অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সাধের স্মার্টফোনটি ঠিকঠাক চার্জ হচ্ছে না। এমনিতেই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের মেজর একটি ড্রব্যাক হচ্ছে এর ব্যাটারি লাইফ, এর উপর যদি ঠিকঠাক চার্জ না হয়, তাহলে বিরক্ত লাগা খুবই স্বাভাবিক! তাই যদি হঠাৎ করে খেয়াল করেন আপনার ডিভাইসটি ঠিকঠাক চার্জ হচ্ছে না তবে আপনি যে কাজগুলো করে দেখতে পারেন সেগুলো আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে।
কেন স্মার্টফোনে চার্জের সমস্যা হয়?
মূলত এই সমস্যাটি হতে পারে অনেক কারণেই, আবার সমস্যার ধরণও হতে পারে ভিন্ন। এক্ষেত্রে সমস্যার দুটি রকমফের থাকতে পারে-
একেবারেই চার্জ হচ্ছে না এবং
চার্জ হচ্ছে কিন্তু খুবই ধীর গতিতে
সমস্যা যে ধরণেরই হোক, সমস্যাটি খুবই কমন। আর এই সমস্যাটি নিয়ে কাস্টমার কেয়ার বা সার্ভিস পয়েন্টে যাবার আগে আমরাও কিছু পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখতে পারি।
ইউএসবি পোর্ট ফিক্স করুন
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যা হয় কানেক্টরের অংশে। ইউএসবি পোর্ট এবং মাইক্রো ইউএসবির মেটালিক সার্ফেসে কিছু সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে কানেক্টর এবং চার্জিং পোর্ট ঠিকমত কানেক্টেড হতে পারেনা। তাই আপনি আপনার স্মার্টফোনটিকে বন্ধ করে ব্যাটারি খুলে একটি টুথপিকের মাথায় হালকা করে তুলো পেঁচিয়ে চার্জিং পোর্টটি পরিষ্কার করে দেখতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি পোর্টে সমস্যা থাকলে সহজেই ফিক্স করে দেয়।
ক্যাবল পরিবর্তন করুন
অনেক সময়ই চার্জিং ক্যাবলের মাঝে সমস্যার কারণে এই সমস্যাটি দেখা যায়। আর তারের অভ্যন্তরে সমস্যা হবার কারণে আমরা সহজে ধরতেও পারি না। তাই, সার্ভিস সেন্টারে ছোটার আগেই যদি আমরা কানেক্টর পরিবর্তন করে দেখি তাহলে আশা করি কাজ হতেও পারে। আর এক্ষেত্রে ক্যাবল পরিবর্তন করে দেখা তো বেশ সহজ, আমাদের সবার বাসায়ই একের অধিক এক্সট্রা ক্যাবল থাকেই।
সেফটি ফার্স্ট
আপনার স্মার্টফোনটি কখনোই পানি আছে আশেপাশে এমন স্থানে চার্জে রাখবেন না, এমনকি অতিরিক্ত গরম এরকম স্থানে তো নয়ই। এমনিতেই বর্তমানের পাওয়ারফুল সব ডিভাইসগুলো বেশ ভালোই গরম হয় এবং অতিরিক্ত গরমে ডিভাইস পার্মানেন্টলি ড্যামেজ হতে পারে। স্মার্টফোন চার্জে দিয়ে ব্যবহার না করাই সর্বোত্তম। অনেক খবরেই দেখা গিয়েছে যে ডিভাইস চার্জে রাখা অবস্থায় ব্যবহারের কারণে ব্যবহারকারী এবং ডিভাইস- উভয়েরই ক্ষতি হয়েছে।
অনেকেই স্মার্টফোনের সাথে আসা চার্জারটি নষ্ট হয়ে গেলে বাজার থেকে কম দামে নিম্ন মানের চার্জার কিনে আনেন। আপনারা হয়তো সেই একটি সময়ের জন্য কিছুটা টাকা ঠিকই বাঁচালেন কিন্তু এটি আপনার দামি ডিভাইসটির বেশ ভালোই ক্ষতি করতে পারে। তাই সামান্য টাকা বাঁচিয়ে নিজের কাছে বড় ধরণের ক্ষতি টেনে আনার কি সত্যিই দরকার আছে?
ব্যাটারি রিপ্লেস করুন
ব্যাটারি একটা সময় গিয়ে তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। একটি স্মার্টফোনের ব্যাটারির বয়স বেশি হয়ে গেলে সেটির চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। যত বেশি আপনি আপনার স্মার্টফোনটির ব্যাটারির চার্জ খালি করবেন আর পুনরায় চার্জ করবেন তত দ্রুত ব্যাটারিটির লাইফটাইম শেষ হয়ে যাবে।
পুরাতন ব্যাটারিতে মাঝে মাঝে ফুলে যায় আবার মাঝে মাঝে এগুলোতে লিক সমস্যা দেখা যায়। আপনি নিজেই সহজে ব্যাটারিটি খুলে ইন্সপেক্ট করলেই সমস্যাগুলো ধরতে পারবেন। এ ধরণের ব্যাটারি যত দ্রুত সম্ভব রিপ্লেস করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
যাই হোক, আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি যদি ৬ মাসের মধ্যে খারাপ হয়ে যায় তবে এটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারি এবং এর জন্য আপনি ওয়ারেন্টি ক্লেইম করতে পারবেন কিন্তু এর বয়স যদি ২-৩ বছর হয় তাহলে এটি ধীরে ধীরে কম কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মূল কথা হচ্ছে, ব্যাটারিজনিত সমস্যাই যদি সমস্যার মূল কারণ হয়ে থাকে তবে অতিসত্বর ব্যাটারি রিপ্লেস করা উচিৎ আপনার।
পাওয়ার আউটলেট বা চার্জিং সোর্স লক্ষ্য করুন
আপনি ওয়াল চার্জার দিয়ে চার্জ করতে করতে যদি হঠাৎ করে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের ইউএসবি পোর্ট দিয়ে স্মার্টফোন চার্জ করা শুরু করেন তবে এখানে স্মার্টফোনের কোন দোষ নেই। কেননা, ওয়াল চার্জার কমপক্ষে ৫ ওয়াট সাপ্লাই করে থাকে আপনার স্মার্টফোনটি চার্জ করতে যেখানে ইউএসবি ২.০ এবং ইউএসবি ৩ পোর্ট সাপ্লাই করে যথাক্রমে ২.৫ ওয়াট এবং ৪.৫ ওয়াট। তাহলে এক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থাতেই আপনার স্মার্টফোন ধীর গতিতে চার্জ হবে। এখানে আপনার শুধু চার্জিং সোর্স পাল্টালেই হবে।
আপটেড অথবা রোলব্যাক
মাঝে মাঝে অ্যান্ড্রয়েডের ভার্সনে সমস্যা হতে পারে। যেমন অ্যান্ড্রয়েড ৫ এ কিটক্যাট থেকে হিউজ ব্যাটারি ড্রেইন লক্ষ্য করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে আপনি আপনার অপারেটিং সিস্টেমটি আপডেট বা রোলব্যাক করে দেখতে পারেন। ভার্সনে কোন প্রকার বাগ থাকলে তা নতুন অথবা পূর্বের ভার্সন ব্যবহারের ফলে সহজেই ঠিক হয়ে যাবে।
বন্ধ করে চার্জ দিয়ে দেখুন
সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাবার আগে আপনি আপনার স্মার্টফোনটি বন্ধ করে চার্জ দিয়ে দেখতে পারেন। এখানে লক্ষ্য রাখবেন বন্ধ অবস্থাতে পূর্বের মত চার্জ হচ্ছে কি না। যদি না হয় তবে অবশ্যই সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া উচিৎ, আর যদি হয় তবে আপনার স্মার্টফোনে ইনস্টল করা অ্যাপগুলো ইন্সপেক্ট করুন। কিছু কিছু ম্যালওয়ার যুক্ত অ্যাপ আছে যা অতিরিক্ত পারমিশন ব্যবহার তথা অতিরিক্ত ফিচার ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং থেকে স্বাভাবিক চার্জে বাধা দেয়। যদি অনেক অ্যাপ ইন্সটল করে থাকেন এবং খুঁজে পাওয়া আপনার জন্য কষ্টকর হয় তবে ফ্যাক্টরি রিসেট করে দেখতে পারেন।
ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করুন
অনেক সময় কাস্টম রম ইনস্টল করার ফলে বা স্টক ফার্মওয়্যার ফ্ল্যাশ দেয়ার ফলে ব্যাটারির স্টেট ক্লিয়ার হয়ে যায় এবং সিস্টেম ব্যাটারির ভুল রিডিং প্রদর্শন করে। ফলে, ব্যাটারি ড্রেইন দ্রুত এক্ষেত্রে ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করলেই আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
উপরের পদ্ধতিগুলো আমরা সহজেই অ্যাপ্লাই করতে পারি কাস্টমার কেয়ারে নিয়ে যাবার আগেই। তবে, আবারও বলছি যদি আপনি দেখেন আপনার ব্যাটারিটি কোন ভাবে লিক হয়ে গিয়েছে বা ফুলে উঠেছে তবে উপরের পদ্ধতিগুলো ট্রাই না করে হয় ওয়ারেন্টি থাকলে ওয়ারেন্টি ক্লেইম করুন নতুবা সরাসরি কাস্টমার কেয়ারে নিয়ে যান। কেননা সব সময়ের জন্যেই 'সেফটি ফার্স্ট'!
No comments:
Post a Comment