eBongBD.com

"All about things for easy life"
This is a website about solution of our daily problems. You can get here all Problem's solution.

Breaking

পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়।

Sunday, December 17, 2017

বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে ভুয়া চাকরির পরীক্ষা!

উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে প্রবেশ করে ‘ভুয়া চাকরি’র মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছে একটি প্রতারক চক্রের সদস্যরা। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নকল ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সিল-স্বাক্ষর জাল করে ওই ওয়েবসাইটে চাকরিপ্রার্থীদের ফল প্রকাশ করেছে। এর আগে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও জানিয়ে দেয়া হয়েছিল মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি। শুধু তাই নয়, মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগপত্রও অফিস আদেশ আকারে দেয়া হয়েছে নকল ওয়েবসাইটে। এভাবে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।
একদিনের রিমান্ডে থাকা ওই চক্রের দুই সদস্য তোফায়েল আহমেদ (৩৫) এবং আবদুর রাজ্জাক শেখ ওরফে রিপনকে (৩৬) জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে এসব তথ্য। পাশাপাশি রাজধানীর মতিঝিল থানা পুলিশের নিজস্ব তদন্ত এবং ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্যেও মিলেছে এর সত্যতা। মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন, ১৩ ডিসেম্বর (বুধবার) ওই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ওইদিনই একটি মামলা করা হয়। এরপর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে পরিচালিত ওই ওয়েবসাইটটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন মতিঝিল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সফিকুল ইসলাম আকন্দ।
জানতে চাইলে মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম রব্বানী বলেন, মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হয়। আদালত তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চাকরি দেয়ার কথা বলে একজন প্রার্থীর কাছ থেকে নেয়া চার লাখ টাকার একটি চেকও উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, তোফায়েল ও রিপনের বড় ভাইখ্যাত রেজাউল ইসলাম টিটু এবং অজ্ঞাত আরও দু’জনকে গ্রেফতার করতে জোরালো অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে খাবার হোটেল চালানোর ছদ্মবেশে তোফায়েল চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। রিপন এক সময় কেমিক্যালের ব্যবসা করত। রেজাউল ইসলাম টিটুর বাড়ি শরীয়তপুরে। তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের কাছে ২৫ ডিসেম্বরের (যেদিন মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়) ভিডিও ফুটেজ চাওয়া হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ পেলে অজ্ঞাত দু’জনকে চিহ্নিত করা সহজ হবে। এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ থাকতে পারে বলেও ধারণা করছেন এ তদন্ত কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর শাহা শুক্রবার বিকালে টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই। আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে- আসলে ঘটনাটি কী?’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কর্মকর্তার স্বাক্ষর এবং সিল জাল করা হয়েছে, ওই কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ও ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি। তার নাম মোশারফ হোসেন খান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসার পরপরই তা গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে জানিয়েছি। শুধু অফিসার পদেই নয়। পিওন, ঝাড়ুদার পদেও নিয়োগ দিতে আমার নামে টাকা উঠানো হচ্ছে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা যে ওয়েবসাইটে পরীক্ষার ফলাফল বা অফিস আদেশ আপলোড করছে সেই ওয়েবসাইটটি ভুয়া। জনসাধারণকে এ বিষয়ে সচেতন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো না কোনো লোক এর সঙ্গে জড়িত আছে। না হলে বাইরে থেকে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে ডেপুটি গভর্নরের ওয়েটিং রুমে কীভাবে ভাইভা পরীক্ষা নেয়? ওই চক্রটিকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।
একজন ভুক্তভোগীর কথা : ওই চক্রের খপ্পরে পড়েছেন রাজধানীর খিলগাঁও উত্তর গোড়ানের অমিতোষ চক্রবর্তী। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি ২০০৮ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। সেপ্টেম্বর মাসে ১৫৪ মতিঝিলে অবস্থিত একটি খাবারের দোকানে তোফায়েলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তোফায়েল ‘খাবার ঘর’ নামের ওই দোকানের মালিক। আমার এবং আমার স্ত্রীকে বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার পদে ৩৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১২ লাখ টাকা দাবি করে তোফায়েল ও তার সহযোগী রিপন। আমার কাছে এত টাকা না থাকায় আমি তাদের বলি, আগে আমাকে চাকরি দেন। আমি চাকরি পাওয়ার পর আমার স্ত্রীর চাকরির ব্যাপারে চিন্তা করব। সে অনুযায়ী তারা নগদ এক লাখ এক হাজার ৫০০ টাকা নেয়। বাকি টাকার ডকুমেন্ট হিসেবে তারা আমার মার্কেন্টাইল ব্যাংক মগবাজার শাখার অনুকূলে চার লাখ টাকার চেক নেন। তোফায়েলের দোকানের কর্মচারী সুজন ফরাজি ওই চেকের সাক্ষী হয়।’
অমিতোষ চক্রবর্তী জানান, ২৪ অক্টোবর তার মোবাইল ফোনে মৌখিক পরীক্ষার বার্তা আসে। ২৫ অক্টোবর তোফায়েল এবং রিপন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে নিয়ে যায়। এ সময় অমিতোষের সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিল। লিফটের তিনতলায় একজন ডেপুটি গভর্নরের নেমপ্লেটসংবলিত কক্ষের ওয়েটিং রুমে তাদের দু’জনকে বসতে বলা হয়। এ সময় লম্বা চুলওয়ালা এক ব্যক্তি নিজেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব ড. রেজা বলে পরিচয় দেয়। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে ওয়েটিং রুমে আরেকজন প্রবেশ করে। ওই সময় ড. রেজা ওই ব্যক্তিকে অমিতোষের স্ত্রীকে তার বোন এবং অমিতোষকে তার ভগ্নিপতি পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘তাদের দু’জনের চাকরির খুব প্রয়োজন।’ কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে আরও একজন সেখানে প্রবেশ করে। এরপর তথাকথিত ড. রেজা ওই রুম থেকে বেরিয়ে পড়লে পদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী দু’জন অমিতোষের ভাইভা নেন। তারা অমিতোষের কাছে জানতে চান- বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর কে? ড. ফরাসউদ্দিন কততম গভর্নর? এছাড়া আরও দু-একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে।’
অতিতোষ চক্রবর্তী বলেন, ‘গত ১২ ডিসেম্বর আমার মোবাইলে চাকরি কনফার্মেশন সংক্রান্ত এসএমএস আসে। এ সংক্রান্ত অফিস অর্ডারটি দেখতে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট লিংক govrecruit.org//Bangladesh Bank (বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন নিয়োগসংক্রান্ত প্রকৃত ওয়েবসাইট হল erecruitment.bd.org.bd যা অমিতোষের জানা ছিল না) লগইন করতে বলে। আমি ওয়েবসাইট থেকে আমার চাকরি সংক্রান্ত অফিস আদেশটি লাউনলোড করে প্রিন্ট করি। ওইদিনই তোফায়েল ও রিপন আমাকে মতিঝিলে অবস্থিত তোফায়েলের খাবারের দোকানে আসতে বলে। আমি সেখানে গেলে তারা আমার কাছে অবশিষ্ট ৪ লাখ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তারা আমাকে আটকিয়ে রেখে বলেন, আপনি যে চেক দিয়েছেন সেটা ডিজঅর্নার হয়েছে। এখনই চার লাখ টাকা দিয়ে নিয়োগপত্র নেন। না হলে আপনার কাছ থেকে কীভাবে টাকা নিতে হবে তা আমরা ভালোভাবেই জানি। পরে আমার এক আত্মীয়ের মধ্যস্থতায় পরদিন ১৩ ডিসেম্বর ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করার আশ্বাসে সেখান থেকে মুক্তি পাই। পরদিন ওই অফিস আদেশটি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলে জানতে পারি সেটা ভুয়া। এরপর বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ তোফায়েল ও রিপনকে গ্রেফতার করে।

No comments:

Post a Comment