সমুদ্র বক্ষের বিস্তৃতি তত্ত্ব:
আমরা জানি যে, হ্যারি হ্যামন্ড হ্যাস ১৯৬০ সালে “সমুদ্র বক্ষের বিস্তৃতি“ ধারণা ব্যাক্ত করেন এবং ১৯৬২সালে History of Ocean Basin বইতে এই তত্ত্বটি প্রকাশ করেন।
সমুদ্র তলদেশের বিস্তার : সাধারণত এই পাতসীমান্ত বরাবর দুটি পাত পরস্পরের বিপরীত দিকে সরতে থাকে। সমুদ্র তলদেশে নতুন সমুদ্রপৃষ্ঠ তৈরি হয় প্রতিসারী পাতসীমান্তের উভয় দিকে। এবং পুরাতন সমুদ্র তলদেশীয় পাত মহাদেশের দিকে সরে এসে মহাদেশীয় পাতের তলায় প্রবেশ করে থাকে।
প্রতিসারী পাতসীমান্ত ও পরিচলন স্রোত:
সাধারণত গুরুমন্ডলের অ্যাসথেনোস্ফিয়ারে উষ্ণতার ও ঘনত্বের তারতম্যের জন্য চাপের পার্থক্য হয় ফলে একধরণের আগ্নেয় স্রোত নীচে থেকে উপরে উঠে এসে উপরের স্তরে পাতের নীচে দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এই স্রোত অনুসরণ করেই পাতসীমান্ত বরাবর পাতের সরণ লক্ষ্য করা যায় বিপরীত দিকে।
সমুদ্র তলদেশের বিস্তার :
সমুদ্র তলদেশের বিস্তার সম্বন্ধীয় তত্ব প্রথম দেন বিজ্ঞানী হ্যারি হেস। সাধারণত গভীর সমুদ্রের তলদেশে লম্বালম্বি ভাবে আগ্নেয় শৈলশিরা লক্ষকরা যায়। এই শৈলশিরার মধ্যভাগে লম্বালম্বিভাবে প্রতিসারী পাত সীমান্ত বা ফাটল দেখা যায়। যার মধ্যে দিয়ে গুরুমন্ডলের গলিত তরল ম্যাগমা বেরিয়ে এসে পাতসীমান্তের দুদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন সমুদ্র তলদেশ গঠন করে থাকে। এই নতুন সমুদ্রতলদেশের গঠন অনেকটা প্লাবনভূমি ও স্বাভাবিক বাঁধ গঠনের ন্যায়। সাধারণত বর্ষাকালে নদীর পলি নদীর দুপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এবং নতুন পলিরটানে পুরোনো পলি দুরে সরে যায়। আর নদীর তীর বরাবর বেশি পলি সঞ্চয় হয়ে স্বাভাবিক বাঁধ তৈরি করে। আর এখানে ফাটলের দুপাশে লাভার সঞ্চয় বেশি হয়ে মধ্যমহাসাগরীয় শৈলশিরা তৈরি করে।
নতুন সমুদ্র পৃষ্ঠ তৈরি ও পুরানো সামুদ্রিক পাতের বিনাশ:
সাধারণত সাগরের মাঝে নতুন সমুদ্র তলদেশ তৈরি হলে পুরাতন মহাসাগরীয় পাত মহাদেশীয় পাতের তলায় প্রবেশ করে এবং গুরুমন্ডলের উষ্ণতায় পুরানো পাত গলে গুরুমন্ডলের সান্দ্র পদার্থে মিশে যায়।
১) সমুদ্র তলদেশের বিস্তারের প্রমাণ:
শিলাস্তরের বয়স সমুদ্র তলদেশের বিস্তারের উল্লেখযোগ্য প্রমাণ । সাধারণত মহাসাগরের মাঝ বরাবর শিলাস্তরের বয়স তুলনামূলক ভাবে মহাদেশের প্রান্তীয় অঞ্চলের শিলাস্তরের বয়সের থেকে নবীন হয়ে থাকে। যা সমুদ্র তলদেশের বিস্তারের সপক্ষে প্রমাণ তুলে ধরে।
২) মধ্যমহাসাগরীয় শৈলশিরা:
এই ধরনের শৈলশিরাকে MOR বলা হয়ে থাকে। এই শৈলশিরা প্রতিসারী পাতসীমান্ত বরাবর অবস্থান করে থাকে এবং এই অঞ্চল বরাবর অগ্নুৎগম দেখা যায়। এই শৈলশিরার উপস্থিতি এবং মহাদেশের প্রান্তবরাবর ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল অবস্থান সমুদ্র তলদেশের বিস্তারের সপক্ষে প্রমাণ দেয়।
৩) সামুদ্রিক অবক্ষেপ :
সাধারণত সামুদ্রিক অবক্ষেপের গাড়ত্ব , প্রকৃতি ও বয়স সমুদ্র তলদেশের বিস্তারের সপক্ষে প্রমাণ দেয়। মধ্যমহাসাগরে অবক্ষেপের গাড়ত্ব তুলনামূলক কম এবং কিছু ক্ষেত্রে মহাদেশের কাছাকাছি মহাসাগরীয় অংশে গভীর সমুদ্রের অবক্ষেপ পাওয়া যায়। এছাড়া মহাসাগরের মাঝবরাবর অবক্ষেপের বয়স নবীন হয়ে থাকে।
৪) মহাদেশের সরণ ও ভারসাম্য:
সাধারণত মহাদেশগুলি পরস্পর একটি অপরটির কাছে এবং দূরে সরে যাচ্ছে। বর্তমানে দ আমেরিকা ও আফ্রিকার দুরত্ব বাড়ছে একটু করে। মধ্যমহাসাগর থেকে উভয়দিকে পুরাতন সমুদ্র তলদেশ এগিয়ে আসছে ফলে কোনো মহাদেশ দূরে সরে যাচ্ছে। অন্যদিকে অন্য মহাদেশ কাছে আসছে। তাই কোনো মহাসাগরের আয়তন বাড়ছে এবং অন্য মহাসাগরের আয়তন কমছে।
৫) এছাড়া চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন ও সমুদ্র তলদেশের পূরানো অংশের ভূমিরূপের পরিবর্তন ও লাভা স্রোতের দ্বারা বারংবার আবৃত হয়া , ক্ষয় প্রভৃতির মাধ্যমে সমুদ্র তলদেশের বিস্তারের সপক্ষে যুক্তি দেওয়া যায়।
No comments:
Post a Comment