১০০ মনীষীর
জীবনী
মেরী কুরী

ফরাসি বিজ্ঞানি মেরি কুরি, পুরো নাম মেরি স্কলোডসকা কুরি। ডাক নাম মানিয়া। তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার জন্য পুরো পৃথিবী তাঁকে মনে রাখবে সব সময়। তিনিই দু' বার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র নারী যিনি দু’বার দু’টি বিষয়ে (পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন) নোবেল পুরস্কার লাভ করে ছিলেন। আজীবন তেজষ্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে কাজ করে এক অজানা রোগে (সম্ভবত লিউকেমিয়া) ১৯৩৪ সালের ৪ জুলাই স্বল্প বয়সে এই মহীয়সী বিজ্ঞান সাধিকার জীবনপ্রদীপ চিরদিনের জন্য নির্বাপিত হয়।
মেরি স্কলোডসকা কুরি রাশিয়ায় অত্যাচারী জার শাসনের নিষ্পেষণের আমলে ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারে তাঁকে মানিয়া নামে ডাকা হত। তাঁর বাবা ব্লাদিস্লাভ শক্লোদোভস্কি ওয়ারশয়ে একটি নামকরা কলেজের পদার্থের অধ্যাপক ছিলেন এবং মা ছিলেন একটি নামকরা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তাঁর বাবা প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ে আসর বসাতেন। এক সময় মেরির পরিবার মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়ায় তাঁর বড় বোনের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য ১৮৬৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি মাসিক পাঁচশ রুবল-এর বিনিময়ে এক অভিজাত রুশ আইনজীবীর বাড়িতে গভর্নেসের চাকরি নেন। তাঁদের দু' বোনের মধ্যে শর্ত ছিল এক জনের পড়াশোনা শেষ করে অপর জনের পড়াশোনার খরচ জোগাবে। তাই অনেক মানসিক পীড়নের মধ্যে তাঁকে তিন বছর চাকরি করতে হয় এবং এরই মধ্যে তাঁর বড় বোন ব্রোনিয়া ডাক্তারি পাস করে। পূর্ব শর্তানুযায়ী এ বার মেরি তাঁর বোনের আর্থিক সহায়তায় বিজ্ঞানের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথমে অস্ট্রিয়ার শাসনাধীন ‘ক্রাকো বিশ্ববিদ্যালয়ে' পড়তে যান। কিন্তু সেখানে তিনি বিজ্ঞান ক্লাসে যোগ দিতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচিব তাঁকে অসম্মতি জ্ঞাপন করে বলেন, "বিজ্ঞান মেয়েদের জন্য নয়। তিনি রন্ধন শিক্ষা ক্লাসে যোগ দিন।" পরবর্তীতে ডাক্তার হওয়ার আশায় মেরি ভর্তি হয়েছিলেন প্যারিসের সোরবোরন বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষকেরা তাঁর কল্পনাশক্তি, উদ্যম ও মেধা দেখে তাঁকে উৎসাহিত করতেন নতুন নতুন গবেষণায়।
এ সময় তাঁর পরিচয় ঘটে ফরাসি বিজ্ঞানী পিয়ারে কুরির সঙ্গে যিনি ইতিমধ্যে চুম্বকত্ব ও পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁরা বিয়েও করেন। এর পর মেরি পিয়ারে কুরির সঙ্গে যৌথ ভাবে গবেষণা করেন। ১৮৯৮ সালেই এই দম্পতি প্রথমে পিচব্লেন্ড থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ পলোনিয়াম এবং পরে রেডিয়াম আবিষ্কার করেন যা ইউরোনিয়াম হতে দশ লক্ষগুণ বেশি শক্তিশালী। এই রেডিয়ামের ব্যবহার অপরিসীম। কুরি দম্পতি প্রমাণ করলেন কোন কোন মৌলের পরমাণু ক্রমাগত ভেঙে গিয়ে রশ্মি বিকিরণ করে। এই বিকিরণ অন্য পদার্থ ভেদ করেও যেতে পারে। এই ধরণের পদার্থকে বলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আর এই গুণকে বলে তেজস্ক্রিয়তা। বিরল ধাতু ইউরেনিয়ামের লবণ থেকে তাঁরা রেডিয়াম, পলোনিয়াম মৌল দু'টি আবিষ্কার করেন। এ আবিষ্কারের জন্য ১৯০৩ সালে মেরি কুরি এবং পিয়ের কুরি যৌথ ভাবে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯১০ সালে মেরি কুরি রেডিয়াম ক্লোরাইডকে তড়িৎ বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ রেডিয়াম নিষ্কাষণ করেন। এই অসাধারণ উদ্ভাবনের জন্য ১৯১১ সালে মেরিকে রসায়নে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র নারী যিনি দু’বার নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ১৫টি স্বর্ণপদক, ১৯টি ডিগ্রি এবং অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
গবেষণা ছাড়াও মেরি কুরি দ্বিতীয় যুদ্ধে আহত সৈনিকদের দিয়েছেন একাগ্র সেবা, ভবিষ্যত বিজ্ঞানীদের দিয়েছেন উপদেশ ও পরামর্শ। সর্বোপরি নিজের স্বাস্থ্যের দিকে না তাকিয়ে যিনি ঢেলে দিয়েছেন তাঁর সবটুকু সময়। মেরি কুরি তাঁর বাকি জীবন রেডিয়াম গবেষণাগারে কাটিয়ে দিয়েছেন। রেডিয়ামের বিষ তাঁকে সমস্ত জীবন ধরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৩৪ সালের ৪ জুলাই লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই মহিয়ষী বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।
Developed by

Friday, September 21, 2018
About ebongbd
"ALL ABOUT THINGS FOR EASY LIFE"
THIS IS A WEBSITE ABOUT SOLUTION OF OUR DAILY PROBLEMS. YOU CAN GET HERE ALL PROBLEM'S SOLUTION.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment