প্যারাগ্লাইডিং হচ্ছে পায়ের সাহায্যে উড়ার গ্লাইডার । এ ধরনের যন্ত্রকে এভিয়েশনের ভাষায় বলা হয় “ফুট লঞ্চড ” । প্যারাগ্লাইডিং আবিষ্কার হয় ১৯৬০ সালে । প্যারাগ্লাইডিং ব্যাপারটি মুলত আবিষ্কার হয় প্যারাসুট থেকে । সে সময়ে মিলিটারিতে প্যারাসুট-এর মাধ্যমে আকাশ থেকে নিরাপদে অবতরনের প্রশিক্ষন দেয়া হত প্যারাট্রুপারদের । সে সময়ে প্রতিবার আকাশ থেকে ঝাপ দেয়াটা ছিলো অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার । তাই দ্রুত প্রশিক্ষনের জন্য আকাশের বদলে মাটিতে -এর ব্যাবস্থা করা হয়েছিলো । ট্রাকের মধ্যে প্যারাসুট একটি রশি দিয়ে বেধে রাখা হত , এরপর ট্রাকটি ফুল স্পিডে চললে প্যারাসুট যখন ফুলে উঠত তখন রশিটি ছেড়ে দেয়া হত । এরপর ট্রুপাররা মাটিতে নেমে আসতো । এর মধ্যে অনেক প্যারাসুটিস্ট আকাশে থেকে মাটিতে নামার চেয়ে আকাশে কত বেশি সময় থাকা যায় তা নিয়ে বেশ আগ্রহী উঠে। তাই তারা এরপর উচু পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে নিচের দিকে চলে যাওইয়া রাস্তা দিয়ে দৌড়াত প্যারাসুট খোলা অবস্থায় । এভাবে কিছুক্ষন তারা আকাশে ভেসে থাকতো পারতো। আর পরিক্ষা করে দেখতো কত সময় আকাশে থাকা যায় । এইভাবেই শুরু হলো প্যারাগ্লাইডিং । তবে প্যারাসুটের আকার এবং ডিজাইনের কারনে বেশি সময় ধরে আকাশে থাকা যেত না ।
১৯৬৪ সালে ram-air parachute আবিষ্কারের ফলে প্যারাগ্লাইডিং -এ আসে নতুন মাত্রা । কারন এই টাইপের প্যারাসুট বাতাসে খুব দ্রুত খুলে যায় আর সাধারন প্যারাসুট থেকেও আরো অনেক বাতাস আটকে রাখতে পারে।
১৯৭৮ সালে ফ্রান্সের তিন বন্ধু তাদের মোডিফায়েড প্যারাসুট দিয়ে পাহাডের পাশ থেকে ঝাপ দিয়ে মাটিতে অবতরন করে । আর তখন থেকেই মুলত আধুনিক প্যারাগ্লাইডিং -এর সুচনা হয় ।
প্যারাগ্লাইডারে যে অংশ গুলো থাকে তন্মাধ্যে অন্যতম হলো পাখনা যেটাকে কেনোপি বা সেইলও বলা হয়ে থাকে । অনেক গুলো কর্ড -এর লাইন এবং রাইসার থাকে । থাকে স্পিডবার । এর পাখনাগুলো সাধারনত দুই লেয়ারে থাকে । আর লেয়ারগুলোতে অনেকগুলো সেল থাকে । যেগুলো বাতাস কে ধরে রাখে । বিশেষজ্ঞদের মতে এক একটি পাখনা প্রায় ৩০০ ঘন্টা অর্থাৎ প্রায় ৪ বছরেও ঠিক থাকে। আর থাকে একটি হারনেস । পাইলট চাইলে হারনেসে ঠেস দিয়ে চালাতে পারেন বা দাড়িয়েও চালাতে পারেন । ইদানিংকালের হারনেস গুলো বসার মত করে তৈরী করা হয় । প্যারাগ্লাইডার গুলো বহনযোগ্য । পুরো সেটটি একটি র্যাকস্যাকে রেখে দেয়া যায় ।
প্যারাগ্লাইডিং করতে হলে একজন পাইলটকে সেটাকে চালানোর জ্ঞানের পাশাপাশি সেই মানের বাতাসের কাজের ধরন সম্পর্কেও জানতে হবে। প্যারাগ্লাইডিং -এর কাজ মুলত বাতাসের উপর নির্ভর করে। প্রচন্ড বাতাস যখন কেনোপিকে ফুলিয়ে তোলে তখন উচু যায়গা থেকে শুন্যে লাফ দিতে হয় । এরপর বাতাস পাইলট সহ কেনোপিকে নিয়ে উড়তে থাকে। কেনোপি এবং পাইলটের হারনেসের সাথে লেগে থাকা কর্ড গুলো দিয়ে পুরো গ্লাইডারকে ডানে বামে নিয়ন্ত্রন করতে হয়।
প্যারাগ্লাইডিং তুলনামুলকভাবে হ্যাংগ্লাইডিং -এর চেয়েও সোজা । কিন্তু এতে হ্যাংগ্লাইডিং-এর চেয়েও বেশি স্টেমিনা থাকতে হয়। আর ভালোমত রপ্ত করতে না পারলে যে কোনো সময়ে ঘটতে পারে ভয়ংকর দূর্ঘটনা।
No comments:
Post a Comment