সাধারণ অর্থে পরিবার পরিকল্পনা বলতে জন্মনিয়ন্ত্রণ বুঝানো হয়ে থাকে । প্রকৃত অর্থে পরিবার পরিকল্পনার সংজ্ঞা অনেক ব্যাপক । একটি পরিবারের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নতির লক্ষ্যে একটি দম্পতি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সচেতনভাবে চিন্তা-ভাবনা করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাকেই বলা যায় ‘পরিবার পরিকল্পনা’ । যে-কোন পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠন করা । সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবারের সার্বিক মঙ্গল ও উন্নতিসাধন করাই পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্য । স্বামী-স্ত্রী মিলে আলোচনা করে পরিকল্পিতভাবে পরিবার গঠনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই পরিবার পরিকল্পনা । পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে একজন দম্পতি সর্বমোট কয়টি সন্তান নেবেন, কতদিনের বিরতি নেবেন ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, পরিকল্পনা করে থাকেন এবং জন্ম-নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেন ।
জন্মনিয়ন্ত্রণ কী
স্বামী-স্ত্রীর যৌনমিলনের ফলেই স্ত্রীর গর্ভে সন্তান জন্ম নেয় । সন্তান ধারণে সক্ষম (১৫-8৯) বছর বয়সী একজন মহিলার ডিম্বকোষে অসংখ্য ডিম জমা থাকে । সেখান থেকে প্রতি মাসে একটি ডিম পরিপক্ক হয়ে ডিম্ববাহী নালী দিয়ে জরায়ুর দিকে আসতে থাকে । এই পরিপক্ক ডিমটি সেইসময় যদি পুরুষ শুক্রকীটের সাথে মিলিত হয় তাহলে গর্ভসঞ্চার হয় । শুক্রকীটের সাথে মিলিত না হলে পরিপক্ক এই ডিমটি মাসিকের রক্তস্রাবের সাথে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে । জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন পদ্ধতি দ্বারা ডিমকে পরিপক্ক হতে না দিলে বা পরিপক্ক ডিম ও শুক্রকীটের মিলনে বাধা সৃষ্টি করা গেলে গর্ভসঞ্চার হতে পারে না । বিভিন্নভাবে গর্ভসঞ্চারে বাধা সৃষ্টি করা যায় । এ গুলোকে জান্মনিন্ত্রন পদ্ধতি বলা হয় । যেমন-
ডিম ও শুক্রকীটকে মিলিত হতে দেয় নাঃ যেমন- পুরুষ বন্ধ্যাকরণ, মহিলা বন্ধ্যাকরণ ও কনডম ব্যবহার ।
ডিমকে পরিপক্ক হতে না দিয়ে এবং ডিম্বস্ফুটন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখেঃ যেমন- খাবার বড়ি, ইনজেকশন, ইমপ্ল্যান্টের ব্যবহার ।
ডিম ও শুক্রকীট মিলিত হয়ে যে ভ্রুণের সৃষ্টি করে সেটিকে জরায়ুতে গ্রথিত হতে দেয় নাঃ যেমন- আইইউডির ব্যবহার ।
এই সকল পদ্ধতির যে কোন একটি ব্যবহার করে গ্রহীতা ইচ্ছা অনুযায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটি বেছে নিতে হবে
অনেক ধরণের নিরাপদ এবং কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রচলিত আছে । দম্পতিরা ভালোভাবে জেনে বুঝে এগুলোর মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দমতো ও তাদের জন্য উপযুক্ত একটি পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন । তবে কোনো পদ্ধতি গ্রহন করার আগে বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন । বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে গ্রহীতাদের যখন একটা স্বচ্ছা ধারণা হবে, তখনই তাদের পক্ষে একটি পদ্ধতি বেছে নেয়া সহজ হবে । আমাদের দেশে যেসব জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সরকারী সেবাদানকেন্দ্র সমূহে, সরকারি ও বেসরকারি পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর কাছে,পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে বা ফার্মেসি বা দোকানে পাওয়া যায় সেগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
অস্থায়ীপদ্ধতি স্থায়ীপদ্ধতি
খাবারবড়ি ভ্যাসেকটমি (এনএসভি)
কনডম। টিউবেকটমি(লাইগেশন)
ইনজেকশন
আইইউডি
ইমপ্ল্যান্ট
বিভিন্ন ধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে যে কোন একটি পদ্ধতি বেছে নিতে হবে । মনে রাখতে হবে যে,
সব পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সবার জন্য সমান উপযোগী নয়;
কোনো পদ্ধতি কোনো বিশেষ ব্যক্তির জন্য অধিক গ্রহণযোগ্য;
অনেক দম্পতিকে সন্তান ধারণে সক্ষম বছরগুলতে প্রয়োজন অনুসারে একেক সময়ে একেক পরিবার পদ্ধতি গ্রহণ করতে হতে পারে ।
কার জন্য কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি উপযোগী
পারিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে, বয়স, সন্তান সংখ্যা, স্বাস্থ্য এবং পছন্দ এ সব বিষয়ের উপরই গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সম্পূর্ণ এবং সঠিক ভাবে জানতে হবে, যাতে দুজনে একমত হয়ে তাদের নিজেদের জন্য উপযোগী পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন ।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নির্বাচন
সব পদ্ধতি সব স্বামী-স্ত্রীর জন্য সমান উপযোগী নয় । কোন পরিবার পরিকল্পনা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোন ধরনের স্বামী-স্ত্রীর জন্য উপযোগী তা নীচের ছকে দেয়া হোল।
দম্পতির ধরণপদ্ধতি কখন নেবেনজন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
নবদম্পতিনববিবাহিত স্বামী - স্ত্রী , ২ - ৩ বছর দেরি করে সন্তান নেওয়ার জন্য ( স্ত্রীর ২০ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণ করলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য এবং এমন কি কখনো বা মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে ) ।বড়ি , কনডম , ইমপ্ল্যান্ট
যাদের একটি সন্তান আছেপ্রথম সন্তান হওয়ার পর কমপক্ষে ৩ বছর পর্যন্ত সন্তান নেয়ার জন্য ( দু ' সন্তানের জন্মের মাঝে বিরতি ৩ বছরের কম হলে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায় ) ।বড়ি , কনডম , ইনজেকশন , আইইউডি , ইমপ্ল্যান্ট
যাদের দু ' টি সন্তান আছেপরিবারকে দু ' সন্তানে সীমিত রাখার জন্য ( স্থায়ী পদ্ধতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ) ।বড়ি , কনডম , ইনজেকশন , আইইউডি , ইমপ্ল্যান্ট
যাদের একাধিক
No comments:
Post a Comment