eBongBD.com

"All about things for easy life"
This is a website about solution of our daily problems. You can get here all Problem's solution.

Breaking

পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়।

Friday, May 4, 2018

০৪. কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য


আমাদের দেশে বিভিন্ন গৃহপালিত পাখির মধ্যে কবুতর সর্বাধিক জনপ্রিয়। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর পালন করা হয়- এর বাহ্যিক সৌন্দর্য্যগত দিকগুলোর কারণে। প্রাচীনকালে কবুতর পালন করা হতো চিঠি আদান প্রদানের কাজে। শোনা যায় প্রাচীনকালে রাজা বাদশাহ তাঁদের বিভিন্ন ধরনের বার্তা প্রেবণের জন্য বেছে নিতেন কবুতরকে। এছাড়া, সারা পৃথিবী জুড়ে কবুতরকে ধরা হয় শান্তির দূত হিসেবে। এই কারণে,বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে কবুতরকে খাঁচামুক্ত করে উদ্বোধন করা হয়।

সবচেয়ে বড় কথা, কবুতর পালন করার জন্য অতিরিক্ত বা বাহুল্য কোন খরচ হয় না। কবুতরকে সহজেই পোষ মানানো যায়। বাড়ির যেকোন কোণ বা আঙিনা অথবা বাড়ির ছাদ কিংবা কার্নিশের মত ছোট বা অল্প জায়গাতে ও কবুতর পালন করা যায়। এমনকি ছাদের সাথে ঝুড়ি ঝুলিয়ে ও কবুতর পালন করা যায়।এই কারণে, শহরে কী গ্রামে অনেক বাড়িতেই কবুতর পালন করা যায়।

কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক বিশেষজ্ঞরা বলেন, কবুতরের মাংসে সাধারণ অন্যান্য পাখির মাংসের চাইতে প্রোটিনের পরিমান বেশি। ফলে আমিষের পাশাপাশি প্রটিনের বাড়তি চাহিদা পূবণের জন্য ও কবুতরের মাংস খাওয়া হয়ে থাকে। বানিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে অনেকেই অল্প সময়ে এটাকে লাভ জনক ব্যবসা হিসেবে দাঁড়া করাতে পেরেছেন। কবুতর সাধারণভাবে জোড়ায় বেঁধে বাস করে। প্রতি জোড়ায় একটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী কবুতর থাকে। এরা ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। যতদিন বেঁচে থাকে_ ততদিন এরা ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা প্রজনন করে থাকে।ডিম পাড়ার পর স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরই পর্যায়ক্রমে উক্ত ডিমে তা দিয়ে থাকে। কবুতরের কোন জোড়া হঠাৎ ভেঙে গেলে সেই জোড়া তৈরি করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়।নতুন জোড়া তৈরি করার জন্য স্ত্রী ও পুরুষ কবুতরকে একঘরে কিছুদিন রাখতে হয়।

কবুতর পালনের বিভিন্ন সুবিধা সমুহ
কবুতর পালন করলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধার পরিমাণ বেশি। পরবর্তীতে কবুতর পালনের বিভিন্ন সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো।

(১) সাধারনত একটি ভাল জতের কবুতর বছরে ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম হয়ে থাকে। এই ডিম গুলোর প্রায় প্রতিটি থেকেই বাচ্চা পাওয়া যায়। এই বাচ্চা পরবর্তী ৪ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়।

(২) গৃহপালিত অন্যান্য পাখির মধ্যে কবুতরকে পোষ মানানো বা লালন করা যায়।

(৩) খুবই অল্প জায়গায় কবুতর লালন পালন করা যায়। এমনকি ঝোলানো ঝুড়িতেও কবুতর পালন করা সম্ভব। লালন পালনে কম জায়গা লাগে বলে কবুতর পোষায় খরচের পরিমাণ একেবারেই কম।

(৪) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর নিজের খাবার নিজেই খুঁজে নিয়ে থাকে। এই কারণে কবুতরের খাবারের জন্য বাড়তি যত্ন বা খরচ খুব একটা হয় না বললেই চলে।

(৫) কবুতরের থাকার জায়গার জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙিনা, বা ছাদের ওপর কাঠের ঘর তৈরি করে অনায়াসেই কবুতর পালন করা যায়। প্রমাণ সাইজের ঝুড়িতে করে ও কবুতর পালন করা যায়।

(৬) একটি পূণাঙ্গ বয়সের কবুতর ডিম দেবার উপযোগী হতে ৫ থেকে ৬ মাস মসয় লাগে। এই অল্প সময় অতিক্রান্ত হবার পর থেকেই কবুতর বছরে প্রায় ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম। ২৬ থেকে ২৮ দিন বয়সেই কবুতরের বাচ্চা খাবার উপযোগী হয়ে থাকে বা এই বাচ্চাকে বাজারজাত করা যায়। সাধারণত কবুতরের বাচ্চা রুগীর পথ্য হিসেবেও অনেকে বেছে নেন।

(৭) কবুতরের ডিম থেকে মাত্র ১৮ দিনেই বাচ্চা সাধারণ নিয়মে ফুটে থাকে। এই বাচ্চা আবার পরবর্তী ৫ থেকে ৬ মাস পরে নিজেরাই ডিম প্রদান শুরু করে।ফলে কবুতর বংশ পরম্পরায় প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই বাড়াতে থাকে নিজেদের সংখ্যা।

(৮) কবুতরের মাংস প্রচুর চাহিদা রয়েছে।কারণ, কবুতরের মাংস খুবই সুস্বাদু ও বলকারক। তাছাড়া, বাজারের অন্যান্য মাংসের যোগান থেকে কবুতর কিছুটা সস্তাতে ও পাওয়া যায়।

একটি খুব ভালো প্রজাতির কবুতর লালন করলে পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে সেই জোড়া থেকে কয়েক জোড়া কবুতর পাওয়া খুব বেশি আর্শ্চযজনক বিষয় নয়। এই কবুতরকে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ, কবুতর লালন-পালনের খরচ খুব একটা নেই। এমনকি কবুতরের রোগ ব্যাধি কম হয়। কবুতরের থাকার জায়গা নির্বাচনে ও অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় না। এই কারণে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কবুতর পালন অবশ্যই লাভজনক।

ধারাবাহিক ভাবে কবুতর তার বংশবৃদ্ধি করে বলে অনেকেই আজকাল কবুতর পালনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।মুরগির মাংসের বিকল্প হিসেবে কিংবা অতিথি পাখির বিকল্প হিসেবে অনেকেই কবুতরের মাংস বেছে নিয়ে থাকেন।
লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট।

কবুতর প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা: বিস্তারিত তথ্য
ভূমিকা
ইতিহাস থেকে জানা যায় বহু আদিকাল থেকে মানুষ কবুতর পালন করে আসছে। সে সময় মানুষ দেব-দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য কবুতর উৎসর্গ করতো। এছাড়াও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সংবাদ প্রেরণ, চিত্ত বিনোদন ও সুস্বাদু মাংসের জন্য কবুতরের বহুল ব্যবহার ছিল। বর্তমানে আমাদের দেশেও প্রধানত মাংস ও চিত্ত বিনোদনের জন্য কবুতর পালন করা হয়ে থাকে।

কবুতর প্রতিপালনের প্রয়োজনীয়তা
কবুতর প্রতিপালন এখন শুধু শখ ও বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা এখন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। কবুতর বাড়ি ও পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা ছাড়াও অল্প খরচে এবং অল্প ঝামেলায় প্রতিপালন করা যায়। কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক হিসেবে সদ্যরোগমুক্ত ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। রোগীর পথ্য হিসেবে কবুতরের মাংস ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালন করছেন।

কবুতর প্রতিপালনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব :
বাংলাদেশে সাধারণত কবুতরকে মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু, বলকারক ও রোগীর পথ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় যা সাধারণ মানুষের নিকট অতি প্রিয়।

১। ন্যুনতম ব্যয়ে প্রতিপালন:
হাঁস-মুরগীর তুলনায় কবুতর পালন মোটেও ব্যয়বহুল নয়। স্বল্প পুঁজি, অল্প খরচ ও সীমিত স্থানে অতি সহজে কবুতর পালন করা যায়।
২। কবুতরের ঘর নির্মাণে ন্যুনতম ব্যয়:
গ্রামাঞ্চলে অত্যন্ত সাধারণ পদ্ধতিতে পারিবারিকভাবে কবুতর প্রতিপালন করা যায়। বাড়ির চালের বাড়তি অংশে কাঠ বা বাঁশের ঘর বা খোপের মতো করে দিলে এখানে আপনাআপনি কবুতর এসে বাসা বাঁধে এবং বংশবৃদ্ধি করে। এতে তেমন খরচ নেই বললেই চলে। এভাবে কবুতর প্রতিপালন করে অনেক পরিবার যেমন তাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে তেমনি অন্যভাবে নিয়মিত কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে কবুতর প্রতিপালনেও সীমিত ব্যয় হয়। এদের ঘরের অধিকাংশই কাঠ ও বাঁশের তৈরি হয়ে থাকে। সর্বোপরি এজন্য খুব কম জায়গার প্রয়োজন হয়।
৩। ডিম ফোটার হার:
কবুতরের ক্ষেত্রে ডিম ফোটার হার ৯৮%, যা মুরগির ক্ষেত্রে প্রায়শ ৮০-৮৫% হয়ে থাকে। এদের ডিম ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর বা এজাতীয় কোনো ব্যয়বহুল যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না।
জেনারেশন বিরতি
স্বল্প বয়সে এদের পুনরুৎপাদন শুরু হয়। তাই একজন উৎপাদনকারী অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হতে পারে। একটি কবুতর সাধারণত বছরে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৬-১৮ দিন সময় লাগে।

কবুতরের জাত
বহুবিচিত্র ধরনের নানা জাতের কবুতর রয়েছে। আমাদের দেশে ২০ টিও অধিক জাতের কবুতর আছে বলে জানা যায়। নিম্নে প্রধান কয়েকটি জাত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১। গোলা
এই জাতের কবুতরের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। আমাদের দেশে এ জাতের কবুতর প্রচুর দেখা যায় এবং মাংসের জন্য এটার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঘরের আশেপাশে খোপ নির্মাণ করলে এরা আপনাআপনি এখানে এসে বসবাস করে। এদের বর্ণ বিভিন্ন সেডযুক্ত ধূসর এবং বারড-ব্লু রংয়ের। এদের চোখের আইরিস গাঢ় লাল বর্ণের এবং পায়ের রং লাল বর্ণের হয়।
২। গোলী
গোলা জাতের কবুতর থেকে গোলী জাতের কবুতর ভিন্ন প্রকৃতির। এ জাতের কবুতর পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের কলকাতায় বেশ জনপ্রিয় ছিল। এদের লেজের নীচে পাখার পালক থাকে। ঠোঁট ছোট হয় এবং পায়ে লোম থাকে না। এদের বর্ণ সাদার মধ্যে বিভিন্ন ছোপযুক্ত।
৩। টাম্বলার
এসব জাতের কবুতর আকাশে ডিগবাজী খায় বলে এদের টাম্বলার বলে। আমাদের দশে এই জাতটি গিরিবাজ নামে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের দেশে এদের যথেষ্ট কদর রয়েছে।
৪। লোটান
লোটন কবুতরকে রোলিং (rolling) কবুতরও বলা হয়। গিরিবাজ কবুতর যেমন শূন্যের উপর ডিগবাজী খায়, তেমন লোটন কবুতর মাটির উপর ডিগবাজী খায়। সাদা বর্ণের এই কবুতরের ঘুরানো ঝুঁটি রয়েছে। এদের চোখ গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং পা লোমযুক্ত।
৫। লাহোরী
আমাদের দেশে এই কবুতরটি শিরাজী কবুতর হিসেবে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল লাহোর। এদের চোখের চারদিক থেকে শুরু করে গলার সম্মুখভাগ, বুক, পেট, নিতম্ব, পা ও লেজের পালক সম্পূর্ণ সাদা হয় এবং মাথা থেকে শুরু করে গলার পিছন দিক এবং পাখা রঙ্গীন হয়। সাধারণত কালো, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী ইত্যাদি বর্ণের কবুতর দেখা যায়।

৬। কিং
কিং জাতের কবুতরের মধ্যে হোয়াইট কিং এবং সিলভার কিং আমেরিকাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিং জাতের কবুতর প্রদর্শনী এবং স্কোয়াব (ঝয়ঁধন বাচ্চা) উৎপাদনে ব্যবহার হয়। এছাড়াও রয়েছে ব্লু রেড এবং ইয়েলো কিং। এই জাতের কবুতর মূলত প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয়।
৭। ফ্যানটেল
এটি অতি প্রাচীন জাতের কবুতর। ফ্যানটেল জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে। এ জাতের কবুতর লেজের পালক পাখার মত মেলে দিতে পারে বলে এদেরকে ফ্যানটেল বলা হয়। এদের রং মূলত সাদা তবে কালো, নীল ও হলুদ বর্ণের ফ্যানটেল সৃষ্টিও সম্ভব হয়েছে। এদের লেজের পালক বড় হয় ও উপরের দিকে থাকে। পা পালক দ্বারা আবৃত থাকে। এ জাতের কবুতর প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয় এবং দেশ বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
৮। জ্যাকোবিন
এই কবুতরের মাথার পালক ঘাড় অবধি ছড়ানো থাকে যা বিশেষ ধরনের মস্তকাবরণের মত দেখায়। এদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে এদের আদি জন্মস্থান ভারত বলেই ধারণা করা হয়। এই কবুতর সাধারণত সাদা, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী বর্ণের হয়। এদের দেহ বেশ লম্বাটে। চোখ মুক্তার মত সাদা হয়।
৯। মুকি
এ জাতের কবুতরের গলা রাজহাঁসের মত পিছন দিকে বাঁকানো এবং কম্পমান অবস্থায় থাকে। মুকি জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে বলে ধারণা করা হয়। এদের উভয় ডানার তিনটি উড়বার উপযোগী পালক সাদা হয় যা অন্য কোনো কবুতরে দেখা যায় না। এ জাতের কবুতরের মাথা সাদা, বুক খুব একটা চওড়া নয় তবে উঁচু ও বেশ কিছুটা সামনের দিকে বাড়ানো থাকে। সাদা, কালো এবং নীল বর্ণের এই কবুতরের পায়ে লোম থাকে না।

কবুতরের প্রজনন, ডিম উৎপাদন ও ডিম ফুটানো
হাঁস-মুরগির মতো যে কোনো মর্দা কবুতর মাদী কবুতরের সাথে হজে জোড়া বাঁধে না। এদেরকে এক সাথে এক সপ্তাহ রাখলে জোড়া বাঁধে। মুরগীর ন্যায় কবুতরের জননতন্ত্রে ডিম উৎপন্ন হয়। তবে ডিম্বাশয়ে একসাথে সাধারণত মাত্র দু'টি ফলিকুল তৈরি হয়।
এ কারণে প্রতিটি মাদী কবুতর দু'টি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার ৪০-৪৪ ঘন্টা পূর্বে ডিম্ব স্খলন হয় এবং ডিম পাড়ার কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা পূর্বে তা নিষিক্ত হয়। অর্থাৎ যে ১৬-২০ ঘন্টা পর্যন্ত ডিম ডিম্বনালীতে থাকে সে সময়ে তা নিষিক্ত হয়ে থাকে।
ডিম পাড়ার পর থেকে মর্দা ও মাদী উভয় কবুতর পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দিতে শুরু করে। মাদী কবুতর প্রায় বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ডিমে তা দেয় এবং বাকী সময়টুকু অর্থাৎ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মর্দা কবুতর তা দিয়ে থাকে। তা দেয়ার পঞ্চম দিনেই ডিম পরীক্ষা করে উর্বর বা অনুর্বর ডিম চেনা যায়। বাতির সামনে ধরলে উর্বর ডিমের ভিতর রক্তনালী দেখা যায়। কিন্তু অনুর্বর ডিমের ক্ষেত্রে ডিমের ভিতর স্বচ্ছ দেখাবে। সাধারণত ডিম পাড়ার ১৭-১৮ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এভাবে একটি মাদী কবুতর সাধারণত ১২ মাসে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে। জন্মের প্রথম দিন থেকে ২৬ দিন বয়স পর্যন্ত কবুতরের বাচ্চার ক্রমবর্ধমান অবস্থা থাকে। প্রথমে সারা দেহ হলুদ পাতলা বর্ণের লোম দ্বারা আবৃত থাকে।

এই সময় নাক ও কানের ছিদ্র বেশ বড় দেখায়। প্রায় ৪-৫ দিন পর বাচ্চার চোখ খোলে বা ফুটে। পনের দিনে সমস্ত শরীর পালকে ছেয়ে যায়। প্রায় ১৯-২০ দিনে দু'টো ডানা এবং লেজ পূর্ণতা লাভ করে ও ঠোঁট স্বাভাবিক হয়। এই ভাবে ২৬-২৮ দিনে কবুতরের বাচ্চা পূর্ণতা লাভ করে। কবুতর সাধারণত ২০-৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

পিজিয়ন মিল্ক
কবুতরের খাদ্যথলিতে পিজিয়ন মিল্ক উৎপাদিত হয়। এই খাদ্য থলিতে দু'টি অংশ বা লোব (ষড়নব) থাকে। ডিমে তা দিতে বসার প্রায় অষ্টমদিন থেকে "পিজিয়ন মিল্ক" উৎপাদনের প্রস্তুতি শুরু হয়। এন্টিরিত্তর পিটুইটারী গ্রন্থির প্রোল্যাকটিন (Prolactin) হরমোনের প্রভাবে এই ' পিজিয়ন মিল্ক' উৎপন্ন হয়। এ কারণে কবুতর ছানার জন্য কোনো বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। কারণ প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত ছানা তার মাতা-পিতার কাছ থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত খাবার পেয়ে থাকে। এটিকে পিজিয়ন মিল্ক বা কবুতরের দুধ বলা হয়। পিজিয়ন মিল্ক হলো পৌষ্টিক স্তরের কোষের মধ্যে চর্বির গুটিকা (globules of fat) যা পিতা মাতা উভয়ের খাদ্য থলিতে যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ হয়। পিজিয়ন মিল্ক কবুতর ছানার জন্য একটি আদর্শ খাবার। এতে ৭০% পানি, ১৭.৫% আমিষ, ১০% চর্বি এবং ২.৫% বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকে। মাতাপিতা উভয় কবুতরের খাদ্য থলির অভ্যন্তরীণ আবরণ থেকে পিজিয়ন মিল্ক উৎপন্ন হয়। কবুতরের জিহ্বা লম্বা ও সরু। মুখ গহ্বরের নীচের অংশ বেশ প্রশস্ত হয় যা ছানাকে খাওয়ানোর উপযোগী। মাতা ও পিতা কবুতর ছানার মুখের মধ্যে মুখ প্রবেশ করিয়ে খাবার সরাসরি অন্ননালীতে পৌছে দেয়।

কবুতরের ঘর
আমাদের দেশে বিশেষত গ্রামে টিন বা খড়ের চালা ঘরের কার্ণিশে মাটির হাড়ি অথবা টিন বেঁধে রেখে কবুতর পালনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া কাঠের তৈরি ছোট ছোট খোপ তৈরি করেও কবুতর পালা হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হলে, কয়েক জোড়া কবুতরের ঘর করে এক জোড়া কবুতর পালন করলে কয়েক দিনের মধ্যে বাকী ঘরগুলোতে নতুন জোড়া কবুতর এসে বাসা বাঁধে। কবুতর পোষা খুব সহজ এবং লাভজনক তা বলাই বাহুল্য। অল্প-পরিসরে যা বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালনের জন্য অবশ্যই সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। নিম্নে কবুতরের ঘর বা খোপ তৈরির বিশেষ ব্যবস্থাসমূহ আলোচনা করা হলো।

স্থান নির্বাচনঃ কবুতরের খামারের জন্য উঁচু ও শুষ্ক সমতল ভূমি থাকা প্রয়োজন।
ঘরের উচ্চতাঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, বেজী ইত্যাদি যেন কবুতরের ঘর নাগালে না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘর উঁচু করতে হয়। এ উদ্দেশ্যে কাঠ বা বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার উপর ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে।
ঘরের পরিসরঃ প্রতি এক জোড়া কবুতরের জন্য একটি ঘর থাকা প্রয়োজন। এক জোড়া কবুতর যাতে ঘরের ভিতর স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে ফিরতে পারে তা লক্ষ্য রেখে ঘর নির্মাণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থাঃ কবুতরের ঘর বা খোপ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন সেখানে পোকা-মাকড়, কৃমি, জীবাণু ইত্যাদির উপদ্রব কম থাকে এবং ঘর সহজেই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা যায়।
সূর্যালোকঃ ঘরে যাতে সূর্যের পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ সূর্যের আলো যেমন পাখির দেহে ভিটামিন-ডি সৃষ্টিতে সাহায্যে করে তেমনি পরিবেশও জীবাণুমুক্ত রাখে।
বায়ু চলাচলঃ কবুতরের ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ দূষিত বাতাস বা পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাবে পাখির স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে।

কবুতরের খাদ্য
হাঁস-মুরগির ন্যায় কবুতরের খাদ্যে শ্বেতসার, চর্বি, আমিষ, খনিজ ও ভিটামিন প্রভৃতি থাকা প্রয়োজন। কবুতর তার দেহের প্রয়োজন এবং আকার অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। প্রতিটি কবুতর দৈনিক প্রায় ৩০-৫০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করে থাকে। কবুতর প্রধানত গম, মটর, খেশারী, ভুট্টা, সরিষা, যব, চাল, ধান, কলাই ইত্যাদি শস্যদানা খেয়ে থাকে। মুক্ত অবস্থায় পালিত কবুতরের জন্য সকাল-বিকাল মাথা পিছু আধ মুঠ শস্যদানা নির্দিষ্ট পাত্রে

খাদ্য উপাদান::::::::::পরিমাণ (%)
ভুট্টা:::::::৩৫
মটর:::::::২০
গম::::::::৩০
ঝিনুকের গুঁড়া/চুনাপাথর চূর্ণ/অস্থিচূর্ণ::::০৭
ভিটামিন/এমাইনো এসিড প্রিমিক্::::::০৭
লবণ:::::::০১

মোট = ১০০

রেখে দিলে প্রয়োজন মত তারা খেতে পারবে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর উৎপাদনের জন্য নিম্নে প্রদত্ত খাদ্য মিশ্রণ ব্যবহার করা উত্তম।

কবুতরের খাদ্য তালিকাঃ
এই সাথে কবুতরের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। এক পাত্রে কবুতরের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ও অন্য পাত্রে প্রয়োজন মত পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি রাখতে হবে।
কবুতরের শারীরবৃত্তিক তথ্যাদি
* দেহের তাপমাত্রা = ৩৮.৮-৪০০ সে
* দৈহিক ওজন =
    (ক) হালকা জাতঃ ৪০০-৪৫০ গ্রাম
    (খ) ভারী জাতঃ ৪৫০-৫০০ গ্রাম
* পানি পান =
    (ক) শীতকালঃ ৩০-৬০ মিলি প্রতিদিন
    (খ) গ্রীষ্মকালঃ ৬০-১০০ মিলি প্রতিদিন
* খাদ্য গ্রহণ = ৩০-৬০ গ্রাম প্রতিদিন (গড়)
* ডিম ফুটানোর সময়কাল = ১৭-১৮ দিন।
কবুতরের গুরুত্বপূর্ণ রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

(১)
রোগের নামঃ
সালমেনেলোসিস/ প্যারাটইফোসিস

কারণঃ
সালমোনেলা টাইফিমিউরিয়াম

লক্ষণঃ
শ্লেষ্মাযুক্ত আঠালো, ফেনা ও দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া দেখা দেয়। দেহ ক্রমাগত শুকিয়ে যায়। ভারসাম্য হীনতা ও পক্ষাঘাত পরিলক্ষিত হয়।

চিকিৎসাঃ
এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে।

প্রতিরোধঃ
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
২। টিকা প্রদান করতে হবে।

(২)
রোগের নামঃ

কারণঃ

লক্ষণঃ

চিকিৎসাঃ

প্রতিরোধঃ

(৩)
রোগের নামঃ

কারণঃ

লক্ষণঃ

চিকিৎসাঃ

প্রতিরোধঃ

(৪)
রোগের নামঃ

কারণঃ

লক্ষণঃ

চিকিৎসাঃ

প্রতিরোধঃ

(৫)

রোগের নামঃ

কারণঃ

লক্ষণঃ

চিকিৎসাঃ

প্রতিরোধঃ

http://www.agrobangla.com/36-domesticanimalnbird.html

No comments:

Post a Comment