প্রস্তর যুগ পেরিয়ে মানুষ যখন সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে, শিকার পর্ব ছেড়ে চাষাবাস, পশুপালনে মনোনিবেশ করে তখনই গননার প্রয়োজন অনুভব করা শুরু করে। কারন গরু ছাগল ভেড়া মাঠে নিয়ে গেলো ঘাস খাওয়াতে। যদি সে নাই জানলো কয়টা গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছে তাহলে ফিরিয়ে আনবে কিভাবে। দু চারটে বেশী হলে মন্দ কি কিন্তু যদি কম পড়ে যায়! প্রাচীন যুগে মানুষ বিচিত্র উপায়ে গণনা করত। যেমন ধরা যাক দশটা ছাগল গুনতে হবে। তারা দশটা ছাগল গোনার জন্য দশটা পাথর নিত। যোগ বিয়োগের হিসাব কষতে নতুন পাথর যোগ করা হত অথবা সরিয়ে নেয়া হত। চাঁদে পা রেখে নীল আর্মস্ট্রং কি বলেছিলেন মনে আছে। মানুষের ছোট ছোট পদক্ষেপ মানব জাতির জন্য বৃহৎ পদক্ষেপ।
এই গণনা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে abaci নামের গনণাযন্ত্র আবিষ্কার করা হয়। মানুষের তৈরী প্রথম ব্যক্তিগত ক্যালকুলেটর হলো এব্যাকাস। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চীনারা প্রথম এব্যাকাস নির্মান করেন। এটা কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়। এটাতে ধরার হাতল ছিলো এবং সহজে এক স্থান হতে অন্যস্থানে বহন করে নেয়া যেত। এব্যাকাসের সফলতা এত বিশাল ছিলো যে এটা চীনের সীমানা পেরিয়ে আরো অনেক দেশে বিস্তৃতি লাভ করে। কিছু মানুষ অতীতকে লালন করতে ভালোবাসে। তাই পৃথিবীর অনেক দেশে এখনো এব্যাকাস খুঁজে পাওয়া যায়।
খিস্ট্রপূর্ব ৫০০ সনে গ্রীক এবং রোমানরা এব্যাকাসের মূলনীতির উপর ভিত্তি করে নতুন গণনাযন্ত্র উদ্ভাবন করেন। ৩০০ খ্রিষ্টাব্দে চীনারা এব্যাকাসের মানোন্নয়ন ঘটিয়ে গানিতিক যন্ত্রে রূপান্তরিত করেন। ৫০০ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপে এব্যাকাসের ব্যবহার শুরু হয়। আজকের দিনের ক্যালকুলেটের মত গণনায় দক্ষ ছিলো না এব্যাকাস যন্ত্র। কিন্তু সাধারণ গণনার ক্ষেত্রে একজন এব্যাকাস ব্যবহারকারী ও একজন ক্যালকুলেট ব্যাবহার কারী একই সময় নেন। কয়েক শতাব্দী ধরে চলে এব্যাকাসের রাজত্ব। তার জায়গা দখল করে আধুনিক ক্যালকুলেটর। শিকার যুগের মানুষেরা তাদের শিকারের সংখ্যার হিসেব রাখত সমপরিমান পাথর দিয়ে। পরবর্তীতে তারা পাথরের গাঁয়ে আচড় কেটে অথবা প্রতীক একে ঠিক রাখত হিসেব। একটা শিকারের জন্য এই চিহ্ন আর দশটা শিকারের জন্য ঐ চিহ্ন। কালে কালে সেই প্রতীক গুলো পরিবর্তিত হতে হতে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। আমরা তাদের চিনি এক দুই তিন, ওয়ান টু থ্রি ইত্যাদি প্রতীকে।
No comments:
Post a Comment