eBongBD.com

"All about things for easy life"
This is a website about solution of our daily problems. You can get here all Problem's solution.

Breaking

পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়।

Saturday, September 16, 2017

দ্বিজেন শর্মা: আলো হাতে চলিয়াছ আঁধারের যাত্রী

 দ্বিজেন শর্মা
 দ্বিজেন শর্মা
তিনি চলে গেলেন অমৃতধামে। গতকাল শুক্রবার ভোররাতে। চলে গেলেন আপন বৈশিষ্ট্যময় নিগূঢ় ভালোবাসায় সিক্ত করে। বয়স নিয়ে তিনি ভাবিত ছিলেন না কখনো। মৃত্যু যেন ছিল তাঁর পায়ের ভৃত্য। তিনি দ্বিজেন শর্মা, একজন কবি-বিজ্ঞানী। এক ধ্যানমগ্ন অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা কেমন করে বয়সনির্বিশেষে সবার দ্বিজেনদা হয়ে উঠেছিলেন, সে মন্ত্র শুধু তাঁরই জানা ছিল। যাকেই দেখতেন, উচ্ছ্বসিত দ্বিজেনদা মুহূর্তে তাকে আপন করে নিতেন। যেন কতকালের চেনা মানুষ, কি শিশু, কি যুবক; কি নারী, কি পুরুষ। তাঁর ধমনিতে সংগীতের সুর, যেন কোন মহালোকের অর্চনায় সদা অনুরণিত সে সংগীত। কি পৌরাণিক, কি আধুনিক—সর্বকালের প্রকৃতি দর্শনে তাঁর আগ্রহ অপার। দেখেছেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মানবমন, সমাজ ও উদ্ভিদরাজ্যের নিগূঢ় রহস্য আর তা সাহিত্যের স্বর্ণজালে মুড়ে উপহার দিয়েছেন নতুন, অনেকটা প্রকৃতিবিমুখ প্রজন্মকে।

নতুন প্রজন্মকে অবশ্য প্রকৃতিবিমুখ বলা অন্যায়। দ্বিজেন শর্মা আমাদের শিখিয়েছেন, আমরাই প্রকৃতিকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি নতুন প্রজন্ম থেকে। ভোক্তাসমাজে আমরাই তরুণদের শেখাই ভোগের নানা উপাচার, ভোগবাদের রঙিন জগৎকে আমরাই তাদের সামনে তুলে ধরি আরও মোহনীয়, দুর্দমনীয় ভোগাসক্তি জাগিয়ে জাগিয়ে। সেই তরুণ, যাকে আমরাই অহর্নিশ বিচ্ছিন্ন করি প্রকৃতি, মানব, সমাজ থেকে, সেই তরুণসমাজকেই তিনি পরম আদরে কোলে তুলে নিয়ে প্রকৃতিরাজ্যে নিয়ে চলেন, সব শারীরিক বাধা তুচ্ছ করে। আর বাজিয়ে চলেন প্রকৃতির অমৃত সংগীত। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনি, দেখি, আবিষ্কার করি নতুন এক পৃথিবী। অতি চেনা পৃথিবীটা তেমন করে যেন একান্ত আপন, আরও চেনা হয়ে যায়।

দ্বিজেন শর্মা আমাদের নতুন করে প্রকৃতি পাঠ শিখিয়েছেন, বিজ্ঞানকে করে তুলেছেন নিটোল এক সাহিত্য, এক মহাকাব্য। সে মহাকাব্য পাঠ হয়ে ওঠে অনিবার্য, হয়ে ওঠে শিল্প ও বিজ্ঞানের এক অভূতদৃষ্ট সংশ্লেষ। ১৯৭০-এর দশকে তাঁর ‘শ্যামলী নিসর্গ’ হয়ে উঠেছিল আমাদের প্রাণের রাজধানী ঢাকা শহরকে নতুন করে আবিষ্কার করা, সেই সঙ্গে গোটা বাংলাকেও। প্রথম আলোয় এক অখ্যাত আমিরুলের এক অর্বাচীন লেখার ওপর নিজস্ব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ২০০৬ সালে তিনি আমাকেও উদ্বুদ্ধ করেন প্রকৃতি নিয়ে লিখতে। তারপর তাঁর একান্ত প্রশ্রয়ে লেখা হয়ে যায় ‘অরণ্যের পদাবলী’, ‘বাঙলার ফল আর পারুলের সন্ধানে’। বাংলার চিরপ্রিয় ফুল পারুলের সন্ধান কি শেষ হলো? যেকোনো প্রয়োজনে যখনই তাঁর কাছে গিয়েছি, তিনি পরম স্নেহে গ্রহণ করেছেন, উৎসাহিত করেছেন, নতুন নতুন কাজের দিশা দিয়েছেন।

রমনায় তরুপল্লবের বৃক্ষ পরিচয় অনুষ্ঠানে তিনিই থাকতেন আমাদের মধ্যমণি হয়ে, অনর্গল দিয়ে যেতেন নিসর্গের পাঠ।

আজ তিনি চলে গেলেন, বাংলার নিসর্গকে কে আর তাঁর মতো করে সাধারণের কাছে পরিচয় করিয়ে দেবেন? কিন্তু আমরা জানি, এই নশ্বর পৃথিবীতে আমাদের মতো অর্বাচীন মানুষগুলোকে স্বর্গ থেকেও দ্বিজেন শর্মা পথ দেখাবেন, জ্বলে রইবেন আলো হতে চলা এক আঁধারের যাত্রী।

No comments:

Post a Comment