মৃত্যুঞ্জয়ী পাগলা কানাই
কামরুজ্জামান লিটু
বাংলা মাস ফাল্গুনের / পঁচিশ তারিখ ক্ষণে
বারোশত ষোলো সালের / বসন্ত ঋতু কালে,
কুড়ন শেখ ও মুমেনার ঘর / আলোক রঞ্জনে
এসেছিল নক্ষত্র এক / খুশির উত্তালে।
গরিব ঘরে জন্ম নিলো / একটি শিশু ছেলে
ঝিনাইদহ উপজেলায় / লেবুতলা গ্রামে,
সাত বছর বয়সে তার / বাবা-মা মারা গেলে
ছেলেটি তখন এতিম হলো / এই ধরাধামে।
নাম তার কানাই শেখ / সর্ব লোকে ডাকে
ছোট ভাই উজল শেখ/ থাকে তারই পাশে,
বড় বোন স্মরনারী/ বেড়বাড়ীতে থাকে
দুই ভায়ের ঠাঁই মেলে/ বড় বোনের বাসে।
বোনের স্নেহে দিনে দিনে/ ওঠে সে বেড়ে
আধ্যাত্মিক চেতনা সে /আপন বুকে ধরে,
জ্ঞান অর্জন ছিল না তার /বইপুস্তক পড়ে
আত্মশুদ্ধির শিক্ষা তবু/ ছিল অন্তরে।
বাংলার পথে পথে /পালাগানের পাল্লাতে
উচ্চস্বরে ধুয়োজারি /গাইতো মধুর স্বরে,
আধ্যাত্মিক কথামালায় /গানটি সাজাতে
জুঁড়ি তার ছিল না কেউ / পালার মঞ্চ পরে।
মরমিয়া সাধনায় / যৌবন ছিল দানে
মনুষ্যত্বের বিকিরণে /মানবতার রেশে,
সমাজ ও সংস্কৃতে/ ছিল সম্মানে
উন্নয়নের ধারাতে বিকাশ/ সাধন বেশে ।
উপাধিতে পাগল নামে /ছিল জনগণে
পাগলামি ছিল তার /জ্ঞান অর্জনে,
ঈশ্বর হতে আশীর্বাদ/ পেয়ে দর্শনে
হাজার গীতের সুর রক্ষণ/ ছিল স্মরণে ।
গুরু ভক্তির মনোবাসনা/ হৃদয় অন্দরে
শ্রদ্ধা ভরা ছিল তার/ সুযোগ সন্ধানে,
কখনো গুরু কখনো বা /শিষ্য রূপ ধরে
ঘুরতো একা দেশে দেশে/ ধুয়োজারি গানে।
রাখাল হয়ে মাঠে মাঠে/ গাছের তলে বসে
নিভৃতে সাধন ছিল /গরু চরানোর ফাঁকে,
কখনো বা অর্ধাহারে /কখনো উপসে
কেটে যেত সময় তার/ জ্ঞান সৃষ্টির বাঁকে ।
অসাম্প্রদায়িক মনোভাবে/ জীবন পরিক্রমে
বিচরণ ছিল সব মানুষে /জাতি ভেদাভেদে,
সুফিবাদের মন-মানসে/ সম্মান ছিল প্রেমে
শ্রদ্ধা ছিল সকল জীবে /অন্তর অবিচ্ছেদে ।
বাংলা মাস আষাঢ়ে /আঠাশ তারিখ দিনে
বারোশত ছিয়ানব্বই সালের /বর্ষা ঋতু কালে,
মায়ায় ভরা জগৎ /ত্যাগে ভক্তবৃন্দ বিনে
কানাই পেল নব ঠিকানা /প্রাণটি উড়ালে।
জীবনঅবসান অবধি/ নিবেদন ছিল গানে
রুখতে কেউ পারেনি /তার জ্ঞান পরিসরে,
স্রষ্টার ডাকে চলে গেল/ ওপারের টানে
শিষ্য-ভক্ত কাঁদলো সবে /কানাইয়ের তরে।
মৃত্যুকে জয় করে /বিশ্ব চরাচরে
নিজ মহিমার কীর্তি তার /রাখা আছে কালে,
জাগতিকে মানব প্রাণে/ সুর লহরী তরে
রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো/ ভাসে গানের তালে ।
No comments:
Post a Comment