আমরা অনেকেই ভ্রমন করতে ভালোবাসি। আর ভ্রমনে যদি একটি অ্যাডভেঞ্চার থাকে তাহলেতো আরও উত্তম ব্যপার হয় তাই না? অ্যাডভেঞ্চারের জন্য অনেকেই পাহাড়, সমুদ্র কোনো অজানা রহস্যময় জায়গাতে যান কিন্তু জঙ্গল ভ্রমণ এক আলাদা অভিজ্ঞতা থেকে যায়। যেনারা প্রকৃতি পেমী সাথে যদি একটু পশু প্রেম টাও থাকে তাহলে আপনি জঙ্গল সাফারি ছাড়া অন্য কোথাও ভাবতেই পারবেন না। আমাদের দেশ ভারতেই রয়েছে এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রহস্যময় জঙ্গল। যেগুলি আজ আপনাদের সামনে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।
১. নাগরহোল ন্যাশনাল পার্ক:
দক্ষিন ভারতের রাজ্য কর্নাটকের কাবিনি নদীর তীরে অবস্থিত নাগরহোল জাতীয় উদ্যান। এর আর এক নাম রাজিব গান্ধী ন্যাশানাল পার্ক। ১৯৫৫ সালে এটি প্রথম অভয়ারান্যের স্বীকৃতি পায়। এর পর ১৯৮৩ সালে এটি জাতীয় উদ্যানে রূপান্তরিত হয়। গ্রীষ্মে, জলের অভাব দেখা দিলে নাগরহোল জাতীয় উদ্যানের সমস্ত বন্য প্রাণী জলের খোঁজে কাবিনী নদীর তীরের দিকে যাত্রা করে লাইন ধরে। এখানে গেলে আপনি বাঘ থেকে শুরু করে হাতি হরিণ এছাড়াও আরোও অনেক ধরনের পশু-পাখি। অক্টোবর থেকে মে মাসের মধ্যে গেলে সবচেয়ে ভালো ঘুরতে পারবেন। এখানে সাফারি করানো হয় সকালে ও বিকেলে। বিস্তারিত দেখুন নাগরহোল জাতীয় উদ্যানের ওয়েবসাইট থেকে।
২. বান্ধবগড় ন্যাশনাল পার্ক:
মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত এই জাতীয় উদ্যানটি টে বাঘ দর্শনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হিসাবে খ্যাতি রয়েছে। জঙ্গলের ধরনটাও কিছুটা রণথম্বর ধাঁচের, খোলামেলা। এখানে জাওয়ার উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে এখানে গেলে সবচেয়ে ভালো ঘুরতে পারবেন। এটি স্থাপনা হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। আয়তন প্রায় ১৫৩৬ বর্গ কিমি। বিস্তারিত জানতে হলে দেখুন এখান থেকে।
৩. জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক:
জিম করবেট ন্যাশানাল পার্কের মানচিত্র (ছবি সূত্র)
দেশের সবচেয়ে পুরানো জাতীয় উদ্যান নামে পরিচিত জিম করবেট। যেটি ১৯৩৬ সালে স্থাপিত হয়। উত্তরাখন্ডের এই ন্যাশনাল পার্কটি বাঘ, লেওপার্ড, হরিণ, হাতি ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত। এখানে যাওয়ার উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে জুনের মধ্যে। (ছবু সূত্র)
৪. গির অভয়ারণ্য:
গুজরাতের গির অভয়ারণ্য সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত সিংহের জন্য। স্থাপিত ১৯৬৫ সালে। মোট আয়তন প্রায় ১৪১২ বর্গ কিমি। এখানেই বিখ্যাত ‘এশিয়াটিক সিংহ’ পাওয়া যায়, যেটি আর অন্য কোথাও দেখতে পাবেন না। তাই সময় করে ঘুরে আসতেই পারেন। এখানে যাওয়ার উপযুক্ত সময় ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। বিস্তারিত জেনে নিন এখান থেক।
৫. রনথম্বোর ন্যাশনাল পার্ক:
রাজস্থানে অবস্থিত এই বিখ্যাত জাতীয় উদ্যানটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৮০ সালে ।যার আয়তন প্রায় ২৮২ বর্গ কিমি। দুনিয়ার সব চেয়ে বিখ্যাত বাঘ-বন এটি। শুখা পর্ণ মোচী অরণ্যে স্বভাবতই আড়াল কম। তার ওপর গত ৩-৪ বছরে এখানে বাঘের সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বলা যেতেই পারে এখানে বাঘের দেখা নিশ্চই পাবেন আপনি। এছাড়াও লেওপার্ড, কুমির ইত্যাদি ও দেখার সৌভাগ্য হয়ে যাবে আপনার। এখানে গেলে অক্টোবর- মার্চ এর মধ্যে গেলে অতি উত্তম।
৬. পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান:
পেরিয়ার জাতীয় উদ্যানটি ‘পেরিয়ার ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র’ নামেও পরিচিত। এটি অবস্থিত পশ্চিম ঘাট পর্বত মালার সংযোগ স্থলে ভারতের কেরালা রাজ্যে। এখানে গেলে আপনি সিংহ, লেওপার্ড, হাতি, সম্বর হরিণ ইত্যাদি। জাতীয় উদ্যানটি গঠিত হয়েছিল ১৯৮২ সালে। আয়তনে প্রায় ৯২৫ বর্গ কিমি। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়ে যেতে পারেন এখানে।
৭. কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক:
আসামের কাজিরাঙা এক শিং গন্ডার সংরক্ষনাগারের জন্য বিখ্যাত। ব্রহ্মপুত্র নদের পলি গঠিত সমভূমি অঞ্চলে গেলে জলাভূমি, ঘন অরন্য সহকারে বাঘ, এক শিং গন্ডারন, হাতি, এবং শিতকালে গেলে দেকজবে পরিযায়ী পক্ষিদের। বাংলা থেকে বহু মানুষ প্রতিবছর কাজিরাঙায় গিয়ে জঙ্গল সাফারি করেন।
৮. তাডোবা আন্ধেরী ব্যাঘ্র –অভয়ারণ্য:
আপনারা জানেন হয়ত রাজস্থানের রন্থম্ভোর এবং উত্তরাখন্ডের করবেট হয়ত বাঘ দেখার জন্য বেশি সুযোগবহুল, কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সেরা ব্যাঘ্র-অভয়ারণ্য হিসাবে তাডোবা আন্ধেরী ব্যাঘ্র-অভয়ারণ্য নিঃশব্দে খ্যাতি অর্জন করে ফেলেছে। জিপ সাফারিতে কোনো রকম সময় নষ্ট না করেই এমনিতেই বাঘ, লেপার্ড, স্লথ ভল্লুক এবং আরও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখতে পাবেন তাডোবাতে। এটি সারা বছরই খোলা থাকে, যে সুবিধাটি অন্যান্য জাতীয় উদ্যানগুলিতে আপনি সাধারণত আপনি পাবেন না।
৯. মুদুমালাই ন্যাশনাল পার্ক:
দক্ষিণ ভারতের নীল গিরিতে অবস্থিত বন্দিপুর তথা মুদুমালাই ন্যাশনাল পার্ক। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাওয়া রাস্তার দুপাশে বন্যপ্রাণ ঘুরে বেড়াচ্ছে, এ এক অন্যতম অভিজ্ঞতা। এটি গঠিত হয়েছে ১৯৭৪ সালে। আয়তনে প্রায় ৮৭৪ বর্গ কিমি। যাওয়ার সময় সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
১০. বক্সা ব্যাঘ্র-অভয়ারন্য:
আপনি যদি সম্পূর্ণরূপে ভিড় মুক্ত এলাকার খোজে থাকেন এবং নতুন ভূমি রূপের সন্ধানে বেরোতে চান, তাহলে আপনি পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্সের দিকে যেতে পারেন। পূর্ব হিমালয়ের প্লাবন ভূমি এবং পর্বতের পাদদেশে ভূটানে যাওয়ায় দোয়ার বা ডুয়ার্স তথা পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বৃষ্টি বহুল স্থান বক্সা হল বিচিত্র এবং একেবারে অন্যরকম প্রাণী কুলের বাস ভূমি। যেমন, বাঘ, চিতা, মেঘলা চিতা, চিতা বিড়াল, মেছো বাঘ, মালায়ান রাম কোটা এবং আরও অনেক।
ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের জঙ্গল সাফারি করিয়ে মজা দিতে পারলাম। মজা পেয়ে থাকলে লেখাটি সকলের সাথে শেয়ার করতে ভুলে যাবেন না! এবং একি ভাবে আমাদের সাথে সব সময় যুক্ত থাকুন।
No comments:
Post a Comment