eBongBD.com

"All about things for easy life"
This is a website about solution of our daily problems. You can get here all Problem's solution.

Breaking

পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়।

Friday, September 21, 2018

১০০ মনীষীর জীবনী ইবনে খালদুন  একজন প্রজ্ঞাবান মনীষীঃইবনে খালদুন ১৩৩২ খ্রিস্টাব্দে তিউনিশিয়ার এক মনোরম পল্লীর সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম ইবনে খালদুন, ওয়ালী আলদীন আবদুর রহমান বিন মুহাম্মদ বিন মহাম্মদ বিন আবি বাকার মুহাম্মদ বিন আল হাসান। তৎকালীন আরব মুসলিম সংস্কৃতির পুরোধা পুরুষ হিসেবে ইবনে খালদুনের নাম স্ববিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে ইসলামী ঐতিহ্যও সংস্কৃতির বিকাশে তার অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। ইবনে খালদুন ছিলেন মূলত একজন ঐতিহাসিক। তার ইতিহাস গ্রন্থের 'মুকাদ্দামা' তথা ভূমিকা তাকে কালজয়ী এক ঐতিহাসিকের আসনে সমাসীন করেছে।তিন মুকাদ্দামা রচনা করেছিলেন ১৩৭৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যভাগে মাত্র পাঁচ মাসের পরিশ্রমের। আমরা আজ এই মুকাদ্দামাকে আলাদা একটি গ্রন্থের মর্যাদা দেই। এ মুকাদ্দামায় ইবনে খালদুন সমাজবিজ্ঞান জ্ঞানের এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন। খালদুনের পরিবারের অতি উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ থাকার বদৌলতে মাগরেবের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের কাছে তার পড়াশোনার সুযোগ হয়েছিল। ক্লাসিক্যাল ইসলামী শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি কোরআন মুখস্থ করেছিলেন তিনি। রাজনীতিতেও জড়িয়েছিলেন। তার আত্মজীবনী দেখে মনে হয় এটি একটি অভিযাত্রার গল্প। তিনি বেশ ক’বার জেল খাটেন। সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদে আসীন হন, আবার নির্বাসনে যান। ইবনে খালদুনের গোটা বর্ণাঢ্য জীবন পঞ্জীকে তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছেন ঐতিহাসিকগণ। প্রথমত জন্ম থেকে ২০ বছর পর্যন্ত শৈশব-কৈশোর এবং শিক্ষাজীবন ব্যাপৃত। দ্বিতীয় অধ্যায় কেটেছে তার গভীর অধ্যবসায়, গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা অর্জনের নিমিত্তে। এ অধ্যায়ে খালদুনের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বিশেষ ভূমিকা ও দুঃসাহসিক অভিযাত্রার প্রমাণ পাওয়া যায়। এবং তৃতীয় অধ্যায়ে ইবনে খালদুন একজন যুগ সংস্কারক বুদ্ধিজীবী এবং বিচারক হিসেবে সমাজ বিবর্তনে বিশেষভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। উপরিউক্ত তিনটি অধ্যায়ের প্রথম দু'টি অংশ তিনি পাশ্চাত্য মুসলিম সভ্যতা বিকাশে ব্যয় করেন এবং শেষাংশ কাটে পশ্চিমা দেশগুলোয় এবং মিশরে। তিউনিশিয়ায় জন্মগ্রহণ করে সেখানে তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষালাভের সুযোগ হলেও দুরন্ত কৈশোর জীবন পেরিয়ে যৌবনে পদার্পনের পরই তিনি নিজেকে একটি কর্মসংস্থানে দাঁড় করানোর প্রয়াস চালান। তাতে তিনি সফলতাও পান। ইবনে খালদুন তৎকালীন মিশরীয় শাসক সুলতান বারকুক-এর অধীনে চাকরি লাভ করেন। এখানে তিনি তার যোগ্যতা ও মেধার প্রশংসনীয় স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু একজন অনুসন্ধিৎসু জ্ঞান-পিপাসুকে কি একটি জীবিকার জন্য চাকরি নিয়ে পড়ে থাকা মানায়? খালদুন তার জীবনের মোহনীয় ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে জ্ঞানের তপস্যায় উচ্চতর গবেষণা ও বিদ্যা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি মিশর ত্যাগ করেন। কিন্তু দেশন্তরী হয়েও খালদুন নিজস্ব ক্যারিয়ার তথা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় বাধার সম্মুখীন হন। তৎকালীন সমসাময়িক রাজনীতিকদের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘ মেয়াদী দ্বন্দ-সংঘাত এবং সামগ্রিক আর্থ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দরুন খালদুনের উচ্চশিক্ষা ও জ্ঞান গবেষণা প্রচেষ্টায় কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হয়ে পড়ে। কিন্তু তাতে দমে যাননি। সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনি নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তার আধ্যাত্ম্য ও বৈষয়িক জ্ঞান সাধনা নিরলসভাবে চালাতে থাকেন। অতঃপর আলজেরিয়ার একটি ছোট গ্রাম কালাত বিন সালামায় প্রায় তিন বছর যাবৎ উদ্বাস্তর মত জীবনযাপনের মধ্যেও কঠোর অধ্যবসায় ও জ্ঞানান্বেষনের কাজ অব্যাহত রাখেন। এখানেই তিনি তার জীবনের অত্যন্ত পরিশ্রম-সাধ্য সাফল্যটি অর্জন করেন। আর তা হচ্ছে ইবনে খালদুনের বিশ্ব বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘‘আল মুকাদ্দিমাহ’’। সমসাময়িক বিশ্বের রাজনৈতিক, ইতিহাসবিদ, সমাজতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকদের কাছে এই গ্রন্থটিই খালদুনকে বিশ্ব ইতিহাস যুগান্তকারী সুখ্যাতি ও অমরত্ব দান করেছে। ইবনে খালদুনের বিষ্ময়কর প্রতিভা ও মেধার স্বাক্ষর কেবল ইতিহাস কিংবা ঐতিহাসিকতা নির্ভর ছিল না। দর্শনশাস্ত্র, সমাজ বিজ্ঞান ও জুডিশিয়াল অঙ্গনেও তার অসামান্য অবদান আজও বিপুলভাবে সমাদৃত হচ্ছে। তিনি মুসলমানদেরকে সমাজ-সংস্কৃতি এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক সচেতন হবার প্রয়াসে বিভিন্ন উদ্বুদ্ধকরণ মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ইবনে খালদুনের বর্ণাঢ্য জীবনধারায় আল মুকাদ্দিমার বাইরে স্বতন্ত্র যেসব বহুল আলোচিত গ্রন্থ রচনা করেছেন তার মধ্যে বিশ্ব ইতিহাস গ্রন্থ কিতাব আল-ই-বার ব্যাপক প্রসিদ্ধিলাভ করে। এ গ্রন্থে আবরদের ইতিহাস, সমসাময়িক মুসলিম শাসক, সমসাময়িক ইউরোপীয় শাসক, আরবদের প্রচীন ইতিহাসসহ ইহুদী, গ্রীক, রোমান, ইরান প্রভৃতি সভ্যতার বিকাশ ও ইতিবৃত্ত অত্যন্ত দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে। যা সত্যিই প্রায় এক অসম্ভব আয়াসসাধ্য প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে বিশ্ব মনীষীদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। এতে আরো উদ্ধৃত হয়েছে ইসলামের স্বর্ণালী ইতিহাস, মিশরীয় ও উত্তর আফ্রিকীয় ইতিহাস বিশেষ করে ঐসব ভৌগোলিক অঞ্চলের বসবাসকারী সভ্যতার আলোহীন উপজাতীয় মানুষদের তাবৎ কৃষ্টি ইতিহাসও। সর্বশেষ খন্ডে খালদুন তার স্বীয় জীবনের খুটিনাটি আলোচিত ও আলোকিত অধ্যায়ের বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন। এই খন্ডের নাম আল তাসরীক। এটি কেবল একটি ইতিহাস গ্রন্থই নয় বরং এতে আত্ম চরিত লেখনের কলাকৌশল ও আর্টের এক অভিনব বিশ্লেষণধর্মী শিল্প নির্দেশনাও বটে। ইবনে খালদুন শেষ জীবন কাটিয়েছেন মিশরে। তৈমুর লং-এর আক্রমণের ভয়ে যখন সমগ্র মিশর কাঁপছিল, ঠিক তখন তিনি তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি কূটনৈতিক দক্ষতায় তৈমুরের আক্রমণ থেকে সিরিয়া, মিশরসহ সমগ্র পশ্চিম অংশকে রক্ষা করেন। তাঁর কথায় মুগ্ধ হয়ে তৈমুর তাঁকে তার উজিরে আযমের পদে নিযুক্ত করার প্রস্তাব দিলেন। তবে ইবনে খালদুন তা কৌশলে প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর এই অবদানের জন্য মিশরীয় সুলতান তাঁকে সমগ্র দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। এ পদে থাকাকালেই ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ, ৮০৮ হিজরীর ২৫ রমযান ৭৪ বছর বয়সে তিনি ইন্তিকাল করেন। এ মুসলিম মনীষীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা তাঁকে গভীরভাবে স্মরণ করি।-সংকলিত Developed by 

No comments:

Post a Comment