কার্বনেরই একটি ভিন্ন রূপ গ্রাফাইট। পেনসিলের সীস হিসেবে এই গ্রাফাইট ব্যবহূত হয়। এটি বিদ্যুৎ পরিবাহী। এই গ্রাফাইটকেই আরেকটু পরিবর্তন করে তৈরি করা হয়েছে গ্রাফিন।
গ্রাফিনের অণু অনেক ছোট,খুবই স্বচ্ছ আর একই সঙ্গে এর কাঠামো খুব শক্তিশালী।গ্রাফিন সবচেয়ে প্রচলিত ত্রিমাত্রিক বস্তু থেকে পৃথক।অন্তর্নিহিত গ্রাফিন একটি অর্ধ - ধাতু বা শূন্য-ফাঁক অর্ধপরিবাহী।
গ্রাফিনে কার্বন-কার্বন বন্ডের দৈর্ঘ্য প্রায় ০.১৪২ ন্যানোমিটার।গ্রাফিন শীট একটি ০.৩৩৫ ন্যানোমিটার-এর আন্তঃতলিয় ফাঁক, যার মানে তিন মিলিয়ন শীটের একটি স্ট্যাক মাত্র এক মিলিমিটার পুরু হবে ।গ্রাফিন হল মৌলিক কিছু গ্রাফাইট, অঙ্গার, কার্বন ন্যানোটিউব এবং ফুলারিন সহ কার্বন অ্যালোট্রোপ এর গঠনগত উপাদান।এছাড়াও অনির্দিষ্টকালের বৃহৎ সুগন্ধযুক্ত অণু, সমতল পলিসাইক্লিক সুগন্ধযুক্ত হাইড্রোকার্বন এর পরিবারের সীমিত কেস হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
গ্রাফিনের একটা ষড়ভুজ আকৃতির কোষে দুটো কার্বন পরমাণু থাকে যার ক্ষেত্রফল মাত্র ০.০৫২ বর্গ ন্যানোমিটার। ঘনত্ব ০.৭৭ মি.গ্রাম/বর্গ মি.।
গ্রাফিন এত পাতলা যে এটা মাত্র ২.৩% আলো শোষণ করে। এত পাতলা, এত স্বচ্ছ, অথচ গ্রাফিন ইস্পাতের চেয়েও কমপক্ষে একশ’গুণ শক্ত। গ্রাফিনের ভার সইবার ক্ষমতা ৪২.০ নিউটন/মিটার, অথচ ইস্পাতের ভার সইবার ক্ষমতা মাত্র ০.৪০ নিউটন/মিটার।
গ্রাফিনের প্রথম গুণ হলো, এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সব মৌল ও যৌগের মধ্যে গ্রাফিনই সবচেয়ে ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী। ফলে কম্পিউটারে সিলিকন চিপের বদলে গ্রাফিন ব্যবহার শুরু হলে কম্পিউটারের গতি কমপক্ষে শতগুণ বৃদ্ধি পাবে।
ভবিষ্যতে মহাকাশ, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, অর্থনীতি ও পরিসংখ্যানের বিভিন্ন গবেষণায় এই উচ্চগতির কম্পিউটার ব্যবহার বিজ্ঞানীদের কাজকে আরও সহজ করে দেবে।
গ্রাফিন খুব ভালো তাপ পরিবাহী। ফলে কম্পিউটার সহজেই তাপ ছেড়ে দিতে পারবে,মানে এটার তাপ পরিবাহিতা অনেক বেশি।যতই গরম হোক,তাপ ছেড়ে ঠান্ডা হতে সময় কম নেয় তাই কম্পিউটারে সিলিকন চিপ ও অন্যান্য উপাদানের জায়গায় গ্রাফিন ব্যবহূত হলে কম্পিউটার ঠান্ডা থাকবে।
আবার সবচেয়ে সূক্ষ্মহওয়ায় মনিটরের রেজ্যুলেশন হবে এখনকার চেয়ে অনেক বেশি। পাশাপাশি ভবিষ্যতের স্পর্শকাতর পর্দা (টাচস্ক্রিন) তৈরির প্রধান উপাদান হবে গ্রাফিন।
আইবিএমের প্রকৌশলীরা সিলিকন ট্রানজিস্টর বাদ দিয়ে গ্রাফিন ট্রানজিস্টর উৎপাদন শুরু করেছেন। এ ছাড়া স্যামসাং তৈরি করছে প্রিন্টেড গ্রাফিন ইলেকট্রোড, যা হয়তো আর কিছুদিন পরই চলে আসবে মোবাইল ফোনের টাচ্ স্ক্রিনে।স্যামসাং ইতোমধ্যে তা বাজারযাত করার ঘোষণা দিয়েছে।
নোকিয়াও গ্রাফিন প্রযুক্তির দিকে হাত বাড়িয়েছে কারন এটি বিশ্বাস করে গ্রাফিন তথ্যপ্রযুক্তির ভবিষ্যত বদলে দেবে।
পৃথিবীর সবচেয়ে সূক্ষ্মতম বস্তু গ্রাফিন ব্যবহারের এমন এক পদ্ধতি বৃটিশ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যার ফলে অত্যন্ত উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া সম্ভব।
গবেষকরা বলছেন, গ্রাফিনের ইলেক্ট্রনের উচ্চ সঞ্চরণশীলতা ও বেগের কারণে এ দিয়ে তৈরি ডিভাইস অকল্পনীয় দ্রুত গতির হবে। ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বর্তমানে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ব্যবহৃত কেবলের চেয়ে এ ধরনের ডিভাইস ১০ বা শতগুণ (সম্ভাব্য) দ্রুততর হতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হলো এটি খুব বেশি সময় কার্যকর থাকে না।
এই তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রকৌশলে ভবিষ্যতের প্রধান উপাদান গ্রাফিন আবিষ্কারের জন্য ২০১০ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন রাশিয়ার অধ্যাপক আন্দেই কন্সতান্তিনোভিচ গেইম ও অধ্যাপক কন্সতান্তিন সের্গিয়েভিচ নোভাসেলোভ।
No comments:
Post a Comment