১. জাপানি ভাষায় ‘জাপান’ শব্দের অর্থ ‘নিপ্পন’, যার অর্থ ‘উদীয়মান সূর্যের ভূমি’। অর্থাৎ জাপান হল সেই দেশ, যেই দেশের জনগণ ভোরের সূর্য প্রথম দেখে থাকে।
২. জাপানের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন তাদের শিক্ষকদের সাথে ১৫ মিনিট তাদের স্কুল পরিষ্কার করে। যা তাদের একটি পরিচ্ছন্ন সমাজ পরিচ্ছন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। কোন কাজকেই ছোট করে না দেখার অভ্যাস এখান থেকেই গড়ে ওঠে জাপানী শিশুদের। শিশুদের স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি আদব-কায়দা শেখানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয়ে থাকে। গুরুজনদের সম্মান করা, মানুষের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেওয়া, সবাই মিলে কাজ করা ইত্যাদি শিক্ষা একদম ছেলেবেলায় জাপানিদের মনে গেঁথে দেওয়া হয়।
৩. জাপানে মোট প্রকাশিত বইয়ের ২০% হচ্ছে কমিক্স বই।
৪. জাপান 3,000 এরও বেশি ম্যাকডোনাল্ডের রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কোনও দেশে সবচেয়ে বেশি।
৫. জর্জ লুকাসের বিখ্যাত চলচ্চিত্র স্টার ওয়ারের মূল ভিত্তি ছিল, জাপানি পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া দ্বারা পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘দ্য লুকড ফোর্ট্টা’।
৬. জাপানে স্বাক্ষরতার হার শতকরা ১০০ শতাংশ। তাদের পত্রিকায় আমাদের দেশের মত দূর্ঘটনা, রাজনীতি, সিনেমার সংবাদ, দেশ বিরোধী, অসামাজিক সংবাদ ইত্যাদি ছাপানো হয় না। সেখানে শুধু প্রয়োজনীয় ও আধুনিক জগৎ সম্পর্কে সংবাদ ছাপা হয়।
৭. জাপানে আবর্জনা ক্লিনারদের হেলথ ইঞ্জিনিয়ার বলে, যারা মাসিক প্রায় ৫০০০-৮০০০ ডলার বেতন পায়।
৮. জাপানে মোট প্রকাশিত বইয়ের ২০% হচ্ছে কমিক্স বই। দুই বিলিয়ন জাপানী কমিক বই বা গ্রাফিক উপন্যাসগুলি প্রতি বছর জাপানে বিক্রি হয়।
৯. চেরি ফুল (শাকুরা) জাপানের জাতীয় ফুল।
১০. জাপানীরা রাস্তায় ময়লা ফেলে না, তাদের ধূমপায়ীরা ব্যাগে করে ছাইদানি নিয়ে ঘুরে, জাপানের রাস্তায় যে সিগারেটের ছাই পর্যন্ত ফেলা নিষিদ্ধ!
১১. জাপানের কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই এবং প্রতি বছর শত শত ভূমিকম্প হয় তবু তারা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
১২. জাপান হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে পারমানবিক বোমা নামক অমানবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। হিরোশিমায় বোম মারার মাত্র ১০ বছরে হিরোশিমা তার আগের জায়গায় ফিরে আসে। [কিন্তু জাপানের সেই হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে এখনও ফসল আগের মত ফলে না। এখনও বিকলাঙ্গ বাচ্চা জন্ম হয়!]
১৩. জাপানে প্রতিবছর প্রায় ১৫০০ ভূমিকম্প হয়? অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৪টি! তাই তারা অধিকতর ভূমিকম্পের ঝুঁকিসম্পন্ন এলাকায় কাগজের ঘর নির্মাণ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে জাপানে এই বিষয়টি নিয়ে মানুষের তেমন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! মানুষ অফিসে কাজ করছে, ছাত্ররা পরীক্ষা দিচ্ছে, রেঁস্তোরায় রান্নাবান্না হচ্ছে, এর মাঝেই ভূমিকম্প হচ্ছে- মানুষজন নির্বিকার। কারণ ব্যাপারটি নিত্যদিনের জীবনের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে এটি তাদের জন্য এখন গা সওয়া একটি ব্যাপার!
১৪. জাপানে রেস্টুরেন্ট ও ট্রেনে মোবাইল ফোন ইউজ করা নিষেধ।
১৫. বিশ্বের একটি ধনী দেশ হয়ে ও তাদের কোন কাজের মানুষ রাখেনা। সকল কাজের দায়িত্ব মা, বাবাকে করতে হয়। বিশ্বজুড়ে অসম্ভব পরিশ্রমী একটি জাতি হিসেবে জাপানিদের দারুণ সুনাম রয়েছে। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরের পরও প্রবীণ জাপানিরা ঘরে বসে থাকতে পছন্দ করে না। ঘরের বিভিন্ন কাজে, বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে নিযুক্ত থেকে সময় কেটে যায় তাদের। তবে এই পরিশ্রমের সুফলটাওএইদেখার মত। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মানুষের তালিকায় জাপানের অবস্থান তৃতীয়। গড়ে প্রায় ৮৩ বছর বাঁচে জাপানিরা.
ভারতের প্রথম উচ্চ গতি সম্পন্ন ট্রেন : বুলেট ট্রেন (Bullet Train)
১৬. জাপানিদের পুরো জীবনটাই কাটে কাজের প্রতি বিপুল উদ্দীপনায়, পরিবার, সমাজ ও দেশের কল্যাণে। জাপানে শিক্ষাজীবনের প্রথম ৬ বছর শেখানো হয় নৈতিকতা ও কিভাবে মানুষের সাথে চলতে হবে।
১৭. জানেন কি, জাপানের রাস্তায় কোন ডাস্টবিন থাকে না! এমনকি দেশটির কোথাও অন্যান্য দেশের মত বর্জ্যের ভাঁগাড় পর্যন্ত দেখতে পাবেন না, কেন জানেন? জাপানিরা ওইসব সবরকম বর্জ্য রিসাইকেল করে ফেলে! যেগুলো রিসাইকেল করা সম্ভব না সেগুলো খুব নিপূণভাবে একটি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়।
১৮. জাপানিদের আত্মসম্মানবোধ প্রচুর! সম্মানের খাতিরে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার ভুরিভুরি নজির রয়েছে দেশটিতে। মাত্র ২ সেকন্ডের জন্য একটি ট্রেন তারাতারি ছেড়ে দেওয়ার জন্য, জাপানের রেলের কর্মকর্তারা যাত্রীদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে, জাপানের বেশ কয়জন প্রধানমন্ত্রী অল্প কয়টি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এমনকি, টাইটানিক জাহাজডুবি থেকে যে কয়জন জাপানি বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছিলেন, দেশে ফিরে তাদের প্রবল জনরোষের সম্মুখীন হতে হয়। “সহযাত্রীদের বাঁচাতে যদি নাই পারলে, তবে তাদের সাথেই প্রাণ কেন দিলে না!” এই ছিলো জনতার আক্ষেপ!
সরকারি চাকরী পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন ও উত্তর || দ্বিতীয় পর্ব || ৫০ টি প্রশ্ন
১৯. “কারোশী” যার অর্থ “অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু!’’ ব্যাপারটি শুনতে আজব মনে হলেও জাপানের প্রেক্ষাপটে এটি খুব অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। জাপানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০,০০০ জন মানুষ মারা যায় শুধুমাত্র অতিরিক্ত কাজের চাপে্র জন্য, ডায়াগনোসিসে তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়- “কারোশী”!
২০. জাপানে শিক্ষাজীবনের প্রথম ৩ বছর কোন পরীক্ষা হয়না। কারন তারা মনে করে লেখাপড়া চরিত্র গঠনের জন্য, পরীক্ষা নেয়ার জন্য না।
২১. জাপান পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কাজে এক মিনিট দেরি করে আসাকেও বিরাট অপরাধ হিসেবে দেখা হয়! সবকিছু অসম্ভব যিন্ত্রের মত নিখুঁতভাবে সময় মেনে চলে, এতটাই নিখুঁত যে পাবলিক ট্রেনগুলোর গড়ে ১৮ সেকেন্ডের বেশি দেরি করার কোন নজির নেই। জাপানের ট্রেন দেরি করে আসার গড় সময় বছরে ৭ সেকেন্ড! তারা প্রতিটা সেকেন্ডের হিসেব করে চলে।
মাউন্ট ফুজির পাদদেশ দিয়ে ছুটে চলেছে জাপানি বুলেট ট্রেন
২২. জাপানিজরা খাবার অপচয় করে না, রেস্টুরেন্টে গেলে দেখবেন। মানুষ যার যতটুকু দরকার এর বেশি নেয়না।
২৩. জাপানে স্টুডেন্টদের খাওয়ার জন্য আধ ঘন্টা বিরতি দেয়া হয় সঠিক হজমের জন্য। কারণ তারা স্টুডেন্টদের জাতির ভবিষ্যত মনে করে।
উষ্ণ সাহারাতে তুষারপাত এক বিরল ঘটনার সাক্ষী
২৪. নির্ধারিত সময়ের পরও কাজ করার জন্য “ওভারটাইম” নামে একটি শব্দ প্রচলিত দুনিয়াজুড়ে, শুধুমাত্র জাপানে এই শব্দটির কোন অর্থ নেই। জাপানিরা স্বভাবগতভাবেই অফিসের সময় শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে কাজ নিয়ে। ঊর্ধতন কর্মকর্তার আগে অফিস ত্যাগ করার কথা কল্পনাতেও ভাবতে পারে না তারা, যত জরুরী তাড়াই থাকুক না কেন ঘরে ফেরার।
জাপানের একটি ব্যস্ত সময়ের চিত্র দেখুন।
২৫. অনেক সময় সমস্যা মোকাবিলায় বা দুশ্চিন্তায় আরামের জন্য একক বিছানায় থাকার প্রবণতা চলে আসে। জাপান এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় ক্যাপসুল হোটেল তৈরি করে থাকে, যেখানে শুধু একটি বিছানার সমপরিমাণ স্থান রয়েছে। তবে এই ঘরে ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে। এই ক্যাপসুল হোটেল শুধু ছেলেদের জন্য তৈরি করা হয়।
২৬. জাপানে আবিষ্কৃত ‘Haiku’ কবিতাটি কেবল তিনটি লাইনের মধ্যে রয়েছে এবং এটি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ কাব্যিক রূপ।
২৭. জাপান অনেক উন্নত দেশ। হয়তো ভাবতে পারেন তাদের জমি অনেক উর্বর। যেখানে প্রচুর ফসল ফলে। কিন্তু তা নয়। জাপানে শতকরা ৭০ ভাগ ভূমি হচ্ছে পাহাড়ি। এ ছাড়াও দেশটিতে ২০০-এর মতো আগ্নেয়গিরি রয়েছে!
২৮. সন্তান দত্তক বা পালক সন্তান গ্রহণতো পুরো বিশ্বেই রয়েছে। জাপানে মোট দত্তক গ্রহণের প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগের বয়স ২০-৩০ বছর! অর্থাৎ তারা বয়স্কদের দত্তক গ্রহণ করে! ব্যবসায়িক পরিবার কিন্তু ছেলে নেই, তখন তারা দত্তক নেয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে, যদি নিজের ছেলে বাবা-মা রাখতে অক্ষম হয় তবে অন্য একজনের ছেলে নিয়ে আসে।
২৯. টোকিওর শিনজুকু স্টেশনটি প্রধান ট্রেন স্টেশন, পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ততম, এই স্টেশনের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন ২ লাখেরও বেশি লোক যাতায়াত করে।
ভারতের এই গ্রামের ঘর বাড়িতে নেই কোনো ‘দরজা’ : কেন জেনে নিন
৩০. জাপানের ৯০ ভাগ মোবাইল ফোন জলনীরোধক। কারন জাপানের যুবক-যুবতিরা স্নান করতে করতেও মোবাইল ব্যবহার করতে পছন্দ করে!
৩১. জাপানে শ্রম আইন বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভাল। এজন্য কোন কোম্পানি চাইলেই তার কর্মী বিদায় করতে পারে না। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকা গুণতে হবে! তাই বলে কোম্পানির মালিক পক্ষরাও কিন্তু বোকা নন। তারা যে কর্মীকে ছাঁটাই করতে চান তাকে বিরক্তিকর কাজ দিয়ে থাকেন। হতে পারে সারাদিন টিভি পর্দার সামনে বসিয়ে রাখা। এসবের জন্য আবার আলাদা শাস্তি কক্ষ রয়েছে।
৩২. জাপানের বাইরে সবচেয়ে বড় জাপানী সম্প্রদায় ব্রাজিলে রয়েছে
৩৩. আমাদের দেশে সাধারণত দাঁত সঠিক ও সুন্দর গঠনের হতে হয়। কিন্তু জাপানে গত কয়েক বছর আগে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে যুবক-যুবতীরা তাদের দাঁতের গঠন সৌন্দর্য না বাড়িয়ে ত্রুটিপূর্ণ আকার দিয়ে সৌন্দর্য আরো কমিয়ে ফেলত।
৩৪. জাপানে প্রতি ২ লক্ষ জনে একজন খুন হয়।
No comments:
Post a Comment