মানবদেহে কোন আর্টিফিশিয়াল উপকরণ প্রতিস্থাপনের বিষয়টিকে মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় প্রোস্থেসিস (Prosthesis) বলা হয়। হৃৎপিন্ডে যে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয় তাকে পেসমেকার বলে। কিন্তু আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি এই পেসমেকার সম্পর্কে?
পেসমেকার হচ্ছে এমন এক ধরনের ডিভাইস যেটি অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। তাহলে প্রশ্ন চলে আসে অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন কি? মানুষের স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন মিনিটে ৬০-৯০ টি। যদি স্বাভাবিকের চেয়ে স্পন্দন কম হয়, তাহলে হৃদপিন্ডে স্বাভাবিক রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, অর্থাৎ তখন শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত প্রবাহের জন্য হৃদপিন্ড কাজ করতে সক্ষম থাকে না।
হৃদস্পন্দন যখন কমে যায় তখন এটাকে স্বাভাবিক করার জন্য পেসমেকার ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মজার বিষয় হল পেসমেকার এর যিনি আবিষ্কারক, Wilson Greatbatch (১৯১৯-২০১১), তিনি জানতেনই না যে কি আবিষ্কার হতে চলেছে। দুর্ঘটনাবশত এই আবিষ্কার পরবর্তীতে সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল।
Wilson Greatbatch মূলত এমন একটি সমাধান খুঁজছিলেন যা ব্লক হার্টকে কার্যক্ষম করে তুলতে পারে। Cornell University তে থাকাকালীন, পশুদের হার্ট বিট এর শব্দ রেকর্ড করার জন্য তিনি একটি Oscillator আবিষ্কার করেছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ভুলবশত একটি ট্রাঞ্জিস্টর ঐ যন্ত্রে স্থাপন করেন। তিনি যখন বিষয়টি বুঝতে পারলেন, তখনো উৎসুক ছিলেন এরপর কি ঘটে তা দেখার জন্য। কিন্তু কোন ভাবেই প্রত্যাশা করেছিলেন না যে তার ‘ভুল’ কাজটি বৈপ্লবিক আবিষ্কারের জন্ম দিবে। তিনি যখন সুইচটি অন করলেন তখন চেনা কিছু শব্দের সাথে মিল খুঁজে পান। এটা এমন একটি ধরন মেনে চলছে যা মানুষের হৃদকম্পনের সাথে মিলে যায়।
পরবর্তীতে এর নাম দেয়া হল পেসমেকার। তিনি এই যন্ত্র পশুদের দেহে স্থাপন করে আরো গভীর পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষু চালান। সর্বশেষ ১৯৬০ সালে এটি মানুষের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।
No comments:
Post a Comment