মানুষের মস্তিষ্কে কিভাবে কোন কিছুর স্মৃতি তৈরি হয় এবং সেই স্মৃতি কিভাবে সংরক্ষিত থাকে সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বিস্ময়কর কিছু নতুন তথ্য আবিষ্কার করেছেন।
বিজ্ঞানীরা দেখার চেষ্টা করেছেন, আসলেই মাথার ভেতরে কি ঘটে এবং তারা যা জানতে পেরেছেন তাতে তারা নিজেরাই বিস্মিত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানি বিজ্ঞানীদের একটি দল দেখেছেন, আমাদের মস্তিষ্ক একই সাথে একটি ঘটনার দুটো স্মৃতি তৈরি করে। তার একটি এখনকার জন্যে আর অন্যটি সারা জীবনের জন্যে।
হিপোক্যাম্পাস হচ্ছে স্বল্পমেয়াদী স্মৃতির জন্যে আর দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে কর্টেক্সে।
আগে ধারণা করা হতো, সব স্মৃতিই শুরু হয় স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি হিসেবে। তারপর সেগুলো ধীরে ধীরে পরিণত হয় দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই আবিষ্কার বিস্ময়কর। তবে সুন্দর এবং বিশ্বাসযোগ্য।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যেসব অভিজ্ঞতা হয় সেগুলো মনে রাখতে খুবই জোরালো ভূমিকা রাখে মস্তিষ্কের দুটো অংশই। হিপোক্যাম্পাস হচ্ছে স্বল্পমেয়াদী স্মৃতির জন্যে আর দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে কর্টেক্সে।
১৯৫০ এর দশকে হেনরি মোলাইসন কেসের পর এই ধারণাটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলো।
অপারেশনের সময় তার মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। ফলে তার আর নতুন স্মৃতি তৈরি হতো না। কিন্তু অপারেশনের আগে যেসব স্মৃতি ছিলো সেগুলো রয়ে গিয়েছিলো।
স্মৃতি সম্পর্কে বর্তমান ধারণা হচ্ছে- প্রথমে এটি তৈরি হয় হিপোক্যাম্পাসে। পরে সেটি স্থানান্তরিত হয় কর্টেক্সে যেখানে এটি সংরক্ষিত হয় দীর্ঘ সময়ের জন্যে।
কিন্তু রিকেন- এমআইটি সেন্টার ফর নিউরাল সার্কিট জেনেটিক্সের একদল বিজ্ঞানী বলছেন, বিষয়টি ঠিক এরকম নয়।
ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, মানুষের মস্তিষ্কেও বিষয়টি ঠিক একইভাবে কাজ করে।
ইঁদুরের মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট কিছু স্মৃতির ওপর বিজ্ঞানীরা নজর রেখেছেন।
মস্তিষ্কের ভেতরে একে অপরের সাথে যুক্ত কিছু কোষে এসব স্মৃতি গুচ্ছ গুচ্ছভাবে তৈরি।
তারপর বিজ্ঞানীরা আলোক রশ্মির সাহায্যে মস্তিষ্কের একেকটি নিউরনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
এভাবে তারা স্মৃতিকে কখনো জাগিয়ে তুলেছেন আবার কখনও ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছেন।
তাদের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, স্মৃতি একই সাথে হিপোক্যাম্পাস এবং কর্টেক্স – এই দুটো অংশেই তৈরি হচ্ছে।
ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন
এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক প্রফেসর সুসুমু তোনেগাওয়া বলেছেন, এই আবিষ্কার বিস্ময়কর। এটি আগের বহু দশক ধরে চলে আসা জনপ্রিয় ধারণার বিপরীত।
কারণ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, স্মৃতি তৈরি হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন ইঁদুর তার মস্তিষ্কের কর্টেক্সে সংরক্ষিত দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিকে ব্যবহার করেনি। এছাড়াও, হিপোক্যাম্পাসে স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি বন্ধ করে দেওয়ার পর দেখা গেছে তারা তাদের তাৎক্ষণিক স্মৃতি মনে করতে পারেনি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্মৃতি কিভাবে গঠিত হয় ও সংরক্ষিত থাকে সেটা বুঝতে পারলে মস্তিষ্কের রোগের চিকিৎসায় সেটা বড়ো রকমের ভূমিকা রাখতে পারে।
No comments:
Post a Comment