সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, নির্বিশেষে সমসুযোগ ও সমঅধিকার রয়েছে এবং জাতীয় উন্নয়নে দেশের সকল নাগরিকের সমঅংশীদারিত্বের সুযোগ সৃষ্টি একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ৷ এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ও রয়েছে উন্নয়নের ও অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার৷ প্রতিটি প্রতিবন্ধী নাগরিক প্রথমে নাগরিক, পরে প্রতিবন্ধী৷ কিন্তু আমাদের দেশের সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, প্রতিবন্ধী নাগরিকদের প্রতি অআমাদের অজ্ঞতা, ভয় ও কুসংস্কারচ্ছন্ন্ মনোভাবের কারণে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তথা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্বের অধিকার খুবই নগন্য ৷
প্রতিবন্ধি কারা
বয়স, লিঙ্গ, জাতি,সংস্কৃতি বা সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী আর দশজন যে কাজগুলো করতে পারে ইমপেয়ারমেন্টের কারণে সে কাজগুলো প্রাত্যূহিক জীবনে করতে না পারার অবস্থাটাই হল ডিসএবালিটি বা প্রতিবন্ধিতা৷ ইমপেয়ারমেন্ট হল দেহের কোন অংশ বা তন্ত্র যদি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে, ক্ষণস্থায়ী বা চিরস্থায়ী ভাবে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায় সে অবস্থাটিকেই বোঝায় ৷
প্রতিবন্ধিতার প্রকারভেদ
প্রতিবন্ধিতার প্রকারভেদ বিভিন্ন ভিত্তিতে করা হয়ে থাকে ৷ যেমন
(ক) কখন শুরু হয়েছে তার ভিত্তিতে
প্রাথমিক প্রতিবন্ধিতা : বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে জন্মগ্রহণ করলে তাকে প্রাথমিক প্রতিবন্ধিতা বলা হয় ৷
পরবতী বা অর্জিত প্রতিবন্ধিতা : জন্মের পরে বিভিন্ন কারণে প্রতিবন্ধিত্ব বরণ করে থাকলে থাকে পরবতীᐂ বা অজি॔ত প্রতিবন্ধিতা বলা হয়৷
(খ) কোন অঙ্গ আক্রান্ত হয়েছে তার ভিত্তিতে :
শারীরিক প্রতিবন্ধী
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
শ্রবণ প্রতিবন্ধী
বাক প্রতিবন্ধী
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী
বহুবিধ প্রতিবন্ধী
(গ) মাত্রা অনুযায়ী প্রতিবন্ধিতাকে চার ভাগে ভাগ করা যায় :
মৃদু
মাঝারি
তীব্র
চরম
প্রতিবন্ধিতার কারণ
বেশীর ভাগ প্রতিবন্ধতার কারণ আমাদের জানা নেই ৷ কিন্তু যেগুলো সম্বন্ধে জানা যায়, তা কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়৷ যা নীচে উল্লেখ করা হলো
(ক) সাধারণ কারণ সমূহ
বংশানুক্রমিক
রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন কোন কোন আত্মীয়ের সাথে বৈবাহিক সম্পক॔ (সন্তানদের মধ্যে)
দুর্ঘটনা
উচ্চ মাত্রার জ্বর
বিষক্রিয়া
মস্তিষ্কের কিছু কিছু ইনফেকশন বা অসুখ বা টিউমার
পুষ্টি অভাব, ভিটামিনের অভাব, আয়োডিনের অভাব ইত্যাদি
(খ) জন্ম-সম্পর্কিত কারণ সমূহ
(১) জন্মের পূর্বে
মায়ের বয়স যদি ১৬ বছরের নীচে অথবা ৩০ বছরের উপর হয়
গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টির অভাব
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে যদি মা কিছু কিছু কড়া ঔষধ গ্রহণ করে থাকে অথবা কীটনাশক, রাসায়নিক, রশ্মি, বিষক্রিয়া গ্রহণ করে থাকে ৷
গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের বিশেষ হাম হয়৷ এটি সাধারণত প্রভাব বিস্তারেও থাকে ইন্দ্রিয়স্থান (শ্রবণ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে), ব্রেইনের সেরেব্রাল পালসি অথবা মানসিক প্রতিবন্ধী, অথবা শরীরের অভ্যন্তরের বাহুতেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে৷
গর্ভধারণকারী মায়ের যদি হার্টের অসুখ বা ডায়াবেটিস থাকে৷
গর্ভধারণকারী মায়ের যদি বিভিন্ন অভ্যাস থাকে৷ যেমন- মদ পান, ধূমপান করা, তামাক ব্যবহার করা ইত্যাদি৷
(২) জন্মের সময়
অপরিপক্বতা
ডেলিভারির সময় অব্যবস্থাপনা (সাধারণত অপ্রশিক্ষিত কোন কর্মীর দ্বারা)
ডেলিভারির সময় সঠিক ভাবে যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করা হলে ৷
মাথায় আঘাত
প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব
(৩)জন্মের পরে
মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হলে
প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব
দুর্ঘটনা
উচ্চমাত্রার জ্বর
বিষক্রিয়া
মস্তিষ্কেও কিছু কিছু ইনফেকশন, রোগ এবং টিউমার
সাধারণত উপরোক্ত কারণে এসব প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে হয়ে থাকে ৷
প্রতিবন্ধী বিষয়ক নীতিমালা
প্রতিবন্ধী বিষয়ক নীতিমালা
বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিবন্ধী বিষয়ক নীতিমালা
প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা
প্রতিবন্ধী বিষয়ক নীতিমালা
জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায় যে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০% লোক কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী৷ যদি সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সংখ্যা হিসাব করা হয় তবে এই সংখ্যা ২৫%-এ উন্নীত হতে পারে৷ সমীক্ষায় এও জানা গেছে যে, উন্নয়নশীল দেশে অন্তত ৮০% প্রতিবন্ধী গ্রামঞ্চলে বসবাস করে৷ অপর্যাপ্ত প্রতিরোধ ও নিরাময় ব্যবস্থার কারণে এই হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ প্রতিবন্ধী মূলত শারীরিক, মানসিক, দৃষ্টি, শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের ক্ষতির কারণে হয়ে থাকে৷ প্রত্যেক প্রতিবন্ধিত্বকেই তিন ভাগে ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যেমন- মৃদু, মাঝারি এবং চরম৷ প্রতিবন্ধিত্বের কারণে-প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিদ্যামান সকল নাগরিক অধিকার ও সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ প্রতিবন্ধিত্বের কারণে তাদেরকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বাধা হিসাবে মনে করা হয়৷ প্রতিবন্ধী বিষয়ে যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কি
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বাধা হিসাবে মনে করা হয়৷ প্রতিবন্ধী বিষয়ে যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশ্ব কর্ম-পরিকল্পনা কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিবন্ধিত্বের সংজ্ঞা পথনির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করা যায়৷
প্রতিরোধ (Prevention): মানসিক, শারীরিক, স্নায়ুগত প্রতিবন্ধিত্ব দূরীকরণে বা দুর্বলতা দূরীকরণে গৃহীত পদক্ষেপ অথবা শারীরিক, মানসিক কিংবা সামাজিক নেতিবাচক ঘটনা যখন পরিলক্ষিত হয় উহা দূরীকরণে গৃহীত পদক্ষেপ৷
দুব॔লতা (Impairment): একজন স্বাভাবিক ব্যক্তির কম॔কাণ্ড সম্পাদনে অসামথ॔তা অথবা অস্বাভাবিকতা ৷
প্রতিবন্ধীত্ব (Disability): যে কোন ধরনের বাধা অথবা একজন স্বাভাবিক মানুষের দ্বারা সম্পাদনযোগ্য কাজ সম্পাদনে অসুবিধা৷
অক্ষমতা (Handicap): কোন ব্যক্তির অসুবিধাসমূহ,যা তার প্রতিবন্ধীত্বের অথবা দুর্বলতার কারণে ঘটে, যা বয়স, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং লিঙ্গভেদে ঐ ব্যক্তির স্বাভাবিক ভূমিকার অন্তরায়৷
পুনর্বাসন (Rehabilitation): লক্ষ্য ভিত্তিক ও সময়-নির্ধারিত এমন কিছু পদ্ধতি যা এক জন দুর্বল ব্যক্তিকে মানসিক, শারীরিক এবং/অথবা সামাজিকভাবে স্বাভাবিক পর্যায়ে উত্তরণ ঘটায়৷
সুযোগের সমতা বিধান (Equalization of opportunities): এই প্রক্রিয়ায় প্রচলিত সাধারণ সামাজিক অধিকার ও সুযোগসমূহ যেমনঃ শারীরিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ, আবাসন এবং যানবাহন, সমাজ ও স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবন, খেলাধুলা এবং বিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধাসমূহ সকলের জন্য সহজলভ্য করে৷
বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিবন্ধী বিষয়ক নীতিমালা
বাংলাদেশের সংবিধান সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিক্ষা, কর্মের অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে৷ অনাকাঙ্ক্ষিত চাহিদার ফলে সরকারী সাহায্যের কারণ হিসাবে অক্ষমতাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে৷ প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রতিবন্ধীদের পূর্ণ অংশগ্রহণ এবং সমতা বিধান (১ঌঌ৩) শীর্ষক এসকাপ ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর দান ও প্রতিবন্ধীদের অধিকার শীর্ষক জাতিসংঘের কার্যবিবরণী (১ঌ৭৫) অন্তর্ভুক্ত করণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকাণ্ডে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী বর্ষ (১ঌ৮১), প্রতিবন্ধী দশক (১ঌ৮৩-ঌ২) এবং প্রতিবন্ধী সার্ক বর্ষ (১ঌঌ৩) কর্ম-পরিকল্পনা নীতি নির্দেশক হিসাবে গণ্য করা হয়েছে৷ এছাড়াও বাংলাদেশ জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০০০ সাল নাগাদ সকলের জন্য শিক্ষা ও ২০০০ সাল নাগাদ সকলের জন্য স্বাস্থ্য ঘোষণা পত্রের স্বাক্ষরদাতা দেশ৷ বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা-প্রণয়নের মূল উপাদান হচ্ছে সকলের পূর্ণ অংশগ্রহণ ও সমসুযোগ নিশ্চিতকরণ যা বাংলাদেশের সংবিধানে এবং প্রতিবন্ধী সংক্রান্ত রচিত আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত এবং ঘোষণাসমূহ বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করেছে৷
বাংলাদেশের সংবিধান
বাংলাদেশের সংবিধানে পর্যাপ্তভাবে সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিক্ষা, চাকুরীর নিশ্চয়তার বিধান রয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট বিধানসমূহ নিম্নে বর্ণিত হলোঃ
অনুচ্ছেদ: ১৫
রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উত্পাদন শক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সাংস্কৃতিক মানের দৃঢ় উন্নতি সাধন, যাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়ঃ
অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিত্ সাসহ জীবন ধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা;
কর্মের অধিকার, অর্থাত্ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার;
যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার; এবং
সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাত্ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতার বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্য লাভের অধিকার৷
অনুচ্ছেদঃ ১৭
একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য;
সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য;
আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য; কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন৷
অনুচ্ছেদঃ ২০
১. কর্ম হচ্ছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয়, এবং প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী-এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকেই স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করবেন৷
২. রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসেবে কোন ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে সমর্থ হবেন না এবং যেখানে বৃদ্ধি, বৃত্তিমূলক ও কায়িকসহ সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর অভিব্যক্তিতে পরিণত হবে৷
৩. এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই
(ক) নাগরিকের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হতে,
(খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সম্প্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপসম্প্রদায়ভূক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হতে,
(গ) যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না৷
অনুচ্ছেদঃ ২ঌ
১. প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে;
২. কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না৷
আন্তজার্তিক সিদ্ধান্তাবলী এবং ঘোষণাপত্রসমূহঃ
প্রতিবন্ধীদের অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘ সিদ্ধান্ত (১ঌ৭৫) :- প্রতিবন্ধিত্ব প্রতিরোধ পুনর্বাসন এবং প্রতিবন্ধীদের পূর্ণ অংশগ্রহণ ও সহঅধিকার সম্পর্কীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন৷
এসকাপ ঘোষণাপত্র (১ঌঌ৩): এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিবন্ধীদের পূর্ণ অংশগ্রহণ ও সমঅধিকার৷
প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা
যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধানে এবং আন্তর্জাতিক ঘোষণাপত্র এবং সিদ্ধান্তসমূহে প্রতিবন্ধীদের পূর্ণ অংশগ্রহণ ও সমঅধিকার নিশ্চিতকরণের নীতিসমূহ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে সেহেতু বাংলাদেশ সরকার নিম্নোক্ত বিবৃতি ও ব্যবস্থাসমূহ সরকারের নীতি হিসেবে গ্রহণ করলেন
১৷ প্রতিরোধ
প্রতিবন্ধিত্বের কারণসমূহ সারা দেশব্যাপী (বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে) হ্রাস করার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ এই জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে-
(ক) বিশেষত সমাজের সর্বাপেক্ষা অনগ্রসর কম সুবিধাভোগী অংশের প্রতি দৃষ্টি রেখে টিকা দান কর্মসূচি গ্রহণ৷
(খ) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পাঠক্রম এবং সমাজ ও পরিবার ভিত্তিক বিশেষ কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পুষ্টি শিক্ষা৷
(গ) গৃহ এবং কর্মক্ষেত্রে নিবারণযোগ্য দুর্ঘটনা সম্বন্ধে তথ্য প্রদান৷
(ঘ) আগ্নেয়াস্ত্র ও আতশবাজি বিক্রয় ও স্থানীয়ভাবে তৈরির ওপর নিষিদ্ধকরণ৷
(ঙ) নিরাপদ পানি সরবরাহ৷
(চ) আয়োডিনযুক্ত লবণ সরবারহ৷
(ছ) স্বাস্থ্যসেবা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গ্রহণ৷
(জ) জন্মপূর্ব ও জন্মোত্তর সেবা প্রদান৷
২৷ চিহ্নিতকরণ ও নিরোধ
চিহ্নিতকরণ: সম্ভাব্য প্রতিকার এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিবন্ধিত্ব চিহ্নিত করতে হবে৷ এ জন্য করণীয় বিষয়সমূহ-
(ক) জাতীয় আদমশুমারির সময় ধরন, লিংগ ও বয়স অনুসারে প্রতিবন্ধীদের তালিকাভুক্ত করণ,
(খ) প্রতিবন্ধিত্বের সম্পর্কিত জরিপ করণ,
(গ) ইউনিয়ন ও পৌরসভার মা-শিশু কেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতালসমূহে প্রতিবন্ধীদের রেজিষ্ট্রিকরণ,
(ঘ) ক-গতে বর্ণিত তথ্যাদি কেন্দ্রীয় প্রতিবন্ধী তথ্যকেন্দ্রে প্রেরণ ও সংরক্ষণ (প্রতিবন্ধী তালিকা),
(ঙ) প্রতিবন্ধিত্বের লক্ষণ এবং ধরনসমূহ সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিতকরণ৷
নিরোধ: নিরোধ হচ্ছে পর্যাপ্ত প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ৷ ইহা বহুমুখী পেশাজীবীর কাজ৷ এ জন্য-
(ক) রিসোর্স কেন্দ্র, বিশেষ স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সুপারিশক্রমে জনস্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক বিনামূল্যে জনস্বাস্থ্য সেবা প্রদান,
(খ)স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র অথবা রিসোর্স এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে নিরোধমূলক সহায়ক উপকরণ সরবরাহকরণ;
(গ) প্রশিক্ষণ এবং পুনর্বাসনের জন্য রিসোর্স কেন্দ্র, বিশেষ স্কুল এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রে বিনামূল্যে সহায়ক ব্যবস্থাকরণ৷
(ঘ) যে সমস্ত এজেন্সি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কর্মরত তাদের সুপারিশক্রমে প্রতিবন্ধীদের জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক বাংলাদেশী প্রতিবন্ধীদের শনাক্তকরণ কার্ড সরবরাহকরণ৷
৩৷ আগাম নিরোধ
যদি প্রতিকার সম্ভব না হয়, তবে প্রতিবন্ধীত্বের প্রভাব আগাম নিরোধের মাধ্যমে হ্রাস করা সম্ভব৷ শৈশবকাল হতে গৃহভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ সম্ভব৷ এ জন্য -
(ক) প্রতিবন্ধী রেজিষ্ট্রার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে তথ্যাদি প্রদান করতে হবে,
(খ) বিদ্যালয় ও বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রসমূহ প্রাক-বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিশুদের অভিভাবক ও পিতা-মাতাদের মানসিক আচরণ, গৃহ কেন্দ্রীক প্রশিক্ষণ এবং ভবিষ্যত্ শিক্ষা সুযোগ সম্পর্কীয় পরামর্শ ও উপদেশনা প্রদান করবে বয়স্ক প্রতিবন্ধী লোকদের পুনর্বাসন ও রিসোর্স কেন্দ্র থেকে পরামর্শ প্রদান করা হবে৷
৪৷ উপকরণসমূহ
চিকিত্সা ব্যবস্থা প্রতিবন্ধিত্ব নিরাময়ে যদি সহায়ক না হয় তবে প্রতিবন্ধিত্বের কারণ দূরীকরণে এবং অক্ষমতা হ্রাসকরণে উপযুক্ত সহায়ক উপকরণাদি সরবরাহ করা যেতে পারে৷ এ জন্য-
(ক) পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিত্সাগত সাহায্য/অথবা রিসোর্স কেন্দ্রে প্রতিবন্ধিত্ব শনাক্তকরণের পর উপকরণাদি সরবারহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যা সংশ্লিষ্টের আর্থিক সংগতির ওপর ভিত্তি করে বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে দেয়া হবে৷ আর্থিক সহায়তা জাতীয় সমন্বয় কমিটির সুপারিশক্রমে প্রদান করা হবে৷
(খ) সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সংগঠন/প্রতিষ্ঠান উপকরণাদির ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে৷
(গ) পুনর্বাসন/রিসোর্স কেন্দ্রে উপকরণাদির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে৷
(ঘ) স্থায়ীভাবে নির্মিত উপকরণাদির ওপর বিক্রয় কর/ভ্যাট প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির সুপারিশক্রমে মওকুফ করা হবে৷
(ঙ) আমদানীকৃত উপকরণসমূহের ওপর থেকেও অনুরূপভাবে আমদানী কর/ভ্যাট. কাস্টমস কর জাতীয় সমন্বয় কমিটির সুপারিশক্রমে অব্যাহতি করা হবে৷
৫৷ শিক্ষা
প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্যান্য সাধারণ শিশুর মতই শিক্ষা গ্রহণের অধিকার রয়েছে৷ প্রতিবন্ধীত্ব নিরূপণের মাধ্যমে প্রত্যেকেরউপযুক্ত শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ প্রতিবন্ধীর শ্রেণী, প্রতিবন্ধীত্বের কারণ, ধরণ, প্রভাব, সক্ষমতা ও পারিবারিক পরিবেশ অনুযায়ী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা প্রদান করা হবে৷ এ জন্য-
(ক) প্রতিবন্ধী শিশুদের ধরন, প্রভাব্ মূল শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সমন্বিতকরণ, নিয়মিত শ্রেণীকক্ষে তাদের পূর্ণ সমন্বিতকরণ, অথবা নিয়মিত শ্রেণীর সংযুক্তিতে তাদের সমন্বিতকরণই এই শিক্ষার উদ্দেশ্য৷ প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়মিত শ্রেণীকক্ষে সমন্বিত করা (উদাহারণ স্বরূপঃ এমন বিষয়ে যেখানে তারা নিয়মিত শিক্ষাদানের মাধ্যমে উপকৃত হবে)৷ প্রশিক্ষণ ইউনিট রিসোর্স শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা পরিচালিত হবে৷
(খ) রিসোর্স কেন্দ্র পরিচালিত শিক্ষক-প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, বিশেষ শিক্ষা উপকরণাদি ও শিক্ষণ সরাঞ্জামাদি মূল শিক্ষা কর্মসূচির সমন্বিতকরণে সহায়ক হবে৷
(গ) বিশেষ বিদ্যালয়গুলি বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে, (যখন সমন্বয়করণ যুক্তিসংগত বা সম্ভব নয়), এতিম, গৃহহীন এবং একাধিক এবং/অথবা চরম প্রতিবন্ধী শিশুরা অগ্রাধিকার পাবে৷
(ঘ) বিশেষ বিদ্যালয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অংশ বিশেষ বিশেষ শিক্ষার ৭ বছর মেয়াদি প্রাক-বিদ্যালয় ও প্রাক-বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণসহ পাঠ্যসূচি অনুসরণ করবে৷
(ঙ) বিশেষ শিক্ষা বিদ্যালয় এবং কেন্দ্রে প্রশিক্ষণকালে নিরূপণ পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার কার্যক্রমে বদলি করা হবে৷
(চ) বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ ও আবাসিক ব্যবস্থা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে৷
(ছ) প্রতিবন্ধিত্বের কারণে যদি কোন ছাত্র এক বা একাধিক বিষয়ে অধ্যায়নে অসমর্থ হয় তবে সে ক্ষেত্রে বিকল্প বিষয় বা বিষয়সমূহের ব্যবস্থা অনুমোদন করা হবে৷
(জ) প্রতিবন্ধী ছাত্ররা যেখানে ভর্তি হবে, সেখানে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অধিকার/সুযোগ থাকবে৷ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের ব্রেইল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হবে এবং তাদের উত্তরপত্র ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে৷ যদি ব্রেইল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অংশগ্রহণে অসমর্থ হয় তবে সহায়ক ব্যক্তির সাহায্যে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে৷ শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রের যদি লিখতে অসুবিধা থাকে তবে সহযোগীর ব্যবস্থা করা হবে৷
৬৷ পুনর্বাসন
প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রদান ব্যতীতও নিম্নোক্ত বিষয়গুলি অন্তর্ভূক্ত থাকবে৷ যেমন-চিকিত্সা সেবা, উপকরণ সরবরাহ, বৃত্তিমূলক পুনর্বাসন ও উপদেশনা প্রদান৷ এ জন্য-
(ক) চিকিত্ সাগত সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিবন্ধিত্ব দূর করা সম্ভব কি না অথবা প্রতিবন্ধিত্বের প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব কিনা নিরূপন করা হবে৷
(খ) চিকিত্সা পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক প্রদান করা হবে৷
(গ) চিকিত্সার পরও যদি প্রতিবন্ধিত্বের প্রভাব থেকে যায় তবে সম্ভাব্য উপকরণ সরবরাহের বিষয়ে নিরূপণ করা হবে৷
(ঘ) চিকিত্সাগত ও কৌশলগত পুনর্বাসনের পর বৃত্তিমূলক পুনর্বাসন নিরূপণ বা নিশ্চিত করা হবে৷ এইসব পদ্ধতি মূল বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সুবিধা, অন্যান্য সমন্বিত কর্মসূচি অথবা বিশেষ পুনর্বাসন/রিসোর্স কেন্দ্রের সুপারিশক্রমে করা হবে৷
(ঙ) পুনর্বাসন ও রিসোর্স কেন্দ্রসমূহ সরবরাহ করবে-
প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক পুনর্বাসনের জন্য বহুমূখী পেশাজীবীদের দ্বারা পুনর্বাসন পদ্ধতি নিরূপণ,
প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল বিশেষ করে প্রাত্যহিক জীবনযাপনের কলা-কৌশল সম্বলিত ম্যানুয়েল,
ম্যানুয়েল অনুযায়ী পুনর্বাসন,
বৃত্তিমূলক ও সামাজিক পুনর্বাসনের উপদেশনা,
চাকুরী শনাক্তকরণ ও কর্মস্থলে তার অনুসরণ,
সমন্বিত পুনর্বাসন কর্মসূচির সহায়ক সেবা প্রদান৷
৭৷ জনবল উন্নয়ন
প্রতিবন্ধীদের অধিকারগুলোকে সন্তোষজনক করণার্থে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট জনবলের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে৷ এ জন্য-
(ক) সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষ শিক্ষা ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত শিক্ষক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট জনবলের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে;
(খ) অনুমোদিত প্রশিক্ষণ সমাপ্তির শর্তে বিশেষ শিক্ষা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্য শিক্ষক ও প্রশিক্ষকগণের নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করা হবে;
(গ) সর্বস্তরের সরকারী কর্মকর্তাগণকে প্রতিবন্ধিত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে;
(ঘ) স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজসেবা ও শিক্ষকগণকে প্রতিবন্ধিত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে;
(ঙ)প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কর্মরত বেসরকারী সংগঠনসমূহের উন্নয়ন কর্মীদের প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে৷
৮৷ কর্মসংস্থান
(ক) কর্মসংস্থান, সকল প্রকার পুনর্বাসন কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য যেন প্রতিবন্ধীরা মর্যাদার সাথে অর্থবহ, ফলপ্রসূ ও অবদানমূলক জীবনযাপন করতে পারে৷ এ জন্য-
(খ) উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র শনাক্তকরণ ও উন্মক্ত কর্মস্থলে চাকুরী প্রদান, সকল প্রকার পুনবা॔সন কায॔ক্রমের অংশ হিসেবে গণ্য করা হবে৷
(গ) পুনর্বাসন অথবা রিসোর্স কেন্দ্র প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের পরামশ॔ প্রদান করবে এবং প্রয়োজনে ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে৷
(ঘ) উন্মুক্ত কর্মসংস্থান করা সম্ভবপর না হলে প্রতিবন্ধীগণ যদি স্বকর্মসংস্থান উপযোগী হন তবে তাকে উত্সাহিত করা হবে৷ আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠা সহায়তা, উপকরণ এবং অথবা কাঁচামালের এবং /অথবা ঋণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া হবে৷ এই ধরনের সহায়তা প্রদান জাতীয় সমন্বয় কমিটির সুপারিশে চূড়ান্ত করা হবে৷
(ঙ) জটিল ধরনের প্রতিবন্ধীরা যদি উপযুক্ত কর্মসংস্থান অথবা আত্ম-কর্মসংস্থানের অনুপযোগী হয় তবে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে পুনবা॔সন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করা হবে৷
(চ) সরকার কর্তৃক চরম প্রতিবন্ধীর জন্য জাতীয় সমন্বয় কমিটির সুপারিশক্রমে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করা হবে৷
সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিধি মোতাবেক শতকরা ১০% ভাগ প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সংরক্ষণ করা হবে৷
সকল শ্রেণীর প্রতিবন্ধীর জন্য কর্মসংস্থান, পদোন্নতি, চাকুরীস্থল, কি সরকারী অথবা বেসরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে সমান সুযোগ প্রদান করা হবে৷
(ছ) প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকল্পে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারাভিযান চালানো হবে৷
(জ)অন্যান্য বিষয়ে একজন প্রতিবন্ধী উপযুক্ত বিবেচিত হলে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধিত্বের কারণে সরকারী চাকরিতে অযোগ্য বিবেচিত করা যাবে না ও বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা যাবে না৷
(ঝ)প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত বয়সসীমা ৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য করা হবে৷
(ঞ)চাকরিরত অবস্থায় প্রতিবন্ধিত্ব অর্জন করলে কাউকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না৷ পক্ষান্তরে তাদের পুনবা॔সনের সুযোগ দেয়া হবে৷ যদি পুনবা॔সন করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে৷
ঌ৷ গবেষণা
প্রতিবন্ধীদের জন্য সকল বিধি উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হবে৷ এ জন্য-
(ক) প্রতিবন্ধিত্ব নিবারণ, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান বিভিন্ন বিষয়ে সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রিসোর্স কেন্দ্র পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং কর্মী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গবেষণা করা হবে৷
(খ)দলগত বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে গবেষণার জন্য বৃত্তি সংগ্রহ করা যাবে৷ এরূপ বৃত্তি প্রদান সিদ্ধান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সুপারিশক্রমে গ্রহণ করা হবে৷
১০৷ মুক্ত চলাচল ও যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা
জনসেবা ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ, অবদান এবং উপকৃত হওয়ার লক্ষ্যে যানবাহন, ভবনসমূহ ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে সহজগম্যতা প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি শর্ত এ জন্য-
(ক) প্রতিবন্ধীদের জন্য ভবন ও অন্যান্য গণসুবিধাদি যথা- সরকারী অফিস ভবন, রেলস্টেশন, আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন স্টেশন, বাস টামি॔নাল, বিমানবন্দর, জেলখানা, হাসপাতাল, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, সিনেমা হল, পাঠাগার, মিলনায়তন ও পাক॔ ভোগ ও ব্যবহারের জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন এবং জাতীয় বিল্ডিং কোডসহ অন্যান্য আইনে অন্তর্ভূক্ত করা হবে৷
(খ) যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি পরিচয়পত্র প্রদান করতে সক্ষম হয় তবে পথপ্রদর্শক বা হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তির জন্য বাস, ট্রেন, বিমান ও জলযানে অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণ করা যাবে না৷
(গ) জাতীয় ট্রাফিক কোডে প্রতিবন্ধীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন ও অন্তভূᐂক্ত করা হবে৷
(ঘ) যে সকল যানবাহনে অথবা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীরা যাতায়াত করেন তাদের ক্ষেত্রে সড়ক কর, কাস্টম কর, ভ্যাট প্রভৃতি জাতীয় সমন্বয় কমিটির সুপারিশক্রমে রহিত করা হবে৷
(ঙ) প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযুক্ত যানবাহন চালাতে সক্ষম প্রতিবন্ধীদের লাইসেন্স প্রাপ্তির অধিকার এবং সুযোগ থাকবে৷
১১৷ তথ্য
সমতা আইন ও অংশগ্রহণের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য জনগণের নিকট তথ্য সরবরাহ প্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধীদের নিকট সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তথ্য সরবরাহ তাদের জীবনযাপন ও সমাজে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখবে৷ এ জন্য-
(ক) প্রতিবন্ধিত্ব বিষয়ক প্রচারে সংশ্লিষ্ট সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কার্যক্রম হাতে নেবে৷
(খ) প্রতিবন্ধীদের (বিশেষ করে শ্রবণ প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও মানসিক প্রতিবন্ধী) জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও জাতীয় সম্প্রচার কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রচারিত হবে৷
১২৷ চিত্ত বিনোদন
সকলের কল্যাণ ও উপভোগের নিমিত্তে বিদ্যমান জন বিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধায় উন্মুক্ত সুবিধা গ্রহণ করা থেকে প্রতিবন্ধীদের বঞ্চিত রাখা যাবে না৷ এ জন্য-
(ক) প্রতিবন্ধীদের জন্য সকল প্রকার খেলাধুলাসহ অন্যান্য বিনোদনমূলক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ অবাধ করা হবে৷
(খ) প্রতিবন্ধীদের জন্য জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা গঠন করা হবে এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলার আয়োজন করবে৷
(গ) দেশব্যাপী প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযুক্ত স্থানে তথ্য ও রিসোর্স কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে৷ পর্যাপ্ত পরিমাণে উপযুক্ত পুস্তক, পত্রিকা, পুস্তিকা ও অন্যান্য শিক্ষামূলক উপকরণাদি গবেষণা ও জনশক্তি উন্নয়নের জন্য সহজলভ্য করা হবে৷
(ঘ) ব্রেইল পদ্ধতির পুস্তক প্রণয়ন ও রেকড॔কৃত ক্যাসেট বাংলা একাডেমী কর্তৃক রিসোর্স কেন্দ্রে সরবারহ করা হবে৷
(ঙ) বাংলাদেশ টেলিভিশন কর্তৃক শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য সাংস্কৃতিক ভাষায় বিশেষ অনুষ্ঠান মালা প্রচার করা৷
(চ) সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিভাবান প্রতিবন্ধীদের দ্বারা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে৷
(ছ) তথ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধীদের জন্য রেডিও টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমসমূহ (উপগ্রহ প্রচারকেন্দ্র) প্রত্যহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
১৩৷ প্রতিবন্ধীর জন্য ও প্রতিবন্ধীদের দ্বারা স্বনির্ভর আন্দোলন
(ক) নেতৃত্বের গুণাবলী ও স্বনির্ভর কর্মসূচির উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে৷
(খ) আত্মসচেতন কর্মসূচি সরকারী ও বেসরকারী সংগঠন কর্তৃক গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে যা প্রতিবন্ধীদের শোষণ, বৈষম্য ও হীনম্মন্যতা দূর করবে৷
১৪৷ বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাধন
(ক) প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা বাস্তবায়নের সার্বিক দায়িত্ব প্রতিবন্ধীদের জাতীয় সমন্বয় কমিটির ওপর অর্পিত থাকবে৷ এই কমিটি নীতিমালা অনুযায়ী, উপকমিটিসমূহকে যেমন স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, মুক্তচলাচল, তথ্য, জেলা সমন্বয় জাতীয় পুরস্কার ও আন্তজা॔তিক সহযোগিতার জন্য সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব অর্পণ করবে৷
(খ) সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন পরিচালিত (প্রতিবন্ধী) পদ সৃষ্টি করা হবে৷ প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও পূনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে৷ বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন ও প্রতিবন্ধী রেজিস্টার সংরক্ষণ করবে৷
প্রতিবন্ধীদের বর্তমান অবস্থা ও তাদের সমস্যা
শিক্ষা
কর্মসংস্থান ও আয় উপার্জন
বিবাহ, দাম্পত্য জীবন ও যৌতুক
সমাজ এবং পরিবারের মনোভাব
নির্যাতন
প্রজনন স্বাস্থ্য
স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি
মানসিক ও আবেগীয় বিষয়াবলী
মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ
সামর্থ্য, মর্যাদা ও আত্মোপলব্ধী
শিক্ষা
পᐁতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে অবহেলিত বিষয় এবং এক্ষেত্রে নারী ও কিশোরী প্রতিবন্ধীরা আরো বেশী বঞ্চিত৷ সমাজ ও পরিবারের সদস্যদের এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সচেতনতার অভাব ও নেতিবাচক মনোভাবের ফলশ্রুতিতেই প্রতিবন্ধীদের, বিশেষ করে নারী ও কিশোরী প্রতিবন্ধীদেরকে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা বা কার্যক্রম হতে বিচ্ছিন্ন রাখা হচ্ছে৷ অর্থাত সার্বিকভাবে সামাজিক অসচেতনতা ও নেতিবাচক মনোভাবই এদের শিক্ষার মূল অন্তরায়৷ রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী ও কিশোরী প্রতিবন্ধীদের বঞ্চিত হবার হার অন্য যে কোন অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর তুলনায় অত্যন্ত বেশি৷
চিত্রসূত্র: © জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম (এন.এফ.ও.ডব্লিউ.ডি)
বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরেনর �
No comments:
Post a Comment