকারী অধ্যাপক এবং ইউনিভার্সিটির নেনোট্যাকনোলজি রিচার্স সেন্টারের গবেষক ডঃ জামালউদ্দিন এবং তার পাঁচ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষানবিশ গবেষকরা স্পেক্ট্রোল্যাবের সোলার সেলের তুলনায় প্রায় ৪ পারসেন্ট অধিক কার্যকর সোলার এনার্জি সেল উদ্ভাবন করলেন।
প্রসঙ্গত, এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সোলার এনার্জি সেল তৈরির শীর্ষস্থানটি দখলে রেখেছে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রোল্যাব। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সোলার সেল তৈরির সুনামটিও তাদের। নিজের এই উদ্ভাবনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়াতে ডঃ জামালউদ্দিন জানান, এটা সত্যিই রোমাঞ্চকর এবং আশাব্যঞ্জক একটি বিষয় যা আরো অধিক নেনোট্যাকনোলজির ওপর গবেষণাকল্পে আমাদের আরো উৎসাহ যোগাবে।
ড. জামাল উদ্দিন এবং তার গ্রুপ সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহারযোগ্য এনার্জি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে যা বিশ্বে এই উৎপাদনের সর্বোচ্চ মাত্রা। ড. জামাল মেটাফিজিঙ্ক সফট ওয়ার-কমসল এবং পিসি-ওয়ান ডি ব্যবহার করে এই ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন।
ড. জামাল
ড. জামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের মরহুম আব্দুল জলিল ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ড. জামাল।
৫) তাপীয় আয়নবাদ তত্ত্ব (মেঘনাদ সাহা )
মেঘনাদ সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা বিষয়ে গবেষণা করেন। তাপীয় আয়নবাদ (Thermal Ionization) সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।
মেঘনাদ সাহা
জন্ম ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকার কাছে শ্যাওড়াতলী গ্রামে। গরীব ঘরে জন্ম। বাবা জগন্নাথ সাহা ছিলেন মুদি। প্রেসিডেন্সী কলেজে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবিশের সহপাঠী (এবং আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ও আচার্য আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ছাত্র)। মৃত্যু ফেব্রুয়ারি ১৬, ১৯৫৬।
৬) উলের প্রোটিন থেকে চিকিৎসা পদ্ধতি (আজম আলী )
আজম আলী উলের প্রোটিন থেকে এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন, যার মাধ্যমে অগ্নিদগ্ধ ও রাসায়নিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর ত্বক ও মাংশপেশীর আরোগ্য সম্ভব। আগুনে মানুষের শরীরের ত্বক ও মাংস উভয়ই ঝলসে যায়। বাজারে যে ওষুধগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো শুধু ক্ষত স্থানের ত্বকই তৈরি করে। আর আজম আলী কাজ করেছেন উল নিয়ে। উলে কেরাটিন নামের প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিনটা মানুষের নখ ও চুলেও পাওয়া যায়। তিনি নিউজিল্যান্ডে পাঁচ বছর ধরে এটা নিয়ে কাজ করেছেন। এই কেরাটিনকে রি-ইঞ্জিনিয়ারিং করে তিনি কেরাজেল, কেরাডাম ও কেরাফোম তৈরি করেছেন। ক্ষত স্থানে এগুলো ব্যবহার কররে শুধু ত্বকই নয়, মাংসপেশির টিস্যুও তৈরি করবে। তা ছাড়া তুলনামূলক ৪০ গুণ দ্রুত কাজ করবে এটা।
২০১০ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কার বেয়ার ইনোভেটর পুরস্কার পান।
আজম আলী
আজম আলী একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী। ১৯৬৭ সালের এপ্রিলে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে (বর্তমান নাম সেতাবগঞ্জ) আজম আলীর জন্মগ্রহণ করেন।
৭) রেকডি (জেনেটিক রিকম্বিনেশনের জিন) (আবেদ চৌধুরী)
আবেদ চৌধুরী আধুনিক জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির গবেষকদের একজন। তিনি পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন স্টেট ইনিস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়লজি এবং ওয়াশিংটন স্টেটের ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে। ১৯৮৩ সালে পিএইচ.ডি গবেষণাকালে তিনি রেকডি নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা হয়। তিনি অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন,যার মাধ্যমে এই জিনবিশিষ্ট মিউটেন্ট নিষেক ছাড়াই আংশিক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়। তার এই আবিষ্কার এপোমিক্সিস এর সূচনা করেছে যার মাধ্যমে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়।
আবেদ চৌধুরী
একজন বাঙ্গালী জিনবিজ্ঞানী, বিজ্ঞানলেখক এবং কবি। তিনি বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং ক্যানবেরা শহরে বসবাস করেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে শৈবাল ও অন্তরীক্ষ গ্রন্থটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট হেলথ, ম্যাসাচুসেটস ইনিস্টিটিউট অফ টেকনলজি এবং ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপিরিয়রের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থায় একদল বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত গবেষকদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অনেক পেশাদরী জার্নালে তাঁর লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি সহজবোধ্য ভাষায় বাংলা ও ইংরেজিতে অনেক নিবন্ধ লিখেছেন।
৮) সংকর ধাতু উদ্ভাবন (আব্দুস সাত্তার খান)
তিনি নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময়ে ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন। এই সংকর ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরো হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরো দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরো গতিশীল করেছে। তার উদ্ভাবিত সংকর ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।
আব্দুস সাত্তার খান
আব্দুস সাত্তার খান ১৯৪১ - ৩১শে জানুয়ারি, ২০০৮ বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত মহাকাশ গবেষক। কর্মজীবনে তিনি নাসা, ইউনাইটেড টেকনোলজিসের প্র্যাট এন্ড হুইটনি এবং অ্যালস্টমে (সুইজারল্যান্ড) কাজ করেছেন।
আব্দুস সাত্তারের গবেষণা এবং মহাকাশে তার প্রয়োগের জন্য তিনি নাসা, আমেরিকান বিমানবাহিনী, ইউনাইটেড টেকনোলজি এবং অ্যালস্টম থেকে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ব্রিটেনের রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির একজন পেশাদার রসায়নবিদ এবং নির্বাচিত ফেলো।
৯) মারকিউরাস নাইট্রাইট (HgNO2) (পি সি রায়)
নিজের বাসভবনে দেশীয় ভেষজ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তিনি তার গবেষণাকর্ম আরম্ভ করেন। তার এই গবেষণাস্থল থেকেই পরবর্তীকালে বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানার সৃষ্টি হয় যা ভারতবর্ষের শিলপায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট (HgNO2) আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২ টি যৌগিক লবন এবং ৫ টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন।
পি সি রায়
পি সি রায় বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে আগস্ট ২, ১৮৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা'র ভূবনমোহিনী দেবী এবং পিতার নাম হরিশচন্দ্র রায় । যিনি স্থানীয় একজন জমিদার ছিলেন। তার পরিবার ছিল বনিয়াদি। ছোটবেলা থেকেই প্রফুল্লচন্দ্র অত্যন্ত তুখোড় এবং প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন। তিনি জগদীশ চন্দ্র বসুর সহকর্মী ছিলেন। এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী মৃত্যু বরণ করেন ১৯৪৪ সালের, ১৬ জুন।
১০) পাটের জিন নকশা (ড. মাকসুদুল আলম )
২০০৮ সালে দেশের ৪২ জন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে তৈরি ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামক একটি উদ্যোগের মাধ্যমে পাটের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণার সূত্রপাত। পরে ২০১০ সালে নতুন উদ্যোমে আবারও গবেষণাটি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিভাগের ১১ জন গবেষক ও ডাটা সফটের ২০ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তথ্য বিশ্লেষণের কাজগুলো করেছেন। ড. মাকসুদুল আলম একজন বাংলাদেশী জিনতত্ত্ববিদ। তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিন নকশা। ২০১০ সালের ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের ঘোষণা দেন।
গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ ও কারিগরি সহায়তা পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই ও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স মালয়েশিয়ার কাছ থেকে। গবেষণার বিভিন্ন স্তরে প্রায় দুই কোটি তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্য ব্যাখ্যা করতে প্রয়োজন পড়েছে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন একটি মিনি সুপার কম্পিউটারের। ৪২টি কম্পিউটার একসঙ্গে যুক্ত করে মিনি সুপার কম্পিউটার তৈরি করা হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ডাটা সফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কাজগুলো তত্ত্বাবধান করেন।
ড. মাকসুদুল আলম
ড. মাকসুদুল আলমের জন্মঃ ১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৫৪ ঢাকাতে। পেঁপের জিননকশা উন্মোচনের কারণে মাকসুদুল আলম 'নেচার সাময়িকীর' প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছিলেন। এভাবেই শুরু হলো মাকসুদুল আলমের সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হওয়ার অধ্যায়।
১১) পাট থেকে পাটকাঠি এবং পাটকাঠি থেকে রেয়ন (ড.কুদরাত-এ-খুদা )
ড.কুদরাত-এ-খুদা গবেষণার প্রথম দিকে স্টেরিও রসায়ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অনান্য খনিজ পদার্থ। বিজ্ঞানী হিসাবে তাঁর ও তাঁর সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৯টি পাটসংক্রান্ত। এর মধ্যে পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন, পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য। দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত গবেষ্ণামূলক পত্রিকায় তাঁর রচিত প্রায় ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
কুদরাত-এ-খুদা
কুদরাত-এ-খুদা বাংলাদেশের প্রথমসারির একজন বিজ্ঞানী। কুদরাত-এ-খুদা ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মাড়গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেম। তার পিতা খোন্দকার আব্দুল মুকিদ, মাতা ফাসিহা খাতুন। ড.কুদরাত-এ-খুদা ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যু বরন করেন।
১২) ট্রেন চলবে লাইন স্পর্শ করা ছাড়া (ডঃ আতাউল করিম )
ট্রেন চলবে কিন্তু ট্রেনের চাকা লাইন বা ট্রাক স্পর্শ করবে না। চুম্বকের সাহায্যে এটি এগিয়ে চলবে এবং গন্তব্যে পৌঁছবে চোখের পলকে। বিশ্বের পরিবহন সেক্টরে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এবং বাস্তব এটি। আর এর পুরো কৃতিত্ব একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী। তিনি হলেন ডঃ আতাউল করিম। বিশ্বের সেরা ১০০জন বিজ্ঞানীর একজন। আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ার নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) ডঃ আতাউল করিমের এ সাফল্যের কাহিনি মার্কিন মিডিয়াতেও ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষকেরা বিগত৭ বছর ধরে এ ধরনের একটি ট্রেন তৈরীর গবেষণায় ফেডারেল প্রশাসনের বিপুল অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু তা সাফল্যের আশপাশেও যেতে পারেনি। অবশেষে ২০০৪ সালে এই গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন ডঃ আতাউল করিম এবং গত দেড় বছরে ট্রেনটি নির্মাণে সক্ষম হন। পরীক্ষা সফল হয়েছে। এখন শুধু বানিজ্যিকভিত্তিতে চালু করার কাজটি বাকি।
জার্মানী, চীন ও জাপানে ১৫০ মাইলের বেশী বেগে চলমান ট্রেন আবিস্কৃত হলেও তাতে প্রতি মাইল ট্রাক বা লাইনের জন্য গড়ে খরচ ১১০ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু ডঃ করিমের এ ট্রেনে খরচ হবে মাত্র ১২/১৩ মিলিয়ন ডলার। দেখতেও আকর্ষণীয় এ ট্রেনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা স্টার্ট নেয়ার পর লাইনকে স্পর্শ করবে না।
ডঃ আতাউল করিম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ৩৩ বছর আগে আমেরিকায় এসেছেন ডঃ করিম। এরপর পদার্থ বিজ্ঞানে এম.এস, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এম.এস এবং ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পি.এইচ.ডি করেন আলাবামা ইউনিভার্সিটি থেকে যথাক্রমে ১৯৭৮, ১৯৭৯ এবং ১৯৮১ সালে। প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেয়ার পর শুরু পেশাগত জীবন এবং মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে তিনি বর্তমানেযুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বের মেধাসম্পন্ন ৫০০০ গবেষক-ছাত্রেরনেতৃত্ব দিচ্ছেন অন্ততঃ ৬০০ ফ্যাকাল্টিতে। ডঃ করিমের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে ৬টি কলেজ, কমপক্ষে ২০টি গবেষণাকেন্দ্র, ৬শত শিক্ষক এবং ৫হাজারের উপরে গ্রাজুয়েট ও আন্ডার-গ্রাজুয়েট ছাত্র-ছাত্রী।
১৩) 'সোনো ফিল্টার' (অধ্যাপক আবুল হুসসাম)
অধ্যাপক আবুল হুসসাম একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী, তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা করে কম খরচে ভূ-গর্ভস্থ আর্সনিকযুক্ত পানি পরিশোধনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তিনি এবং তার ছোট ভাই ডক্টর আবুল মুনির দু'জনে মিলে তৈরি করেন 'সোনো ফিল্টার' নামে এই খাবার পানি থেকে আর্সেনিক নিষ্কাশন করার যন্ত্র। তাদের তৈরি এই যন্ত্র টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে নির্বাচিত হয়েছে ২০০৭ সালের পরিবেশ বিষয়ক অন্যতম সেরা আবিষ্কার হিসেবে।
প্রথমদিকে ডক্টর হুসসাম তৈরি করেন বেশ কিছু কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রোকেমিক্যাল এনালাইজার, অটোমেটেড টাইট্রেশন সিস্টেম এবং বেশ মূল্যবান এক ধরনের গ্লাস ক্রোমাটোগ্রাফ যার মাধ্যমে তিনি জটিল কোন ধরনের মিডিয়াতে প্রবাহিত পদার্থের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন । তার এই আবিষ্কারটিই তাকে সূযোগ করে দেয় ভূ-গর্ভস্থ পানির অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার। বিভিন্ন জার্নাল ও বইয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ডক্টর হুসসামের তবে তার বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এসেছে এই আর্সেনিক ফিল্টার আবিষ্কারের পর।
ডক্টর আবুল হুসসাম
আবুল হুসসামের জন্ম ১৯৫২ সালে কুষ্টিয়াতে। তিনি বড় হয়েছেন সেখানেই এবং তার প্রাথমিক পড়াশুনাও কুষ্টিয়াতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে তিনি রসায়নে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ১৯৮৬ সালে পেনিসেলভেনিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ পিটস্বার্গ থেকে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রি। ইউনিভার্সিটি অফ মিনিসোটার রসায়ন বিভাগ থেকে পোষ্ট-ডক্টরাল ট্রেনিং সম্পন্ন করেন তিনি। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি কাজ করছেন জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও প্রাণরসায়ন বিভাগে। এছাড়া তিনি রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেস ওয়েষ্টার্ন রিসার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ডক্টর হুসসাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আনাডারগ্রাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট লেভেলে পড়ান কোয়ান্টিটেটিভ কেমিক্যাল এনালাইসিস, ইন্সট্রুমেন্টাল এনালাইসিস, ইলেক্ট্রো-এনালাইটিক্যাল কেমিষ্ট্রি এবং থিওরি অফ এনালাইটিক্যাল প্রসেস বিষয়ে। তিনি গবেষণা করেছেন ইলেক্ট্রো-এনালাইটিকাল কেমিষ্ট্রি, এনভায়রনমেন্টাল কেমিষ্ট্রি ও অর্গানাইজড মিডিয়া কেমিষ্ট্রি নিয়ে।
১৪) জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন তত্ত্ব (রেজাউল করিম)
জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবন করে সারা বিশ্বে চিকিৎসা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী। তার এ নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবনের ফলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় যে মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ওষুধ উদ্ভাবনের চেষ্টা করা হচ্ছে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। নেদারল্যান্ডের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল অনকোলজির পিএইচডি গবেষক রেজাউল করিম এ তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন। তার এ তত্ত্বসংক্রান্ত গবেষণাপত্র আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চের ক্লিনিক্যাল ক্যান্সার রিসার্চ জার্নাল অক্টোবর ’০৯ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
রেজাউল করিম
রেজাউল করিম গাইবাìধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশামত কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের আব্দুস সালাম সরকার ও রাবেয়া বেগমের বড় ছেলে।
১৫) Oparin Theory ও Neo-Darwinism, Lamarck Theory –র ভুল প্রমাণ (ড. মো. আব্দুল আহাদ)
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর এর কীটতত্ত্ব বিভাগের ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আহাদ আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণালদ্ধ তথ্য দ্বারা তিনি জীববিজ্ঞানের বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর থিওরী যথা, Oparin Theory (প্রথম এককোষী জীবের উৎপত্তি প্রসঙ্গে রাশিয়া ও ব্রিটেন বিজ্ঞানীর থিওরী), Neo-Darwinism, Lamarck Theory (সমগ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের উৎপত্তি বা বিবর্তন প্রসঙ্গে থিওরী) ভুল প্রমাণ করেছেন। তার গবেষণা প্রবন্ধ দুটি ভারত থেকে প্রকাশিত The International Journal of Bio-Resource and Stress management এ যথাক্রমে মার্চ ও জুন, ২০১১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টিতে বাংলাদেশ ও ভারত এর বিজ্ঞানীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
ড. মো. আব্দুল আহাদ
প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আহাদের পিতা মরহুম আব্দুল খালেক সরদার। তার বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামে। উনার বিদ্যালয় জীবন কেটেছে গ্রামের বাড়িতেই। কলেজ জীবন সাতক্ষীরাতে কাটানোর পরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তোর শিক্ষা গ্রহন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহতে।
১৬) প্রথম কৃত্রিম কিডনি (শুভ রায়)
বাংলাদেশের বিজ্ঞানী শুভ রায় বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেছেন। এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক অসামান্য কীর্তি। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সহযোগী অধ্যাপক শুভ রায় ১০ বছর আগে তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দলটি ঘোষণা দেয়, তারা কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে তা অন্য প্রাণীর দেহে প্রতিস্থাপন করে সফল হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে আরো ব্যাপকভাবে বিভিন্ন প্রাণীতে প্রতিস্থাপন করে পরীক্ষার পর এটি মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন শুভ রায়।
বাংলাদেশে প্রতিবছর এক কোটি ৮০ লাখ লোক কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার রোগীর কিডনি সম্পূর্ণরূপে বিকল হয়, যাদের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার রোগীই মারা যায়। কিডনি বিকল রোগীদের কিডনি সংযোজন ও ডায়ালাইসিস দুটোই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আবার ডায়ালাইসিস আসল কিডনির মাত্র ১৩ ভাগ কাজ করে। জটিল কিডনি রোগের তাই কিডনি প্রতিস্থাপনই সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা। তবে কিডনি সংযোজনের বড় সমস্যা দাতার অভাব।
শুভ রায়
বিজ্ঞানী শুভ রায়ের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। শুভ রায় মাইক্রো ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেম টেকনোলজি ডেভেলপিং স্পেশালিস্ট। এর আগে ম্যাসাচুসেটসের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির টপ হানড্রেড ইনোভেটর ২০০৩ অ্যাওয়ার্ড পান তিনি।
১৭) ঈশ্বর কণা’ (সত্যেন্দ্রনাথ বসু)
পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ও বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে নামকরণ করা হিগস-বোসন কণাটি ‘ঈশ্বর কণা’ হিসেবেও পরিচিত। বিজ্ঞানী হিগস ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। এর ফলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এ কণাটিই ‘ঈশ্বর কণা’ নামে পরিচিতি পায়। নিউক্লিয়ার গবেষণার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় সংস্থা সার্নের গবেষকেরা নতুন একটি অতিপারমাণবিক কণার খোঁজ পাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন।
৪ জুলাই বুধবার যুক্তরাজ্য ও জেনেভায় আলাদা সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ দাবি করেছেন। গবেষকেদের দাবি, এই কণাটি হিগস-বোসন বা ‘ঈশ্বর কণা’র অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। ভূগর্ভস্থ লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে বিগ ব্যাং ঘটিয়ে এ কণার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন সার্ন গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা। খুঁজে পাওয়া নতুন কণাটির বৈশিষ্ট্য হিগস বোসনের মতো হলেও এটিই হিগস-বোসন কণা কি না, তা জানতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।
২০১০ সালে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে মিনি বিগ ব্যাং ঘটানোর পর থেকে অপেক্ষার পালা শুরু। কিন্তু এ কণার অস্তিত্ব আদৌ আছে কি নেই, সে তথ্য জানার অধীর অপেক্ষায় ছিলেন গবেষকেরা।
গবেষকেরা দাবি করেছেন, প্রাপ্ত উপাত্তে ১২৫-১২৬ গিগাইলেকট্রন ভোল্টের কণার মৃদু আঘাত অনুভূত হওয়ার তথ্য তাঁরা সংরক্ষণ করতে পেরেছেন। এ কণা প্রোটনের চেয়ে ১৩০ গুণেরও বেশি ভারী।
সার্নে এ ঘোষণা দেওয়ার পর হাততালিতে ভরে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। গবেষক হিগস নিজেও এ পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু
১৮৯৪ সালের ১ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার জন্মগ্রহণ করেন বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ১৯১৩ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক হন এবং ১৯১৫ গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরই তিনি কলকাতায় শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হন। বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে গবেষণাও শুরু করেন তিনি। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা কালে তিনি ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এ সময় তিনি তাঁর গবেষণাপত্র ছাপতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উপেক্ষিত হন। তিনি সরাসরি যোগাযোগ করেন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে। এরপর তাঁকে চিনতে শুরু করে সবাই। ১৯২৭ সালে তিনি আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেছেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
উপড়ে উল্লেখিত ১৮ জন বাঙ্গালী বিজ্ঞানী ছাড়াও আমাদের পরিচিত এবং অপরিচিত অনেক বাঙ্গালী বিজ্ঞানীই রয়েছেন যাদের কল্যাণে আমরা বর্তমানের পৃথিবী পেয়েছি। আমার এই রচনার মূল উদ্দেশ্যই ছিল পাঠকদেরকে বাঙ্গালী বিজ্ঞানীদের নিয়ে একটা প্রাথমিক ধারনা দেয়া।
No comments:
Post a Comment