eBongBD.com

"All about things for easy life"
This is a website about solution of our daily problems. You can get here all Problem's solution.

Breaking

পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়।

Friday, September 21, 2018

১০০ মনীষীর জীবনী লেনিন  বলা হয়ে থাকে শ্রমিক, কৃষকসহ মেহনতী মানুষগুলো যখন কু‍‌‌জো হয়ে যাচ্ছি‍ল পুজিবাদীদের তীব্র শ্রম রোষে; মেহনতীদের ঘাড় ভেঙে পু‌জিপতি সুবিধাবাদী জাররা মুঠি ভরে নিত; ঠিক সে সময় রাশিয়ার মহানদী ভলগার তীরে সিমবিস্র্ক (বর্তমানে উলিয়ানভস্ক) শহরে জন্ম নেন প্রথিত যশা-মেহনতীদের নেতা, মার্কস ও এঙ্গেলসের বৈপ্লবিক মতবাদের প্রতিভান উত্তরসাধক, সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিষ্ট পার্টির সংগঠক, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে উজ্জেবিত সোভিয়েত রাষ্টের প্রতিষ্ঠাতা, মহান মনীষী ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের জন্ম হয় ১৮৭০ সালের ১০ই এপ্রিল মতানৈকে ২২শে এপ্রিল।লেনিন এর পিতা ইলিয়া নিকোলায়েভিচ উইলিয়ানভ ছিলেন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক, যিনি অসাধারন মেধা আর অধ্যাবসায়ের ফলে পরবর্তীতে সিমবিস্র্ক গুবেনিয়ার স্কুল পরিচালক হন। তিনি গনশিক্ষার ব্যাপারে অনেক কিছু করেন-গ্রামান্চ্ঞলে স্কুল খোলেন, শিক্ষকদের সাহায্য করেন, অরুশ অধিবাসীদের শিক্ষা বিস্তারের দিকে তার খুবই নজর ছিল। লেনিন এর মা-মারিয়া আলেক্সান্দ্রভনা পড়াশোনা করেন বাড়ীতে।কয়েকটি বিদেশী ভাষা জানতেন, সাহিত্যে তার ভালো দখল ছিল আর খুব ভালোবাসতেন সঙ্গীত। বুদ্ধিমতী, শান্ত, সৌজন্যশীলা ও স্নেহশীলা এই মহিলা ছেলেমেয়ে মানুষ করার জন্য নিজেকে সম্পূর্ন সঁপে দিয়েছিলেন। ইলিয়া ও মারিয়া উইলিয়ানভ পরিবারে ছেলেমেয়ে ছিল মোট ছয় জন_ আন্না, আলেক্সান্দর, ভ্লাদিমির, ওলগা, দৃমিত্রি এবং মারায়া।বাবা-মা তাদের জন্য বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন, চেয়েছিলেন তাদের সৎ ,বিনয়ী, পরিশ্রমী, জনগনের অভাব অনাটনের প্রতি সজাগ করে তুলতে। উইলিয়ানভদের সবকটি ছেলেমেয়ে বিপ্লবী হয়ে ওঠে অকারনে নয়। পাচ বছর বয়সেই ভ্লাদিমির পড়তে শেখে, নয় বছর বয়সে ভর্তি হয় সিমবির্স্ক জিমনেসিয়মের প্রথম শ্রেণীতে। পড়াশোনায় ভ্লাদিমির ছিলেন খুবই মনোযোগী। মেধা আর পাঠের প্রতি গুরুত্ববোধে তাকে আলাদা করে চেনা যেত, কঠিন পাঠের বেলায় সে আগ্রহেই সঙ্গীদের বুঝিয়ে দিয়ে সাহায্য করত। ক্লাসের পর ক্লাস উত্তীর্ন হয়ে এল ভ্লাদিমির প্রথম শ্র্রেণীর পুরস্কার পেয়ে। অনেক পড়াশোনা করেন ভ্লাদিমির। মহান রুশ লেখকদের রচনা তার পাঠ্য সম্ভারে জরিয়ে ছিল। এদের মধ্যে লেরমন্তভ, পুশকিন, তুর্গেনিভ, নেক্রাসভ, তলস্তয়, সালতিকভ, শ্যেদ্রিন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। তার অধিত সাহিত্যের মধ্যে একটা বড় অংশ জুরে ছিল বিপ্লবী গনতন্ত্রী লেখকরা। এরা ছিলেন_ ভ.গ. বেলিনস্কি, আ.ই. হেতসের্ন, চেনিশেভস্কি, দব্রলিউবভ ও পিসারেভের রচনা। এদের অনেকের লেখা তখন নিষিদ্ধ ছিল তবু ভ্লাদিমির তা বাদ দেননি। লেলিনকে খুবই আকৃষ্ট করত ন.গ. চেনিশের্ভস্কির “What’s the Duty” উপন্যাস। ভ্লাদিমির লেলিনের মতে কঠোর সেন্সর সত্বেও চেনিশের্ভস্কি তার প্রবন্ধ মারফত সত্যিকার বিপ্লবী গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। কিশোর লেলিনের চরিত্র ও দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে উঠে রুশ সাহিত্য ও পরিবেশের জীবন পর্যবেক্ষনের প্রভাবে। এসময় পুজিবাদ দ্রুত বিকাশ পাচ্ছিল, যান্ত্রিক টেকনোলজি ও হাজার হাজার মজুর নিয়ে মাথা তুল ছিল কলকারখানা। পুজিবাদী শোষনের সংগে যোগ দিয়েছিল ভূমিদাস প্রথার নিগড় সম্পর্ক। জার সরকারের স্বৈরাচার, জমিদার ও পুজিপতিদের নিপীরন; কৃষক দরিদ্র ও অধিকারহীণতা কিশোর লেলিনের মনে উৎপীরিতদের প্রতি সহমর্মিতা জাগিয়ে তোলে। ভ্লাদিমিরকে আরো আলোরিত করে ১৮৮৭ সালে যখন তার দাদা আলেক্সান্দর উইলিয়ানভ জার তৃতীয় আলেক্সজ্নডরকে হত্যা করার অভিযোগে সেই বছরের মার্চ মাসে পিটার্সবার্গে গ্রেপ্তার হন এবং মে মাসে তিনি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হন। দাদার মৃত্যুর পর ভ্লাদিমির বিপ্লবী সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। দাদা ও তার কমরেডদের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত করলেও ভ্লাদিমির কিন্তু তাদের পথ বর্জন করেন। কিশোর ভ্লাদিমির লেলিনের অভিমত জার সরকারের স্বতন্ত্র একজন প্রতিনিধিকে কিংবা স্বয়ং জারকে হত্যার মাধ্যমে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ভ্রান্ত, তাতে লক্ষ্য সিদ্ধ হবে না। ভ্লাদিমির হত্যার মাধ্যমে অধিকার আদায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন, তিনি সমঝোতার মাধ্যমে মেহনতিদের অধিকার আদায়ের পক্ষে ছিলেন। বিপ্লবী ভ্লাদিমির পুরোদমে তার লেখাপড়াও চালিয়ে যান, কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আইনের কোর্স নিলেন এবং প্রগতিশীল বিপ্লবী ভাবাপন্ন তরুনদের সাথে যোগাযোগ করেন। ১৮৮৭ সালের ডিসেম্বরের গোড়ায় ছাত্র সভায় সক্রিয় অংশ গ্রহনের ফলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করেন। সে সময় জার স্বৈরশাসনে বিরুদ্ধে নারোদবাদীরা মাথা চারা দিয়ে উঠেছিল। নারোদবাদ হচ্ছে_মেহনতীদের শ্রমমূল্য প্রতিষ্ঠার জন্য জার পুজিপতিদের হত্যা করা। এরা সন্ত্রাসকে বড় করে স্থান দিত। কিন্তু ভ্লাদিমির লেনিন এই মতের বিরুদ্ধে ছিলেন সবসময়। তিনি হত্যাজ্ঞম এবং সন্ত্রাসকে কিছুতেই মানতে পারেননি। তাই তিনি প্রকাশ্যে সব সময় নারোদবাদীদের ভূল ধরিয়ে দিতে সচেষ্ট ছিলেন। ভ্লাদিমির ইলিচ সব সময় মার্কস এবং এঙ্গলসের রচনা অধ্যায়ন চালিয়ে যেতেন। পাশাপাশী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিপ্লবী শক্তগুলোকে একীভূত করার প্রক্রিয়ায় নেমে যান এবং ১৮৯২ সালে লেলিন সামারায় প্রথম মার্কসবাদী গ্রুপ স্থাপন করেন। তার সদস্যরা মার্কস এবং এঙ্গলসের রচনা অধ্যায়ন করত এবং মার্কসবাদের বিশদ প্রচার চালাত। এ দলের বিপ্লবী ভাবাপন্ন তরুনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন এ.পি. স্ক্লিয়ারেঙ্কো, ই.কে. লালাইয়ানতস, সেমিওনভ, কুজেতসভ, লেবেদেভা প্রমুখ। তেইশ বছর বয়সী ভ্লাদিমির গ্রাম্য জীবনকে স্বচক্ষে পর্যবেজ্ঞন করতেন। প্রায়ই কৃষকদের সম্বন্ধে আলাপ করতেন, তাদের অবস্থার খোজখবর নিতেন। লেলিনের কাজ শুধূ সামারায় সিমাবদ্ধ ছিলনা। কাজান, সারাতভ, সিজরান প্রভৃতি এলাকাসহ ভলগা তীরের অন্যান্য শহরে মার্কসবাদীদের সংগে যোগাযোগ স্থাপন করতঃ পরবর্তী বিপ্লবী অভ্যুথানের জন্য সক্রিয় হতে থাকেন। ১৮৯৩ সালের আগস্ট মাসে লেলিন সামারা থেকে পিটার্সবার্গে চলে আসেন। পিটার্সবুর্গ ছিল সে সময় রাশিয়ার রাজধানী। দেশটির ম্রমিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। সেখানে কিছু গুপ্ত চক্র ও তাদের সদস্যরা মার্কস চর্চা করত এবং তা শ্রমিকদের মধ্যে প্রচার করত। এই ধরনের একটি চক্রে যোগ দেন ভ্লাদিমির ইলিচ। পার্টির পুরুনো সদস্য ক্রজিজানভস্কি লেলিনের সম্বন্ধে বলেছেন,‘হঠাৎ আমাদের উত্তরের সমভূমিতে অসাধারণ একটি মানুষের উদয় হল যিনি মার্কসদের প্রতিভায় পিটিয়ে তোলা হাতিয়ারটির শক্তি যেমন বুঝতেন তেমন আর কেউ পারত না। তাঁর কাছে মার্কসবাদ হলো সর্বাগ্রে বিপ্লবী।’ বিপুল উদ্যম আর উদ্দীপনায় লেলিন বিপ্লবী কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। মার্কসদের গভীর জ্ঞান এবং রুশিয় পরিস্থিতে তা প্রয়োগের দক্ষতা,শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে অবিচল থাকায় পিটার্সবুর্গে মার্কসবাদী স্বীকৃত নেতা হয়ে উঠেছিলেন। শ্রমিক শ্রেণীর সঙ্গে কৃষক শ্রনীর মৈত্রীর মহান ধারনাটা লেলিন বিকশিত করে তোলেন। এই ধারণাটা লেলিন সারা জীবন প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত করে গেছেন এবং পরবর্তীতে বহু বছর ধরে তা কার্যকরী করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। বার বার তিনি ব্যাখ্যা করে বরেছেন যে বিছিন্ন সব মার্কসবাদী চক্রকে ঐক্যব্দ্ধ হয়ে হতে হবে এক একটি বিপ্লবী পার্টি যা নেতৃত্ব করবে শ্রমিক আন্দোলনের জন্য। নারোদবাদীরা লেরিনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মাঠে নামে এবং তার ণীতিকে ভিত্তিহীন বলে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নানা প্রচারনা ও ব্যাখ্যা চালাতে থাকে। শুধু নারোদবাদীরাই নয় তথাকথিত ‘বৈধ মার্কসবাদী’রাও তার বিপক্ষে মাঠে নামে। এই বৈধ মার্কবাদীরা ছিল বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবি, তারা সরকার কতৃক অনুমদিত পত্র-পত্রিকায় লিখত এবং মার্কসবাদকে বুর্জোয়াদের স্বার্থের সংগে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করত। লেলিন এই নারোদবাদী ও ‘বৈধ মার্কসবাদী’দের বিরুদ্ধে মেহণতী মানুষদের বোঝাতে থাকেন এবং বড় বড় কল-কারখানার অগ্রণী ম্যমিকদের সংগে যোগাযোগ স্থাপন করে বিপ্লবী মার্সকবাদী পার্টি গড়ে তোলার জন্য। এক্ষেত্রে লেলিনের পুস্তিকা আর প্রচার পত্রগুলি বড় ভূমিকা রেখেছে। পিটার্সবুর্গে মার্কসবাদীরা প্রচার চালাত ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে। ১৮৯৫ সালের বসন্তে পিটার্সবুর্গের মার্কসবাদীদের সিদ্ধান্তে লেলিন ইউরোপীয় শ্রমিক আন্দোলন গ্রুপ ‘শ্রমমুক্তি’র সাথে যোগাযোগ করেন এবং ইউরোপীয় আন্দোলনের সাথে পরিচিত হবার জন্য তিনি সুইজাল্যান্ড, জার্মানী ও ফরাসী ভ্যমন করেন। প্যারিসের মার্কসের জামাতা, বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলনের বিখ্যাত কর্মী পল লাফার্গের সাথে তাঁর পরিচয় হয়। এসময় লেলিন মারকসবাদের এমন সব গ্রন্থের সাথে পরিচিত হন যা রাশিয়ায় পাওয়া সম্ভব ছিল না আর তা অধ্যায়নে তিনি যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন। বিদেশ থেকে ফিরে লেলিন পিটার্সবুর্গে না গিয়ে যান ভিলনো, মস্কো, অরেখভো-জুয়েভো এবং সেখানকার স্থাণীয় সোশ্যাল-ডেমোক্রাটদের (বিপ্লবী মারকসবাদীরা তখন এই নামে পরিচিত ছিল) সংগে যোগাযোগ করেন। এবং এদের সবাইকে পিটার্সবুর্গে সম্মলিত করেন একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরীর প্রয়াসে। অবশেষে এই ছোট দলগুলি মিরে একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরী করেন আর এ সংগঠনের নাম হয় ‘শ্রমিক শ্রনীর মুক্তি সংগ্রাম সংঘ’।এ সংগঠনে ছিলেন ক্রজিজানভস্কি, ভানায়েভ, জাপরজেতস, এল. মার্তভ, পত্রেসভ, রাদ চেংগো, স্তাকর্ভ ও ন.ক. স্ক্রুপাস্কায়া সহ প্রমুখ ব্যাক্তি বর্গ। ১৮৯৬ সালে গ্রীষ্মে ‘সংগ্রাম সংঘ’এর নেতৃত্বে পিটার্সবুর্গে সুতাকল শ্রমিকদের একটি বিখ্যাত ধর্মঘট সংঘটিত হয়, তাতে যোগ দেয় ত্রিশ হাজারেরও বেশী নরনারী শ্রমিক। এ ক্রিয়াকলাপের ফলে জার সরকার ডিসেম্বরের গোড়ায় লেলিন সহ দলের অধিকাংশ নেতা কর্মীদের গ্রপ্তার করেন। ভ্লাদিমিরকে রাখা হয়েছিল পিটার্সবুর্গ জেলে। একটি মাত্র কক্ষে উনি কাটান ১৪ মাসেরও বেশী সময়। কিন্তু জেলে থাকা অবস্থায়ও তিনি তাঁর বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকেননি। বাইরের কমরেডদের তিনি চিঠি, প্রচার-পত্র, পুস্তিকা লিখে পাঠাতেন এবং তাদের সক্রীয় ও একীভূত থাকতে সাহায্য করতেন। জেলে বসেই লেলিন মার্কসবাদী পার্টির খসড়া কর্মসূচি তৈরী করতেন। জার সরকার ১৮৯৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী লেলিনকে ৩বছরের জন্য নির্বসিত করেলেন সাইবেরিয়ায়। এখানে থাকা ভ্লাদিমির ইলিচের পক্ষে সহজ ছিলনা। রেল লাইন থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে এক অজ সাইবেরীয় গ্রাম। তবু তিনি ভেঙ্গে পড়েননি। প্রত্যক্ষ বিপ্লবী কর্মকান্ড থেকে বিছিন্ন হলেও তিনি পুরোদমে পড়াশোনা ও লেখালেখি শুরু করেন। সাইবেরীয় গ্রামের জীবন যাত্রা ও কৃষকদের অবস্থা মন দিয়ে দেখেন। তিনি তাদের বিভিন্ন কাজে সহয়তা করতেন, বিশেষ করে বিভিন্ন মামলা মকোদ্দমায় পরামর্শ দিতেন। এক বছর পর লেলিনের বাগদত্তা বধূ নাদেজদা কনস্তানতিনোভনা ক্রুপস্কায়া জার সরকার কতৃক সাইবেরিয়ার উফা গুর্বেনিয়ায় নির্বাসিত হন। কিন্তু লেলিনের স্ত্রী হিসাবে তিনি শশুনস্কয়েতে থাকার অনুমতি পান। স্ত্রী হিসাবে ক্রুপস্কায়া ছিলেন লেলিনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও বিশ্বস্ত সহায়ক। লেলিন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রাশিয়ায় পুজিঁবাদের বিকাশ’ শীর্ষক বইখানি এই নির্বাসিত জীবনেই লেখে শেষ করেন। ১৮৯৯ সালে তা প্রকাশিত হয়। বইটি মূলত কার্ল মাকসের ‘পুজিঁ’ বইটির সরাসরি পূর্বানুসরণ। ১৯০০ সালের ২৯ জানুয়ারী নির্বাসনের মেয়াদ শেষ হলে ভ্লাদিমির সস্ত্রীক শশুনস্কয়ে ত্যাগ করেন। প্রচন্ড শীত আর লম্বাপথ প্রায় ৩২০ কিলোমিটার ঘোড়ায় চেপে দিন-রাত সমানে চললেন_ বিপ্লবী কাজে তাড়াতাড়ি যোগ দেবার নিমিত্তে। ১৯১৪ সালের প্রথমার্ধে রাশিয়ায় বিপ্লবী আন্দোলন ক্রমেই ব্যাপক হয়ে উঠল এবং পনের লক্ষ শ্রমিক ধর্মঘট করে। অর্থনৈতিক ধর্মঘটের সাথে রাজনৈতিক ধর্মঘট জড়িয়ে পড়েছিল। এই ১৯১৪ সালেরই গ্রীষ্মে দুই সম্রাজ্যবাদী দলের মধ্যে শুরু হয় প্রচন্ড লড়াই। এদের এক দলে জার্মানি ও অস্ট্রো হাঙ্গেরি এবং অন্যদলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া। দুই দলই অনুসরণ করছিল রাজ্যগ্রাসী নীতি। পরে যুদ্ধে যোগ দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অন্যান্য রাষ্ট্র। যুদ্ধ হয়ে উঠল বিশ্ব যুদ্ধ। জনগনের জন্য এটা ছিল নির্মম এক দুর্বিসহ পরিণতি। যুদ্ধের শুরুতে ভ্লাদিমির ছিলেন পেরোনিন এবং প্রথম থেকেই যুদ্ধের বিরোধিতা করেন ফলে অস্ট্রিয় সরকার তাঁকে মিথ্যা রিপোর্টে গ্রপ্তার করান জার সরকারের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে। লেলিনের সমর্থনে পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার প্রগতিশীর সমাজ কর্মীরা প্রমান করলেন যে অভিযোগটি মিথ্যা ও অর্থহীন, ফলে অস্ট্রিয়ার সামরিক কর্তারা লেলিনকে দুই সপ্তাহ্ পর ছেড়ে (মুক্তি) দিতে বাধ্য হন। মুক্তির পর লেলিন সুইজারল্যান্ড চলে যান তার বিপ্লবী সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য। সমাজবাদী লুটেরাদের বিরুদ্ধে জনগনের আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধকে লেলিন ন্যায় যুদ্ধ হিসাবে গণ্য করেন কারন পিতৃভূমি রক্ষার জন্য শ্রমিকরা যুদ্ধে নামেন। প্রায় দশ বছর পর ১৯১৭ সালের ৩ এপ্রিল রাতে ভ্লাদিমির রাশিয়ায় পৌছাতে সক্ষম হন। সেখানে বিপ্লবের দ্রুত বিকাশ দেখে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সামনে লেলিন শ্রমিক শ্রেণী ও গরীব কৃষকদের ক্ষমতা দখলের জন্য ব্যবহারিক প্রস্তুতির কর্তব্য, সশস্ত্র অভ্যুত্থানের জন্য তৈরী হবার জন্য জোড় দিলেন। ভ্লাদিমির লেলিণ বুজোর্য়া সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থান, প্রলেতারীয় একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার আহবান জানালে তা সমর্থন করে দেশে ২৫০টির বেশী সোভিয়েত। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি লেলিন ফিনল্যান্ডে আত্মগোপন করে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন কিন্তু তিনি বিভিন্ন চিঠি ও প্রচার পত্রের মাধ্যমে তার কমিটিকে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহনে করতে উৎসাহিত করেন এবং রাষ্ট্রের মঙ্গলের স্বার্থে তা করা উচিত বলে অভিহিত করেন। ১লা অক্টোবরের পত্রে লেলিন আর বিলম্ব না করে অভ্যুত্থানে এগুতে বলেন। ২৪ অক্টোবর রাত্রে পেত্রগ্রাদের ফাঁকা রাস্তাগুলোয় যখন কসাক ও ইউঙ্কার বাহিণীগুলো টহল দিচ্ছিল তখন জীবনের ঝুকি নিয়ে লেলিন স্মোলনি আসেন এবং অভ্যুত্থান পরিচালনায় সরাসরি নেতৃত্ব দেন। লেলিন ও বলশেভিক পার্টির নেতৃত্ব শ্রমিক, লালরক্ষী, সৈন্য ও নাবিকদের আত্মৎসর্গী সংগ্রম ও বিরত্বের ফলে বিশ্ব ইতিহাসে এক মহাসাফল্যের ঘটনা ঘটে_জমিদার ও পুঁজিবাদ ধ্বংস হয়। ২৫ অক্টোবর সকাল ১০টায় পেত্রগ্রাদ সোভিয়েতের অধীনস্থ সামরিক বিপ্লব কমিটি লেলিনের বিবৃতি প্রকাশ করে জনগনের নিকট ঘোষনা দিল যে, সাময়িক সরকারের হাতে, যে আদর্শের জন্য জনগন লড়ছিল তা সফল হয়েছে। এদিন স্বন্ধ্যাতেই স্মোলনিতে শুরু হয় দ্বিতীয় সোভিয়েত কংগ্রেস। এতে নানা অঞ্চল থেকে ৬৫০ জন প্রতিনিধি অংশ গ্রহন করেন, যার মধ্যে ৪০০জনই বলশেভিক। ২৬ অক্টোবর কংগ্রেসে লেলিনের বক্তৃতা উল্লাসে অভিনন্দিত করে প্রতিনিধিরা। কংগ্রেসের প্রতিনিধি এ.এ.আন্দ্রেয়েভ তাঁর স্মৃতিকথায় বলেছেন, ‘লেলিন যেই মঞ্চে এলেন অমনি সমস্ত সভাকক্ষ উঠে এগিয়ে যায় লেলিনের দিকে। অবিরাম করতালি আর লেলিন জিন্দাবাম ধ্বনিতে মুখরিত প্রঙ্গনে তিনি বহুক্ষন বক্তৃতা শুরু করতে পারেননি।’ এভাবেই যাত্রা শুরু হয় সমাজ তান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সোভিয়েত জনগন যে বিরাট রূপান্তর সাধন করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে মার্কস-লেলিনবাদের বিজয়। মার্কস, এঙ্গেলস ও লেলিন মতবাদ এত প্রান শক্তিতে ভরপুর কারন_ সর্বাধিক বিপ্লবী শ্রেণী, শ্রমিক শ্রেনীর মূল স্বার্থ প্রকাশ করে তা, সমস্ত মেহনতী জনগন ও নিপীরিত জাতির জীবন ও সংগ্রামের মূল প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়নই প্রথম দেশ যেখানে জনগনের স্বাস্থ্যের দায়ভার নিয়েছে রাষ্ট্র, সমস্ত নাগরিকদের জন্য ব্যবস্থা করেছে বিনামূল্য চিকিত্সা সেবা। সোভিয়েত ইউনিয়নের মেহনতীদের আছে কর্ম, অবৈতনিক শিক্ষা, চিকিত্সা, অবসর ও বার্ধক্য পেনশনের অধিকার। সোভিয়েত ইউনিয়নে নারীদের পরিপূর্ণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমতা নিশ্চিত হয়েছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে মেয়েরা সমানে চলে পুরুষের সংগে, তারা আছে বীর কমিউনিজমের প্রথম সারিতে। ১৯২৩ সালের মার্চের গোড়ায় লেলিনের শাররীক অবস্থা খুবই খরাপ হয়ে আসে। মে মাসে উনি গোর্কিতে ফিরে যান। অবশেষে ১৯২৪ সালের ২১শে জানুয়ারী সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনের ফলে মারা যান লেলিন। আর সেই সাথে অবসান হয় একটি বিপ্লবী চরিত্রের, এক জন রাষ্ট্র নায়কের, এক মেহণতীদের নেতার। ২৩ জানুয়ারী ভ্লাদিমির ইলিচ লেলিনের শবাধার গরইক থেকে মস্কোয় এনে ইউনিয়ন ভবনের সভা কক্ষে রাখা হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল স্তরের নর-নারীরা স্তম্ভ কক্ষের ভিতর দিয়ে প্রদক্ষিন করে মহান লেলিনকে তাদের শেষ শ্রদ্ধা জানান। ২৭ জানুয়ারী বিকাল চারটায় লেলিনের সমাধি অনুষ্ঠান শুরু হয়। ক্রমলিনের দেয়ালের কাছে, বিশেষভাবে নির্মিত ম্যুজোলিয়ামে স্থাপিত হয় লেলিনের দেহ। তখন সমস্ত কাজ পাঁচ মিনিটের জন্য বন্ধ ঘোষনা জানালো আন্তর্জাতিক প্রলেতারিয়েত। থেমে গেল মোটর, ট্রেন, বন্ধ রইল কলকারখানার কাজ। Developed by 

No comments:

Post a Comment